আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডন জীবন ও একটি চাকরি পাওয়ার বাস্তব গল্প - পর্ব৩

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও কবিতার মানুষ আমি ধিরে ধিরে ওর কাছাকাছি এসে গেলাম । দেখি সেখানে গেটের সামনে আরও ১০-১২ জন দাড়িয়ে । বিরাট লাইন । সালাউদ্দিন আমার সামনে। আমি তার ঠিক পিছেনে।

দাঁড়িয়ে চুপ চাপ কাণ্ড দেখতে লাগলাম । দাড়িয়ে থাকার সময় আমার আলিবাবা চল্লিশ চোরের গল্প মনে পরে গেল । সেই চোরেরা যেমন গোপনে আস্তানায় যেত । মনে মনে ভাবলাম আমাদের সালাউদিন নয়া আলি বাবা । যে গুপ্ত ধনের খোঁজে সালাউদ্দিন আসে তা হল ইংলিশ জব ।

যা হোক বাহিরে একটা ছোট সাইনবোর্ড । তাতে লেখা জব সেন্টার । ভেতরে যাবার ডাক এল । ভাবছিলাম ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা । যাব কিনা না , যেতে হল ।

একজন সুন্দরী ধরনের ইয়রপীয় যুবতী এসে বল্ল, তোমার সিভি দাও। বললাম আমার সিভি রেডি নাই। জানতে চাইল, কার থ্রুতে এসেছ ? আমি একটু বললাম সালাউদ্দিন। সুন্দরী কাথা না বাড়িয়ে বল্ল অল রাইট , হেভ আ সিট প্লিজ । সালাউদ্দিন তখনও জানেনা যে তার আস্তানা আমি আবিষ্কার করে ফেলেছি।

সে ভেতরে বিনা মুল্যে চা পান করছে । আমাকে দেখে তার ভ্রু প্রকম্পিত হল । আগমনং যথশ্য তড়িতং - বাক্য প্রমানিত । সালাউদ্দিন আমার কাছে এসে চোখ কপালে তুলে বলল ,''আহারে আম্নে ইয়ানে আই গেছেন , ঠিকানা কোনাই পাইলেন ? '' আমি উত্তর দেবার আগেই , ভেতর থেকে ডাক এল । সবাইকে সেমিনার হলে নিয়ে যার যার সিভি রাইটিং করতে হবে ।

কিছু ক্ষনের মধ্যেই শুরু হল ক্লাস ও পরিচয় পর্ব । এখানে বলতে হল আমি কার থ্রুতে এসেছি । সালাউদ্দিনের দিকে সবার একটু ঝাঝাল দৃষ্টি গেল । আমি আসায় এক জন ক্যান্ডিডেট বেরে গেল । টিচার এল দুজন ।

নাম ডানকিন টাবরদা, ইন্ডিয়ান বংশদ্ভুত সাদা । অপর জন আলপা প্যাটেল তাদের আলচনা থেকে জানলাম তাদের এই প্রোগ্রাম গত দের মাস যাবত চলছে। তারা যাদের চাকরি নেই,তাদের ট্রেইনিং , সিভি মেইকিং থেকে ইংলিশ ইন্সট্রকশন সব দিয়ে থাকে, এবং কোন টাকাও লাগেনা । যা হোক পুরান কাসুন্দি আর কত ভাল লাগে । সেদিন আমাকে নিয়ে তারা ক্লাস শুরু করল।

প্রথমেই নিজের সম্বন্ধে বলতে হবে। বললাম , প্রথম বারই পাশ । আমাকে আর ২য় বার বলতে হল না । আলপা আমাকে যা বোঝার বুঝে নিল , ডান কিনও তাই । ব্রেক হল, ব্রেকে আবার চা পান , এবং বিনামুল্যে ।

দেখলাম কেও কেও সালাউদ্দিন কে ঝামা ডলা দিতেছে আমার জন্য । এর মধ্যে একজন এসে বলল ,''এই যে ভাই আপনার বাড়ী কুঠি ? ঢাকা নাকি হে । আমি একবার দেখলাম তারে। আবার শুরু করল, কি আমাদের দানবীর সালাদিন নিয়ে আইসেছে নাকি ? আমি চায়ে ফু দিচ্ছিলাম , আর কাপের ফাকে তার দিকে তাকিয়ে । শ্যার আপনাকে কি বুইল্ল গো ? চাকরির কথা কিছু বুল্ল ? আমাদের ত ১ মাস ধরে ম্যারাথন ইশপিকিং চলছে গো ।

বুজতে পাইরেছেন ??? '' আমি বললাম, পরে কথা হবে চলেন ক্লাসে যাই । আমাকে আলপার যা বোঝার ছিল তা বুঝে নিয়েছিল আগেই । ডান কিনেরও একি কথা । যা বলেছিল আমার টিচার জুলি, এরাও সেই একি কথা বল্ল আমার ইংলিশ সেন্স ভাল , ইংলিশ কোর্সে না আস্লেও চলবে। শুধু জব ইনফরমেশন নিলেই চলবে।

