আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মভূমি

আমাদের দেশটা চমৎকার একটা দেশ। যতই দিন যাচ্ছে এই ধারনা আমার ততই দৃঢ় হচ্ছে। কবি সাহিত্যিকেরা হয়তো ফ্লোর পেলেই বলে উঠতে থাকবে--সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যমলা... গোলা ভরা ধান-গোয়াল ভরা গরু, পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়া, পাখির ডাকে জাগা... আহা। সঙ্গত কারনেই কবি-সাহিত্যিককে এখন অতটা ফ্লোর দেওয়া যাচ্ছে না। তার পরও বলি আসলেই একটা অ-সাধারণন দেশ।

ইউরোপের কোন দেশের নাগরিক হলে আপনি হয়তো এ্যাডভেঞ্চারের জন্য যান আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকা। বাংলাবাসীকে কোথাও যেতে হবে না। আপনি হয়তো অফিস শেষে বাসায় ফিরছেন। হঠাৎ বাসে আগুন। পড়িমড়ি করে বাস থেকে নামতে হবে।

সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট। একটু এদিক ওদিক হলেই শেষ। বাস থেকে নামতে পারাটাই একটা এ্যাডভেঞ্চার। ঠিকমতো অফিসে পৌছালেন এবং অফিস থেকে বাসায় ফিরলেন মানে আপনি একটা সফল দিন পার করলেন। কিংবা আপনি হয়তো তিন দিনের একটা প্ল্যান এবং সেই অনুযায়ী বাজেট নিয়ে কক্সবাজার গেলেন।

হঠাৎ তিন দিনের হরতাল। আপনার তিনদিনের বাজেটে ছয়দিন যাপন। কিংবা এদিকের অফিস-আদালত। এরকম টান টান উত্তেজনা আর কোথায় আছে? যেকোন উন্নত দেশের কমন সিনারিও হলো দৈনন্দিন জীবন যাপনে ওদের কোন উত্তেজনা নেই। বাসা থেকে বের হবে গ্যারেজে গাড়ি রেডি, পাম্পে যাবে তেল রেডি, রাস্তায় নামবে ফাকা রাস্তা...এটা কোন জীবন হলো? একই রকম, একই রকম।

পানসে। আমাদের এখানে জীবনের বাকে বাকে ক্লাইমেক্স। কী হয় কী হয়। আমরা অনেক সময়ই কোন সিনেমার কয়েক দৃশ্য দেখেই শেষ কয়েক দৃশ্য বলে দিতে পারি। একেতো আমরা কোয়ালিটি সিনেমা বলিনা।

তেমনি ওদের একটা দিন শুরু দেখেও যে কেউই দিনের শেষ দৃশ্য গুলো বলে দিতে পারবে। এটাকে কী ভাবে কোয়ালিটি লাইফ বলি? ওদের মন্ত্রী-মিনিস্টার, বুদ্ধিজীবীরা সব রোবটিক, প্রাণহীন। মেপে মেপে কথা, টিপে টিপে পা ফেলা, প্ল্যানড কার্যক্রম। ওসব দেশে আপনি কোথায় পাবেন কালো বিড়ালের মতো আনন্দ, কম খাওয়ার উপদেশ কিংবা কেউ মারা গেলে আল্লার মাল আল্লায় নিয়েছের মতো সমবেদনা? কিংবা এই চন্দ্র বিজয়ের কথাই ধরেন না। গোটা দুই দেশ ছাড়া পৃথিবীর বাঘা বাঘা দেশ এখনও যেখানে চন্দ্র জয়ের কথা ভাবতে পারেনা সেখানে আমাদের মাওলানা সাব রাতারাতি ডাইরেক্ট জয় করে ফেললেন চাঁদ! জয়তু, জয়তু।

শেষ রাতের দিকে বগুড়া থেকে এক বন্ধুর ফোন- তাড়াতাড়ি বারান্দায় যা। ঘুম এমনই একটা জিনিস মা হোক, বউ হোক, বন্ধু হোক কারও ডাক, কারও আহ্বানই ভালো লাগে না। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার এই বন্ধুটিও সেই রকম। ভালোবাসায় কাহিল করে ফেলা টাইপ।

আবার ফোন। কিছু একটা দফা রফা না হওয়া পর্যন্ত ফোন করেই যাবে। ওর হাত থেকে বাচার জন্যই উঠলাম। এবং বারান্দায় গেলাম। কিছুই না দেখেও শুধু পাগলার হাত থেকে বাচাঁর জন্যই এক পর্যায়ে বলতে হলো- এবার দেখা যাচ্ছে।

দাড়ি, চশমা সবই দেখা যাচ্ছে। এবার আমার বন্ধুকে বেশ তৃপ্ত দেখালো। কারন আমি যতই গাই গুই করছিলাম ও ততই আমাকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলো, চোখে ঘুম দেখে তুই বুঝতে পারছিস না, চশমাটা ভালোমতো চোখে দে। পরদিন অফিসে এসে এই চন্দ্রজয়ের কালের সাক্ষী হওয়ার অভিজ্ঞতা লোকজনকে বলতে যেতেই অফিসের এক ম্যাসেঞ্জার জানালো আমিতো মাত্র কালকে রাতে দেখেছি, আর ও জানে তিনদিন ধরে। তিনদিন আগে সৌদি আরব থেকে ওর কোন কাকা ফোন করে বলেছে।

সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই তেও নাকি দেখা যাচ্ছে। এতকিছুর পর আমার অবিশ্বাসের ভিতের দৃঢ়তা কমলে কাকে আর দোষ দেব? এই যে সমগ্র বগুড়াবাসী, এবং দে শের এবং দেশের বাইরেও আরও অনেকেই দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখলো চাঁদে, এই উত্তেজনা পৃথিবীর কোন উন্নত দেশের কে কবে পেয়েছে? কেবলমাত্র বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের সুবাদে আপনিও চন্দ্রবিজয়ী দেশের নাগরিক! কোন দেশে আপনি পাবেন ভাইয়ে ভাইয়ে এত øেহ? আমাদের দেশে একটা খুনের মামলায় র‌্যাব একজনকে গ্রেফতার করে, পুলিশ আরেকজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এমনই তাদের ভাতৃত্ব যে কেউ কাউকে না চিনেই দাবি করে আমিই সেই অমুক, আমিই আসল খুনি। এমন বিরল ভাতৃত্ববোধ আমরা কেবল গল্গ-সিনেমায় পাই বন্ধু বন্ধুকে বাচানোর জন্য, ভাই ভাইকে বাচানোর জন্য, বাবা সন্তানকে বাচানোর জন্য সব দোষ নিজের কাধে তুলে নেয়। আমি নিশ্চত, আপনি কোথাও পাবেন না।

আমি এরকম হাজারটা উদাহরণ দিতে পারি। কিন্তু যে একমত পোষণ করার সে এতক্ষণে আমার সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে ফেলেছে। আর যে এখনও বিশ্বাস আনেনি আমার দৃঢ় বিশ্বাস হাজার উদাহরণেও সে কখনই বিশ্বাস আনবে না। ওর মাথাও জামাত-শিবির আর ডেসটিনির কাতারের। তবে এই একটা ক্ষেত্রেই যে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাকে আমি ভালোবাসি।

এই একটা ক্ষেত্রেই জামাত-শিবির আর ডেসটিনির মত মাথাকেও আমি শ্রদ্ধা করি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।