মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....।
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কোম্পানি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে রোববার দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বিধিমালা তৈরি করে এখন কার্যকর করার চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারেও। সংবাদমাধ্যমে ডেসটিনির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দিশেহারা গ্রাহকরা এখন বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন
এ সংক্রান্ত কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-
দেশের একটি প্রভাবশালী দৈনিক বৃক্ষরোপণের নামে অর্থ সংগ্রহ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল:
ডেসটিনি ২০০০ লিমিডেট যে কয়টি পন্থায় টাকা সংগ্রহ করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,সরকারের অনুমোদন না নিয়ে খাস ও ইজারা দেওয়া জমিতে গাছ লাগিয়ে সেই গাছে বিনিয়োগ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির আওতায় তারা এভাবে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।
গত রোববার দৈনিকটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে ‘ডেসটিনি ট্রি প¬্যান্টেশন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়ে তারা এ কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত বলেও দাবি করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ডেসটিনিতে বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বিপুল অঙ্কের মুনাফা পাওয়া যাবে বলে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করছে। অথচ গাছ লাগানোর কোনো বৈধতা তাদের নেই।
কয়েক বছর ধরে মানুষের কাছ থেকে এই পদ্ধতিতে বিপুল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহের পর বনায়নের অনুমতি চেয়েছে ২০১১ সালে এসে।
অনুমতি না দেওয়া হলেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো) থেকে শুধু কোম্পানি গঠনের নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি ও ১৩ মার্চ তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের কাছে দুটি আলাদা আবেদন করেন ডেসটিনি ট্রি প¬্যান্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন। এতে ‘সবুজ বাংলা’ গড়া এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে দেশব্যাপী বনায়নের সুযোগ ও সহযোগিতা চাওয়া হয়।
সরকারের অব্যবহৃত খাসজমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এবং ব্যক্তিমালিকানার জমিতে বনায়ন প্রকল্পে বিরল ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও আবেদনে উলে¬খ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ‘২০১২ সালের মধ্যে আমরা দেশব্যাপী ছয় কোটি চারা রোপণ করতে চাই। বিগত কয়েক বছরে দেশের কিছু অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক বনায়ন কার্যক্রম সম্পাদন করেছি এবং ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনার সহযোগিতা কাম্য। ’
তবে আইনকানুন যাচাই করে একই বছরের ২৫ মে এ বিষয়ে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার আগে রেজসকো নিবন্ধক আহমেদুর রহিমের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে চায়, বৃক্ষরোপণ বাবদ ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ কোনো অর্থ আদায়ের এখতিয়ার রাখে কি না।
আহমেদুর রহিম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেন, ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ তা পারে না। কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘বৃক্ষরোপণ বাবদ অর্থ আদায়-সংক্রান্ত কোনো উদ্দেশ্য ডেসটিনির সংঘস্মারকে নেই। ’
গাছ রোপণ
দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে ডেসটিনি অর্থ সংগ্রহ করে। একটি প্যাকেজ হলো ১২ বছর মেয়াদি সুপার সিলভার প্যাকেজ। এতে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।
বিনিময়ে ৩০টি এক বছর মেয়াদি গাছ দেওয়ার কথা বলা হয়। এটি শুধু নতুন পরিবেশক হওয়ার ক্ষেত্রে। মেয়াদান্তে পাওয়া যাবে ৫০ হাজার টাকা মুনাফাসহ ৬০ হাজার টাকা।
আরেকটি প্যাকেজের নাম পাওলোনিয়া রুট প্যাকেজ। এটিই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মূলত দেশব্যাপী।
সাত হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে আট বছর মেয়াদি এই প্যাকেজের আওতায় রয়েছে ১৫টি গাছের চারা। প্রতিটি গাছ ছয় থেকে আট বছর পর বিক্রির উপযোগী হবে বলে প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়। বলা হচ্ছে, এই পাওলোনিয়া প্যাকেজ থেকে সীমাহীন, অর্থাৎ মেয়াদান্তে, নগদ, স্থায়ী এবং স্বত্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে। একেকটি গাছের দাম ১০ হাজার টাকা ধরে মেয়াদান্তে মোট বিক্রিমূল্যের ৮০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে বলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডেসটিনি এভাবে বিপুল পরিমাণ আয়ের কথা বলছে।
