কোথা থেকে শুরু করা যায় তাই ভাবছি...
জন্ম থেকেই শুরু করি তবে। তুমি এখনো জানো না, লেখালেখি আমার অসম্ভব রকমের প্রিয় একটা কাজ। আমি যখন একটা কিছু লিখে শেষ করি, অদ্ভুত এক আনন্দে মনটা ভরে ওঠে। পৃথিবীতে কোন অস্তিত্ব ছিল না এমন কিছু সৃষ্টি করার সে আনন্দ। আমার এ আনন্দের কথা কাউকে বুঝাতে হলে বলতাম, প্রথম সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা-মা যে আনন্দ পান, একটা কিছু লিখে আমার সেই আনন্দটাই হয়।
কিন্তু তোমার জন্মের পর বুঝতে পারি আমার সে জানাটা ভুল ছিল। ভুল অন্ততঃ আমার ক্ষেত্রে। তোমার জন্মের ঠিক পরপর তোমার বা তোমার মায়ের সুস্থতা নিয়ে এতোটাই বিচলিত ছিলাম যে তোমাকে জন্ম দেয়ার আনন্দটা উপভোগ বা অনুধাবন- কোনটাই করা হয়ে ওঠেনি। আজ প্রায় এক বছর পরেও তাই মনে হচ্ছে তোমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসায় আমার যে আনন্দ, তার চে’ ঢের বেশি আনন্দ আমার যেকোনো বিষয়ে লেখা লিখতে পারলে। এটা জেনে তোমার মন খারাপ হবে হয়তোবা, তবু তোমাকে সত্যি কথাটাই বলছি।
ছেলেরা বাবার কাছে মিথ্যা বলতে জানলেও, বাবারা বোধ হয় সেটা পারে না। আরেকটা ব্যাপার। এটা জানলেও বোধ হয় তোমার আরো মন খারাপ হবে। ব্যাপারটা হল, এতোদিন আমি কিন্তু তোমার প্রতি সেরকম তীব্র কোন টান বা মায়া উপলদ্ধি করিনি, যেমনটা সব বাবারা করে বলে জানি। তোমার থেকে তোমার ফুপি বা তোমার মায়ের প্রতি টান অনেক বেশি বোধ করছিলাম।
অথচ আমার ধারণা ছিল, তোমার জন্মের পর থেকেই আমি বাবা হিসেবে তোমার প্রতি নিবিড় একটা টান ফিল করবো। মনে করতাম সবার মধ্যেই বাবা হবার পর এমন একটা পরিবর্তন আসে। বাবারা কি তবে অন্যদের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে মিথ্যাচার করেন, নাকি আমি সত্যিকারের বাবা হতে পারিনি প্রথমদিকে? তবে ইদানিং তোমার বয়েস যখন এক বছর হতে চলল ( আজ ১লা নভেম্বর, ২০১৩, তোমার জন্ম ৩রা নভেম্বর, ২০১২), তখন আমি উপলদ্ধি করতে পারছি, তুমি আমাকে অনেক টানছো। তোমার মুখের একটুখানি হাসি দেখলে বুকটা ভরে ওঠা শুরু করেছে। তুমি এখন নিজেকে ভালভাবে প্রকাশ করতে পারো, আমার কোলে আসতে চাইলে আমার দিকে হাত বাড়াও, কোলে থেকে ডান-বাম কোন দিকে যেতে চাইলে সেদিকে হাত বাড়াও, চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসো।
তোমার সঙ্গে আকারে ইঙ্গিতে কিছুটা ভাব বিনিময় করা যায়। তাই হয়তোবা এখন তোমার সঙ্গে থাকাটা আমার দ্বিতীয় প্রিয় কাজে পরিণত হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, নিজেদের সন্তানের প্রতি হয়তোবা বাবাদের টানটা একটু দেরীতেই সৃষ্টি হয়। তোমার প্রতি ক্রমশ মায়া বাড়ছে, টান বাড়ছে। বাড়তে দেয়া যাক।
দেখি, এর শেষটা কোথায়।
০১.১১.২০১৩। বিকাল ৪:১৭।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।