ছেলেটা তলে তলে কি যে করছে কিছুই বুজতে পারেন না রহমতুল্লাহ ।
গ্রামে তার একটা ইজ্জত আছে । মানুষজন তাকে সমীহ করে চলে । তাকে ভয় পায় । কিছুদিন আগেও এমন অবস্থা ছিল না ।
তিনি ছিলেন এলাকার বড় মসজিদের ইমাম সাহেবের ছোটভাই । লোকজন তাকে রহমইত্তা চোরা নামে ডাকতো । আরে বাবা ! কালোবাজারি কে না করে ? তাই বলে তাকে এভাবে আড়ালে আড়ালে লোকে অপমান করবে ? যাক ব্যাপার না , এখন ওইসব শুধুই সৃতি । এখন তিনি শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান । এই কয়েকদিনে পরিস্থিতি কি আমুল বদলে গেছে ! যারা তাকে আড়ালে আবডালে চোর বলতো তাদের তিনি নিজের হাতে জবাই করেছেন ।
কেউ তাকে কিছু বলতে পারেনি । কারন তার সাথে এখন সেনাবাহিনী আছে , যারা পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে জান করবান করে দিচ্ছে । তারা তাকে মাওলানা সাহেব বলে ডাকে ।
গ্রামে কিছু জোয়ান ছেলে উৎপাত শুরু করেছে । তিনি পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনীকে নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে একে একে তাদের হত্যা করেছেন ।
কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে তিনি দারুন চিন্তিত । তার ছেলে মবিন । বউ মারা যাবার পর তিনি নিজে ছেলেকে মানুষ করলেন । মেট্রিক পাশ করালেন , তারপর ছেলেকে চালের আড়তে বসতে বললেন ,কিন্তু না ; ছেলে কলেজে পড়বে । আচ্ছে যাক , তিনি ছেলের সেই আবদারও পূরণ করলেন ।
কিন্তু এখন তো ছেলের মতিগতি ঠিক মনে হচ্ছে না । এইতো গত পরশু গ্রামের দক্ষিন পাশের দুই বাড়ির দুই ছেলেকে গিয়ে ধরে কেম্পে নিয়ে এলেন । মবিনকে তিনি এদের সাথে চলাফেরা করতে দেখেছেন । নাহ , বড় বাড় বেড়ে গেছে ছেলেটার । আজকে এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে ।
অই দেখ , এসব চিন্তা করতে করতে আসরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে । তিনি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়তে উঠে চলে গেলেন ।
রাত ১০ টা । মবিন এখনো ঘরে ফেরেনি । ছেলে করছেটা কি? আজ আসুক বাসায় ।
পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলবেন । এমন সময় দরজায় আওয়াজ হল । অইত , কুত্তাটার এতক্ষনে আসার সময় হল । তিনি দরজা খুলে একপাশে দাঁড়ালেন । মবিন ঘরে এসে ঢুকল ।
তিনি কোন কথা না বলে ছেলেকে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মারলেন ।
“ এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি শুওরের বাচ্চা ? আমি জানিনা তুই কি করতেসস? আমি কি দেখিনা তুই কাদের সাথে চলাফেরা করস ? আজ থেকে তুই বাড়ির বাইরে একপাও দিবি তো চাবকে তর পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো হারামজাদা”।
কথাগুলো একনিঃশ্বাসে বলে তিনি হাঁপাতে লাগলেন । তিনি দেখলেন তার ছেলে তখনো ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে । তার চোখে পানি ।
“আব্বা আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি” ।
রহমতুল্লাহর রাগ একনিমেশেই পানি হয়ে গেলো । তিনি বোধহয় ছেলেকে একটু জোরেই মেরে দিলেন । ছেলেকে গিয়ে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরলেন ।
“আব্বা আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি” তিনি আবার ছেলেকে এই কথা বলতে শুনলেন ।
ছেলেও তাকে অনেক জোরে জড়িয়ে ধরেছে ।
“কিন্তু এই দেশ থেকে বেশি ভালবাসি না”।
হঠাৎ তিনি নাভির একটু বাম দিকে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করলেন ।
তার কাছে হঠাৎ দুনিয়াটা অন্ধকার মনে হোল । তিনি ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলেন ।
কিন্তু ছেলে তাকে অনেক জোরে জড়িয়ে ধরেছে । তিনি আবার ওই একই জায়গায় আগের চেয়ে আরও বেশি ব্যথা অনুভব করলেন । তিনি চিৎকার করতে চাইলেন কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না । ধীরে ধীরে তার শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো । চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো ।
মৃত্যু তাহলে এমনি !
মবিন আস্তে করে তার বাবার নিথর দেহ মাটিতে শুইয়ে দিলো । ছোরাটা হাত থেকে ফেলে দিলো । কিছুক্ষন বাবার লাশের দিকে তাকিয়ে থাকল মবিন ।
তারপর ধীরে ধীরে রাতের অন্ধাকেরর মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দিলো । এখনো যে অনেক কাজ বাকি.......................................
-------------------------০--------------------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।