যেমন, একটি প্যাকেজে ১৫টি গাছে সাত হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রিমূল্য এবং মেয়াদান্তে আয় দাঁড়াবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনটি প্যাকেজে ৪৫টি গাছে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা, সাতটি প্যাকেজে ১০৫টি গাছে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগে আট লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১৫টি প্যাকেজে ২২৫ গাছে এক লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগে ১৮ লাখ টাকা, ৬৭টি প্যাকেজে ১০০৫ গাছে পাঁচ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগে ৮০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ১৩৫টি প্যাকেজে ২০২৫ গাছে ১০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করলে এক কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ এক হাজার ৬৮০টি প্যাকেজে ২৫ হাজার ২০০টি গাছে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে আয় হবে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
মেয়াদান্তে আয়ের পাশাপাশি এক হাজার ৬৮০টি প্যাকেজে নগদ আয় ৫৫ লাখ ৯৩ লাখ ৪০০ টাকা, স্থায়ী আয় ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা স্বত্ব আয় (রয়্যালটি) করা সম্ভব বলেও ডেসটিনি হিসাব দিচ্ছে।
ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ বান্দরবান, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, কুয়াকাটাসহ সারা দেশে ৩০টি প্রকল্পের মাধ্যমে সাত কোটি বৃক্ষ রোপণ করবে বলে মানুষকে বলছে। এ জন্য দরকার ৭০ হাজার একর জমি।
কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় এ ধরনের জমি কেনার সুযোগ নেই। অন্যের কাছ থেকে ভাড়া করে বনায়ন করলেও বিক্রির ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। সেই অনুমতিও তাদের দেওয়া হয়নি।
দৈনিক যায়যায়দিন ‘অবৈধ ব্যাংকিং’ শিরোনামে লিখেছে
অবৈধ ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ডেসটিনি জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তার সামান্য কিছু অংশ সদস্যদের ঋণ দিয়ে বাকি তহবিলের সিংহভাগই জমি ক্রয় ও ডেসটিনি গ্র“পভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে ব্যবহার করছে। এছাড়া ওই টাকায় ডেসটিনি গ্র“পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা হচ্ছে।
ব্যাংক বা পুঁজিবাজার থেকে ব্যবসার মূলধন সংগ্রহ না করে সরাসরি জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করায় ব্যাংক ব্যবসা ও মূলধন বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশে ব্যাংকিংখাতে যে তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য ডেসটিনি দায়ী থাকতে পারে বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লে¬খ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- বর্তমান ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সঙ্কট তার সঙ্গে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ ও এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ সুদ ও কমিশনে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহের যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনটি পাবার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনও ডেসটিনির দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে।
দুদকে অনেকগুলো অভিযোগ জমার পর এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য রোববার নথিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের পর সারাদেশে লাখ লাখ গ্রাহকের মধ্যে বিনিয়োগকৃত টাকা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে টাকা ফেরত চাচ্ছেন গ্রাহকরা। ইতিমধ্যেই অনেক স্থানে কার্যালয়ে তালা দিয়ে শাখা কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
গ্রাহকদের আশঙ্কা, লোভনীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে এর আগে বিসিআই, আইটিসিএল, জিজিএন, যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক) এবং সম্প্রতি ইউনিপে টু ইউ যেভাবে লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করেছে এবার তাদেরও সেই একই দুর্গতি হতে যাচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারো সরকার নীরব ভূমিকা পালন করতে পারে এমন আশঙ্কায় গ্রাহকরা ফুঁসে ওঠেছে। তাদের ভাষ্য, সাধারণ মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয় নিয়ে কেউ যাতে প্রতারণার ব্যবসা করতে না পারে তা নজরদারির দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার বরাবরই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের অভিযোগ, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজনকে ডেসটিনিতে বসানো হয় মোটা অঙ্কের ‘সম্মানি’ দিয়ে।
ডেসটিনির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, তাদের স্ত্রী-সন্তান এমনকি কাজের বুয়াও দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো এয়ারলাইন্সে ফ্রি টিকিট পান। তারা দেশের যে কোনো স্থানে যেতে পারেন কোম্পানির টাকায়। তাদের জন্য বিদেশেও চিকিৎসা ফ্রি। যাতায়াত ভাড়াও কোম্পানির। এভাবে লাখ লাখ টাকা বেতন-ভাতা সুবিধা ছাড়াও ব্যাপক আর্থিক সুবিধা ভোগ করেন তারা।