সেদিন ক্লাস শেষে আমি আর সালাউদ্দিন বাসায় এলাম । আসার আগে বেবি চিকেন , রোস্টার , হার্ড চিকেন আর গরু কিনে ফ্রিজে মজুদ করলাম । হাল্কা বাজার সদাই। একবার বাজার করেলে মাস যায় । কিছু কিছু রান্না শিখেছি।

হোয়াইট চ্যাপেল প্রিমিয়ার বাজারে গেলে এক্সট্রা খাতির পেতাম । একটা ইলিশ ৫ পাউন্ড । এক ব্যাগ ঝর ঝরা বাসমতী ৬ পাউন্ড। দেশি সব ঈ আছে। লাল মরিচ , গোল মরিচ, আদা ,লবন, চিনি , সব ধরনের বাঙালি রসনা ।

ব্রিক্লেইন থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদ হয়ে বারক্লেস ব্যাংক এর গলি পর্যন্ত এক তরফা বাঙ্গালিদের । যা হোক দেশে থাকতে অনেক সময় পেতাম । এখন ঘরে বাহিরে ব্যাস্ততা জড়িয়ে ধরে । দেশ থেকে আসার পর সবার সাথে এক আধটু যোগা যোগ করতাম । বন্ধু বান্ধব , ভাই বোন ফোন করলেই সবার কেবল আবদার ।

হয় মোবাইল না হয় ল্যাপটপ চাই । কাউকে না বলাতাম না । যা হোক যে তিন দিন ক্লাস থাকত সেই তিন দিন বাদে অন্য দিন গুলো ২ দিন আল্পার সাথে জব সার্চ করতাম । আল্পা আমাকে অন্য ছাত্রদের চাইতে আলাদা চোখে দেখত । সে প্রতিদিন আমাকে একটা করে ক্যান্ডি বার দিত ।

মাঝে মাঝে চিপ্স । সেটা নিয়েও সালাদিন বল্ল '' মারে মা , আম্নের কি কপাল, আরতে লাগে আল্পা আম্নেরে পছন্দ কইচ্চে, বিয়া করি ফালান '' আমাকে আর কয়েক জন কে জব সেন্টার থেকে স্ক্রিনিং টেস্ট এ ডেকে পাঠাল । সালাদিন ও তার অধিকাংশ এই তালিকার বাহিরে ছিল তাই নিয়ে তাদেরৃ আফসস এর শেষ নাই । আমি পিছনে এসে আগে স্ক্রিনিং এ চলে গেলাম । আর ওরা এখনও উচ্চারন ভোকাবুলারি করতেছে।

যা হোক আমার পারফরমেন্স এ সালাদিন আগেই ভবিষ্যৎ বানি দিল । আমার সবার আগে জব হয়ে যাবে । আর জব হলে ওকেও যেন আমার সাথে নেই । আমি বললাম আচ্ছা নেব । প্রথম ইন্টারভিউতে গেলাম , স্ট্র্যাটফোরড সেন্টারে।

সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতেছি আর আবার ফ্রি চা । সাথে আরও দু এক জন । আমার সাথে পরিচয় হল আবির ভাইএর সাথে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র । তার অভিজ্ঞতা আর পারদর্শিতা শুনে টাস্কী খেয়ে গেলাম । দশ বছর রেস্টুরেন্ট এ কাজ করার অভিজ্ঞতা ।

ডাহা মিথ্যা কথা । এদিকে আমার মাথায় ঘুর ঘুর করতেছিল আমার ত কোন অভিজ্ঞতা নাই । আমাকেওত একটা কিছু বলতে হবে , কি বলব আমাকে আল্পা বলে দিয়েছিল কিছু বানিয়ে না বলতে , বা মিথ্যা না বলতে। যা হোক আমাদের সাথে কিছু ইয়রপিয়ান ছিল সেদিন । তারাও ফুটবলের মত ইংলিশ বলে।

আগা মাথা নাই । শেষে আমাদের বাঙ্গালিদের পালা আবার এল । ৫-৬ জনের ভাংগা চুড়া ইংলিশ আর নারভাসনেস তাদের ইংলিশ বক্তৃতার মধ্য বাংলা বলে ফেলা আর আই কাম , ইউ গো জাতীয় কথা শুনে ইন্টার ভিউয়ার আমার পরযন্ত আর শোনার ধরয্য ধরতে পারলেন না । শেষ পর্যন্ত আমার ইন্টার্ভিউ আর হল না । আমাদের সাথে এক বাঙ্গালী আপাও ছিলেন।

তিনি খেপে গিয়ে বল্লেন,'' হালারা করছে কি? বাইঞ্চোত **** ইংলিশ কইতে পারেনা , লন্ডন আইছে। '' মেয়েদের মুখ এমন খারাপ হয় আমার ধারনাও ছিল না । নাম বিজলী আপা। সে মুখ খুললে কানে তালা দিয়া রাখাই ভাল । চলবে ...।

পর্ব ৪ Click This Link আগের পর্ব ২ Click This Link পর্ব ১ Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.