বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের সব অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার/মালিকদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের ওপর নজরদারি করার মতামত দেন। এছাড়াও ডেসটিনি প্রতিষ্ঠানটির সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সরকারের তত্ত্বাবধানে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। ডেসটিনির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭০ লাখ লোক জড়িত। তাদের কাছ থেকে নানাভাবে প্রতারণা করে আমানত হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
তারা গাছ না লাগিয়ে গাছের টাকা নিয়েছে। জাপান ও চীন থেকে পাওলিয়ার গাছের শিকড় আমদানি করে সদস্যদের মধ্যে বিক্রয় করে। প্রতিদিন এ প্রজাতির গাছটি এক ইঞ্চি করে বাড়বে। এভাবে ৬ বছরে একটি গাছ প্রায় ১৮৩ থেকে ১৮৫ ফুট লম্বা হয়। গাছটি বিক্রি করে আমানতকারী পাবেন দেড় লাখ টাকা করে।
এ গাছ আগুনে পুড়ে না। ঘুনে ধরে না। আবার ৫ হাজার টাকায় ১২ বছরে আমানতকারী ৩০ হাজার টাকা পাবে। প্রতারণার এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দা সদস্যরা উদ্ঘাটন করেছে। ঊর্ধ্বতন কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত করে তাদের রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গতকাল জমা দিয়েছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ডেসটিনির কার্যক্রম ও করণীয় সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে সুপারিশ ও মতামত পেশ করেছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে জালিয়াতি ও প্রতারণার কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে।
গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড সংস্থাটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭০ লাখ লোক ও তাদের আমানতের ভাগ্য জড়িত। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্যিক ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযোগ্য একাধিক চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ফার্ম, দুদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি প্রভৃতির সমন্বয়ে একটি কমিটি করে ‘ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড’-এর কার্যক্রম, সংগৃহীত আমানত ও স্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত ‘ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড’ ও তার সব অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানপূর্বক নজরদারির মধ্যে রেখে উত্থাপিত সমাস্যার সমাধান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সরকারের তত্ত্বাবধায়নে নেয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেন।
ভবিষ্যতে জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে এমএলএম মার্কেটিং ব্যবসার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রস্তুত করা প্রয়োজন বলে মত দেন।
বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে ভালো কোম্পানির ভালো দ্রব্যাদি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার খরচ, ডিলারের লাভ, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীর প্রাপ্ত লাভের অর্থ সাধারণ জনগণের চেইন মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ধাপের ব্যক্তির মাঝে লাভ আকারে প্রদান করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নিম্নমানের দ্রব্যাদি উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে বর্ধিত মূল্যের অর্থ সাধারণ জনগণের চেইন মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন ধাপের ব্যক্তির মাঝে লাভ আকারে প্রদান করা হয় না কিংবা এমএলএম ব্যবসার নামে আমানত সংগ্রহ করে জনগণকে প্রতারিত করা হয় না। ওইসব দেশের সরকার জনসাধারণের মঙ্গলার্থে এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখে বলে এ ব্যবস্থা সেখানে অজনপ্রিয়।
প্রকৃত অর্থে এমএলএম পদ্ধতির যে মার্কেটিং নিয়ম, ‘ ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড’ তার ব্যাপারে কম আগ্রহী।
বরং উক্ত সংস্থাটি এমএলএম মার্কেটিং পদ্ধতিকে গুরুত্বহীন দেখে দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং আইনকে পাশ কাটিয়ে বৃহৎ আকারে আমানত সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানের কয়েক ব্যক্তির নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করছে।
প্রতারণা : প্রতিষ্ঠানটি জনসাধারণ/সদস্যদের বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রদান করে প্রতারিত করেছে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, তারা জাপান ও চীন থেকে আমদানিকৃত ‘পাওলিনিয়া’ গাছের শিকড় আমদানি করে সদস্যদের মধ্যে বিক্রয় করে। ওই শিকড় সম্পর্কে ক্রেতাকে বলা হয়- প্রতিদিন গাছটি এক ইঞ্চি করে বাড়বে। ৬ বছরে একটি গাছ প্রায় ১৮৩-১৮৫ ফুট লম্বা হবে।
আর এ গাছ বিক্রি করে তিনি পাবেন দেড় লাখ টাকারও বেশি। এ গাছ আগুনে পুড়ে না_ এমনকি ঘুনেও ধরে না।
আমেরিকায় গত কয়েক বছর ধরে চলমান সংকটের কারণে কম মূল্যে বাড়ি, ভিলা, ফ্ল্যাট, জমি প্রভৃতি বিক্রয় হচ্ছে। সেখানে ‘ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড’ বাড়ি, ভিলা, ফ্ল্যাট, জমি ক্রয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে অবৈধ পথে ডলার পাচার ও হুন্ডি ব্যবসাকে উৎসাহিত করে দেশে তারল্য সংকটে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।