এর বিনিময়ে তারা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে ম্যানেজ করেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
তারা উদাহরণ টেনে বলেন, ডেসটিনিসহ এমএলএম কোম্পানি নিয়ে গত ৬ ফেব্র“য়ারি জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের কঠোর সমালোচনা করেন। এর আগে ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট বাগমারার সংসদ সদস্য এনামুল হক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের উদ্দেশে ডেসটিনি ২০০০-এর প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেসটিনির প্রতারণামূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ডেসনিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দূরে থাক, তাদের কার্যক্রম তদারকির জন্যও সরকারের কোনো পর্যায় থেকেই কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে পৃষ্ঠপোষক হয়েও মানুষকে আকৃষ্ট করছে ডেসটিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইনের অজুহাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আমানত সংগ্রহ করছে ডেসটিনি। ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে দুই হাজার কোটি টাকা। সমিতির শেয়ারহোল্ডারদের দায়-দায়িত্ব তাদের পরিশোধিত মূলধনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়। তবে কখনো যদি অবসান ঘটাতে হয়, তখন পরিসম্পদে ঘাটতি থাকলে সদস্যরা নিজ নিজ শেয়ার অনুপাতে দায়ী থাকবেন।
প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শেয়ারহোল্ডার এ সম্পর্কে অবগত নন। ডেসটিনি শেয়ার মূলধন ও শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়িয়ে অত্যন্ত সুচতুরভাবে এর দায়দেনার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষকে সম্পৃক্ত করছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তদন্তে পাওয়া তথ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ডেসটিনির সদস্য হলেই ‘ডিস্ট্রিবিউটরস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার’ (ডিআইএন) ও কাস্টমারস আইডেন্টিফিকেশন’ (সিআইডি) দেওয়া হয়। বর্তমানে সিআইডি নাম্বারধারীর সংখ্যা ৬৮ থেকে ৭০ লাখ এবং ডিআইএন নাম্বারধারী ৪০ থেকে ৪৫ লাখ। ডিআইএন নাম্বারধারীরাই ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের সদস্য।
প্রতিবেদনে উল্লে¬খ করা হয়েছে- ৪০টি শেয়ারের একটি লট ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করছে এই ডিআইএনরা। শেয়ার বিক্রি করতে পারলে ৫০০ পয়েন্ট ভ্যালু (পিভি) অর্জন করা যায়। আশ্চর্যজনক যে, পরিবেশক করা হয় ডেসটিনি গ্র“পের মূল প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের। আবার এই পরিবেশক হওয়াই ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্য হওয়ার পূর্বশর্ত। আবার এক লাখ টাকার মেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেও কোনো ব্যক্তি সদস্য হতে পারেন।
পাঁচ বছর আগেও প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা ছিল বলে উল্লে¬খ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বর্তমানে তা ৩ হাজার কোটি টাকা, যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রচারিত লিফলেট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি চলতি আমানত, সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত, সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প, মাসিক মুনাফাভিত্তিক আমানত প্রকল্প, শেয়ার মূলধন (যা সঞ্চয় আমানতেরই নামান্তর মাত্র) ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ আমানত প্রকল্প তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানত প্রকল্পের প্রায় অনুরূপ। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ব্যাংকের মতো চলতি, স্থায়ী, সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ, মাসিক মুনাফা, শেয়ার মূলধন ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করছে।
এর জন্য প্রশিক্ষিত মাঠকর্মী তথা কমিশন এজেন্টদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শহরের আনাচে-কানাচে এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শেয়ার সংগ্রহও আমানতেরই নামান্তর। ২০০৬-০৭ সালে ৭১ লাখ, ২০০৭-০৮ সালে ৭ কোটি ২ লাখ, ২০০৮-০৯ সালে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ, ২০০৯-১০ সালে ২২২ কোটি ১৮ লাখ এবং ২০১০-১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৫২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ৪৯২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ আমানতই দীর্ঘমেয়াদি আমানত। আমানতের বিপরীতে সুদ দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ।
