আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডন ব্রীজ



লন্ডন শহরে এসেছি তো মোটামোটি কিছুদিন হয়ে গেল। এর মধ্যে নতুন পুরনো অবাক করা এইরকম বেশ কিছু জিনিষ দেখা হয়ে গেছে। এর মধ্যে খুব অল্প কিছু জিনিষই আছে যেগুলো হটাত ধাক্কা দেয়ার মত চমকে দিয়েছে। পৃথিবীর আরো ম্যালা মানুষজনের মতন আমিও লন্ডন ব্রীজের নাম শুনেছিলাম। আর লন্ডন ব্রীজ বলতে দুইটা জিনিষ জানতাম, এক নম্বরঃ এইটা মাঝখান থেকে পাল্লার মতন খুলে আর দুই নম্বরঃ ভাঙ্গা রেকর্ডের লন্ডন ব্রীজ ইজ ফলিং ডাউন, ফলিং ডাউন ... বৃটিশ মাটিতে পা দিয়ে দেখি দুইটাই ভুয়া, এক নম্বর হল, লন্ডন ব্রীজ বলে আমরা যেটাকে জানি সেটার নাম হল টাওয়ার ব্রীজ আর লন্ডন ব্রীজ হল খুবি সাদামাটা ধরনের রাস্তা টাইপ ব্রীজ।

ছয় সাত মাসে আমার খুব কাছাকাছি থাকা সত্বেও আমার ওইদিকে পা মাড়ানো হয় নাই। একবার কি জানি কাজে আমাকে ওইদিকে যেতে হল। (বাই দা ওয়ে, টাওয়ার ব্রীজ আর লন্ডন ব্রীজ খুব কাছাকাছি, হেঁটে ৬-৭ মিনিট লাগে) কাছে গিয়ে একটা খুব বড়সড় না হলেও একটা ধাক্কা খেলাম। একটা ব্রীজ এত সুন্দর হতে পারে? এত প্রাচীন, এত রাজকীয়, আর এত গাম্ভীর্যপূর্ণ। ঘোরলাগা চোখে পুরোটা দেখলাম, এমাথা ওমাথা হাঁটলাম তাও দেখে আশ মিটে না।

এখনো পার হতে গেলে সেই প্রথম রোমাঞ্চের কিছুটা স্বাদ পাই। লন্ডন ব্রীজ হল এক কালে টেমসের ওপরের একমাত্র ব্রীজ, যেটা এক সময়ে আসলেই ভেঙ্গে পড়েছিলঃ অতঃপর কবিতার জন্ম। আগের ব্রীজটার উপরে বাজার, দোকান, বাড়ীঘর সবই ছিল। ডিকেন্স বা প্রিন্স এন্ড পপার পড়লে কিছুটা ছবি পাবেন। সেবা ক্ল্যাসিকস রক্স!! কদিন আগে ভাগ্নী আসলো অস্ট্রেলিয়া থেকে, তারে ঘাড়ে তুলে সারা লন্ডন ঘুরো।

বেকার মানুষ তো লন্ডন শহরে আর নাই, কি আর করা। তাই এই চান্সে আমারো বিদেশীর চোখে লন্ডন দেখা হয়ে গেল। ওরে নিয়ে গেছিলাম টাওয়ার ব্রীজের টুরে। অষ্ট পাউন্ড খরচ করে যাহা দেখিলাম তাহাতে জান সম্পুর্ণ না ভরিলেও একেবারে আশাভঙ্গ হই নাই। একটা জিনিষ খুবই মজা লেগেছে ভিতরের ট্যুর আর এক্সিবিশনের সব তথ্য থেকে, সেটা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জর্মন বোমারুরা লন্ডন শহরকে তামা তামা করে ফেলেছিল।

লন্ডনের পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে গূরুত্বপূর্ণ কোন স্থাপনাই বাদ পড়ে নাই। কিন্তু এই বিখ্যাত ও বিশাল এই ব্রীজে একটা বোমাও পড়ে নাই। মজার বিষয় হল জার্মান পাইলটরা এই ব্রীজে বোমা ফেলেনি ঠিকই, কিন্তু সেন্ট্রাল লন্ডনের একদম মাঝে অবস্থিত এই ব্রীজটিকে তারা কমন ল্যান্ডমার্ক হিসাবে ব্যাবহার করেছে, আর সেই হিসাব করে লন্ডনের অন্যান্য অঞ্চলে ক্লাষ্টার বোমা বিতরণ করেছেঃ) দুটি বিষয়ঃ ১। বোরখা সুন্দরীর ছবি ব্লগসমাজে প্রকাশের অনুমুতি নাইক্কা, তাই ফটোশপিং ২। গত দুই তিনদিন একটা বই পড়ছিলাম, গোরাদের ভারত ভ্রমণের স্মৃতি আবার সামনে চলে আসল।

সিপাহী বিদ্রোহের পর এক বচ্চরে দেড় লক্ষ আলেমের ফাঁসী, অসংখ্য হাফিযের হত্যা, ছাপাখানার আবিষ্কারের আগের যুগে পর্বতপ্রমাণ কোরান ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ একত্র করে জ্বালানো, মসলিন শিল্পীদের বুড়ো আঙ্গুল কর্তন... আরো অসংখ্য অবদানের কথা। প্রভুদের পদলেহনের হিসাবটা আর মিলাতে পারি না। মন বড় এলোমেলো...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.