সংস্থাটির শুরু থেকে সাধারণ জনমনে এর কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে ও তারা এ সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ উত্থাপন শুরু করেন।
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকালে সংস্থার প্রতারিত সদস্য, সাধারণ জনগণ ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বর্ণনা দেয়া হলো_
যত জালিয়াতি : ডেসটিনি গ্রুপের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আমানত সংগ্রহ করেছে। মুনাফা দেয়ার কথা বলে অনেক সদস্য ১০ হাজার টাকা আমানত রেখেছে ১২ বছর পর ৩০ হাজার টাকা পাবে শর্তে। এভাবে বিভিন্ন রেওয়াতে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ জমা দেয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন মুনাফার ঘোষণা আছে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে। যা ব্যাংকিং কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের আমানত সংগ্রহ করা যায় না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে যার স্মারক নং-বি আরপি ডি/নীতি-৪/৭৬২/২০১১-৪৫৬৮, তারিখ : ০১-১২-২০১১।
শেয়ার বিক্রির মাধ্যমেও তারা সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না থেকেও শেয়ার বিক্রয় অন্যায়। সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধিত হওয়ার কারণে সমবায় অধিদফতরের আইন অনুযায়ী সদস্যদের মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে অর্থ তুলে ব্যবসা করা যায় বলা হলেও প্রকৃত অর্থে তারা অর্থ তুলেছে সদস্যদের মাধ্যমে সমবায় অধিদফতরের আইন দেখিয়ে। কিন্তু সমবায় অধিদফতরের আইন অনুযায়ী উক্ত অর্থ যে ব্যবসায় লগি্নকৃত হবে সেখানকার প্রশাসনিক ও তদারকিতে সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত না করে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো পরিচালনা ও তদারকি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
ডেসটিনি গ্রুপের সব জামানত ও পুঁজির ৪০ লাখ সদস্যদের মাধ্যমে উত্তোলিত।
সেক্ষেত্রে কোম্পানির সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, জমি-জমা, ওই টাকায় স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ওই ৪৩ লাখ সদস্যদের নামে না করে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কয়েক ব্যক্তির নামে ক্রয় করা হয়েছে।
৫ হাজার টাকা করে একটি গাছ ক্রয় করে ১২ বছর পর গাছের পরিবর্তে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি সদস্যদের কাছে বলে। মূলত তারা যতজন ব্যক্তির কাছ থেকে গাছ লাগানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে সেই পরিমাণ গাছ তারা লাগায়নি। পার্বত্য-চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকার থেকে অন্য ব্যক্তির নামে লিজকৃত জমিতে রোপিত কিছু গাছ তারা তাদের বলে প্রচার করে জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলায় গাছ লাগাবার নামে জমিক্রয় করে তারা তাদের ডেসটিনি ডেভেলপার কোম্পানির কাজে লাগাচ্ছে।
গাছ লাগাবার কথা বলে মূলত তারা আমানত সংগ্রহ করেছে। সাধারণভাবে আমানত সংগ্রহের পদ্ধতিগত আইন এড়ানোর জন্য তাদের এই কৌশল।
সাধারণ জনগণকে তারা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে প্রচুর পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে দেশের ব্যাংকগুলোর আমানত সংকট সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি জমি-জমা, বিল্ডিং প্রভৃতি অহেতুক উচ্চমূল্য দিয়ে ক্রয় করে জমির বাজারে জমি বিল্ডিং প্রভৃতির মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত অত্যন্ত নিম্নমানের দ্রব্যাদি সদস্য হওয়ার শর্তে ফেলে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে বিক্রয় করেছে।
অস্বাভাবিকভাবে বর্ধিত ওই মূল্য থেকে আবার কমিশন বের করে অন্য সদস্যকে প্রদান করেছে। এভাবে শুভঙ্করের ফাঁকির মাধ্যমে জনসাধারণকে আয়ের পথে আনছে, বেকার সমাস্যা দূর করেছে বললেও প্রকৃত অর্থে তারা সদস্যদের নিয়মের জালে ফেলে নিম্নমানের দ্রব্য কিনতে বাধ্য করেছে। অন্য দিকে একজনের কাছ থেকে দ্রব্যর বিনিময়ে অর্থ অকারণে বর্ধিতহারে গ্রহণ করে অন্যজনকে দিয়ে বেকার সমাস্যা দূর করার কথা বলে তাদের মুনাফা তুলে নিচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক জন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে তাদের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম অনুসন্ধান তদন্ত করে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে। গতকাল এ রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে ‘ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড’ নাম দিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন, সভাপতি হারুন-আর-রশিদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ গোফরানুল হক, পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ সাইদ-উর রহমান, পরিচালক (ক্রয়) মেসবাহ-উদ্দিন স্বপন, পরিচালক (প্রশাসন) সাকিবুজ্জামান খান। সংস্থাটি প্রথমে সিটি করপোরেশন হতে ট্রেডলাইসেন্স ও রেজসকো থেকে নিবন্ধন নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তী সময় জনসাধারণের আস্থা অর্জনের জন্য এনবিআর থেকে আয়কর প্রত্যায়নপত্র ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) থেকে সদস্যপদ গ্রহণ করে। বর্তমানে সংস্থাটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৩৭, এসব প্রতিষ্ঠান সমাজকল্যাণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।
সুত্র ঃ হ্যালো-টুডে ডটকম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।