সমবায় আইন অনুযায়ী আয়ের টাকা যেহেতু করমুক্ত, তাই সুদের এত উচ্চহার অস্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আমানত পরিশোধের দায়বদ্ধতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়ে জনগণকে প্রলুব্ধ করে তহবিল বাড়াচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা না থাকায় যে কোনো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের মতো ডেসটিনিরও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করেছে সমবায় অধিদপ্তর। এতেও অনেক ত্র“টি ধরা পড়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরের শাখাওয়ারি সঞ্চয় সংগ্রহ, শেয়ার মূলধন, আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাবই নেই।
ওই বছর অনুমোদনবিহীন ব্যয় হয়েছে ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সঞ্চয় ও শেয়ার মূলধন আহরণে কমিশন বাবদ ব্যয় হওয়া ২০০ কোটি টাকাকে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে, যা হিসাবশাস্ত্রের রীতিনীতির পরিপন্থী। স্থিতিপত্রে প্রাপ্তি ও প্রদানে কোনো মিল নেই এবং প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চিত্র এতে প্রতিফলিত হয় না। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ সঞ্চয় ও শেয়ার মূলধন সংগ্রহ করেছে বলে নিরীক্ষা দলকে জানিয়েছে, তাও সঠিক নয়; বরং প্রকৃত সংগ্রহের পরিমাণ অনেক বেশি।
তদন্ত টিমের তথ্য অনুযায়ী- ২০০৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেসটিনির মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে এ সম্পদ ২০১০ সালের ৩০ জুন বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৭০ কোটি ৬১ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২ টাকা এবং ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এটি আরো বেড়ে হয় তিন হাজার ১৮২ কোটি ৭১ লাখ ২২ হাজার ৮৩৬ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে মোট সম্পদ বেড়েছে তিন হাজার ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯৩ টাকা। সম্পদ বৃদ্ধির এ হার হচ্ছে ১৩ হাজার ১৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ! একইভাবে আমানতের স্থিতি ৫ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা থেকে তিন বছরে বেড়ে হয়েছে ৬৫১ কোটি ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৯ টাকা। তিন বছরে আমানত বেড়েছে ৬৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ হাজার শতাংশ! শুধু তাই নয়, কোম্পানিটির শেয়ার মূলধনও তিন বছরের ব্যবধানে ৫ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩৫৫ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এ বৃদ্ধির হারকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে উলে¬খ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রতিষ্ঠানটি এখন মুনাফা অর্জন করছে মনে হলেও গবেষণা ও উন্নয়নখাতের কমিশন সমন্বয় করলে এর নিট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমবায় সমিতির বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে তারল্য ঘাটতি রয়েছে। এ তারল্য সঙ্কটের কারণে যে কোনো সময় গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত নাও পেতে পারেন। আমানতকারীদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে আস্থাহীনতার মনোভাব।
অন্যদিকে, শেয়ার মূলধন ও সঞ্চয় আমানতের একটি অংশ কমিশন হিসেবে দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত মূলধন কমে যাওয়ায় সদস্যদের শেয়ারে বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রতারিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে- ডেসটিনি এমএলএমের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে মূলত আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। রেজসকো থেকে নিবন্ধন নিয়ে এখতিয়ারের বাইরে কাজ করছে। কিন্তু এ জন্য সংশি¬ষ্টদের সতর্ক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। রেজসকো থেকে নিবন্ধন নিয়ে ডেসটিনি অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসা শুরু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এমনকি এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করে কোনো প্রচারণাও চালানো হয়নি।
জানা গেছে, কাগজে-কলমে ডেসনিটি গ্র“পের সব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে গুটিকয়েক ব্যক্তির নামে। তারা হলেন- ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, ডেসটিনির সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ গোফরানুল হক, পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, পরিচালক (ক্রয়) মেজবাহ উদ্দীন স্বপন এবং পরিচালক (প্রশাসন) সাকিবুজ্জামান খান। এছাড়াও রয়েছেন- সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, আবু জাফর নিজামী, ইরফান আহমেদ, রফিকুল ইসলাম সরকার, মনিরুল ইসলাম, শেখ আতিয়ার রহমান, পাপিয়া শারমিন, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, ফরিদ আক্তার, দিদারুল আলম, ওয়ালিউল হাসনাত, জসিমউদ্দিন রানা, তৌফিক আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, মাহমুদ আহমেদ এবং মাহমুদ হাসান খান। তবে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য এর বাইরে কোম্পানিটির শীর্ষপদে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চপদস্থ সাবেক সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে।
