এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই... শিলাইদহে এসে রবীন্দ্রনাথ যেমন সাঁইজি লালন কতৃক প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং লালনের পরেই প্রভাবিত হয়েছিলেন গগন হরকরা কর্তৃক। জাতীয় সংগীতের মহান সুরটি তার করা। আমি কোথায় পাবো তারে" গানটির সুরের উপর নতুন কথা বসিয়ে রবি ঠাকুর "আমার সোনার বাংলা" গানটি তৈরী করেন। গগণ অনেকটাই অবহেলিত। তাকে অতটা গুরুত্বের সাথে স্মরণ করা হয় না।
অথচ তিনি এক মহান সুরকার। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আগেই সরলা দেবী (১৮৭২-১৯৪৫) ‘‘ভারতী’’ পত্রিকায় (ভাদ্র-১৩০২) গগনের কয়েকটি গান সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছিলেন। সরলা দেবী উক্ত প্রবন্ধের শেষ অংশে আবেদন করেছিলেন যে, ‘‘প্রেমিক গগনের ভক্ত জীবনীর বিবরণ সংগ্রহ করিয়া কেহ ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশার্থে পাঠাইয়া দিলে আমাদের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ভাজন হইবেন’’। গগণ কুষ্টিয়ার বাউলভক্ত ছিলেন। লালণের প্রচ্ছন্ন সান্যিধ্যে থাকা সত্বেও তার গানের ও সুরের একটি স্বকীয় ও স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জমিদার বাবু তাঁকে ডাকতেন সন্ধ্যে বেলা। জমিদারের বউ তাকে আপ্যায়ন করতেন ঘিয়ে লুচি সন্দেশ ও রসগোল্লা দিয়ে। তারপর অনেক রাত অবধি গান চলত। গগণ দোতারা বাজাতে পারতেন। গগণ ছিলেন মূলত শিলাইদহ পোস্টঅফিসের ডাকপিয়ন।
ডাকহরকরা। এজন্য তাকে গগণ হরকরা নামে ডাকা হতো। কুমারখালীতে ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শিলাইদহের নিকটে আড়পাড়া প্রামের এক কৃষিজীবি কায়স্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এই রবীন্দ্র বন্ধু মহাপুরুষ গগন হরকরা। তার প্রকৃত নাম গগন চন্দ্র দাস। গগনের পিতা ও মাতা সম্পর্কে কোন খোঁজ জানা না গেলেও কিরণ চন্দ্র নামে তার এক পুত্র ছিল বলে জানতে পারা যায়।
গগন হরকরা প্রথমে পেশায় কৃষি কাজ করতেন। দুই যুগ আগেও গগনের ভিটার অস্তিত্ব ও ফলের বাগানের সাদৃশ্য ছিল। লোকমুখে জানতে পারা যায় যে, গগন হরকরা’র একটি বড় ফলের বাগান ছিল। উল্লেখ্য যে, গগনের বাস্তুভিটায় আসামদ্দি নামক একজন কৃষক বাড়ি করে থাকতেন এবং সেই বাড়িটি আজও ‘দামের ভিটা’ নামে পরিচিত (রবীন্দ্র উত্তরসূরিÑ পৃষ্ঠা ৯৪,প্রফেসর ড.আবুল আহ্সান চৌধুরী)। এগিকে গগন সামান্য শিক্ষা দীক্ষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তারই ফলশ্রুতিতেই তৎকালনি শিলাইদহের ডাক ঘরের ডাক হরকরা’র চাকুরী পেয়েছিলেন।
গগন গান লিখে শিলাইদহের পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাষ্টার জিতেন বাবুকে দেখাতেন বলে জানিয়েছেন পাশ্ববর্তী কালোয়া গ্রামের বৃদ্ধ মোহন মোল্লা। মোহন মোল্লা ছোটবেলায় গগনকে দেখেছিলেন। গগণের সাংগীতিক প্রতিভা সম্পর্কে শিলাইদহের শচীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেছেন :
“গগন হরকরা ছিলেন শিলাইদহ পোষ্ট অফিসের পিওন, অতি সামান্য বাংলা লেখাপড়া জানতেন, গাঁয়ে গাঁয়ে চিঠি বিলি করতেন, কিন্তু তাঁর বুকের মধ্যে পোরা ছিল রসের নির্ঝর, কন্ঠে ছিল কোকিলের ঝংকার আর তাঁর গানে ছিল অরূপ-রতনের জন্যে চির-মধুর বিরহ-ব্যাথা। তিনি শিলাইদহে ‘সখীসংবাদের’ গানে এমন করুণ আখর লাগিয়ে গাইতেন যে, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনতেন। রবীন্দ্রনাথও তাঁর গান শুনতেন- বিরলে আদর করে কাছ বসিয়ে।
”
গগণের গানটি নতুন করে কম্পোজিশন করছি আমরা। আমরা ঢাকা মেট্রো। ডেমোতে দুটো ভার্সন রাখা হচ্ছে। একটা অ্যাকোস্টিক ভার্সন আরেকটা একটু রকিং, ভালোমতোই ডিসটর্টশন ইউজ করা হয়েছে। ফাইনালি কোনটা রাখবো পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আজ সন্ধ্যায় গানটির ডেমোতে ভয়েস দেবো আমি আর প্রিন্স। আমাদের জন্য দোয়া করবেন সবাই।
আমি কোথায় পাবো তারে
কথা ও সুর: গগণ হরকরা
আমি কোথায় পাবো তারে
আমার মনের মানুষ যে রে
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে
দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে।
লাগি সেই হৃদয়শশী
সদা প্রাণ হয় উদাসী
পেলে মন হত খুশি
দেখতাম নয়ন ভরে।
আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে
নিভাই অনল কেমন করে
মরি হায় হায় রে
ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে
ওরে দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।
দিব তার তুলনা কি যার প্রেমে জগৎ সুখী
হেরিলে জুড়ায় আঁখি সামান্যে কি দেখিতে পারে
তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে।
মরি হায় হায় রে –
ও সে না জানি কি কুহক জানে
অলক্ষ্যে মন চুরি করে।
কুল মান সব গেল রে তবু না পেলাম তারে
প্রেমের লেশ নাই অন্তরে –
তাইতে মোরে দেয় না দেখা সে রে।
ও তার বসত কোথায় না জেনে তায় গগন ভেবে মরে
মরি হায় হায় রে
ও সে মানুষের উদ্দিশ যদি জানুস কৃপা করে
আমার সুহৃদ হয়ে ব্যথায় ব্যথিত হয়ে
আমায় বলে দে রে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।