যদিও তাদের নামে কোম্পানির কোনো মালিকানা নেই।
সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। একইসঙ্গে খুব শিগগিরই ডেসটিনির গ্র“পভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে তহবিল স্থানান্তরের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। এ ব্যাপারে সমবায় অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টককে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক সমকাল ‘ডেসটিনি নিয়ে তোলপাড়’ শিরোনামে লিখেছে
ডেসটিনি গ্র“পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসায় সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে তোলপাড় চলছে। ডেসটিনির লাখ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বিগ্ন গ্রাহকদের অনেকেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ডেসটিনি কর্মীদের চাপ দিচ্ছেন।
এদিকে, ডেসটিনি গ্র“পের যাবতীয় আয়ের তথ্য খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল ডেসটিনির আয়কর ফাইল তলব করেছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনির বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান করার চিন্তাভাবনা করছে। তবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসংক্রান্ত প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে ডেসটিনি বলেছে, তারা বিদ্যমান আইন-কানুন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ডেসটিনির অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে দুদক লিখিত কোনো অভিযোগ না পেলেও এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে শিগগিরই কমিশন সভায় আলোচনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মোঃ বদিউজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘দুদক এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আলাদাভাবে কোনো অভিযোগপত্র পায়নি। তবে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করা হবে।
’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন ও ভিজিলেন্স বিভাগ গত মাসে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ওপর একটি বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম চালায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদন গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ডেসটিনির বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। ’
সমকালের চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ডেসটিনি কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় ডেসটিনির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
ডেসটিনির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে তারা এসব সংবাদের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইছেন। কোনো কোনো এলাকায় ডেসটিনি কর্মীদের গা ঢাকা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও ডেসটিনি অফিসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এক ডেসটিনিকর্মীকে মোটরসাইকেলসহ আটকের খবর পাওয়া গেছে।
তদন্তে এনবিআর
ডেসটিনি গ্র“পের আয়-ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তাদের ব্যবসার ধরণ. ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়, কমিশন বাণিজ্য, কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, প্রতি বছর রিটার্ন জমা দিচ্ছে কি না এসব বিষয় গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল ইতিমধ্যে ডেসটিনি গ্র“পের আয়কর ফাইল তলব করেছে। এসব তথ্য খতিয়ে দেখার পর আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি ধরা পড়লে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হবে। ফাঁকি প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে মামলা করবে এনবিআর। সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডেসটিনি গ্র“প যখন যাত্রা শুরু করে তখন প্রতিষ্ঠানের কোনো আয়কর নিবন্ধন ছিল না। সমবায় সমিতির আওতায় করমুক্ত সুবিধা নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে ডেসটিনি গ্র“প বিভিন্ন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও কোনো আয়কর দেয়নি। তাদের দেওয়া কর সুবিধা বেআইনি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে ডেসটিনি গ্র“প মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার পাশাপাশি প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, হাউজিং, প্রাইভেট ক্লিনিক, এগ্রো প্রসেসিং, মিডিয়াসহ ৩৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে আমানতও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব ব্যবসার মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও আয়কর রিটার্নে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আইন মোতাবেক যে কোনো বাণিজ্যিক খাত থেকে অর্জিত আয়েই কর দিতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বেশির ভাগ আয়করের আওতার বাইরে বলে জানা গেছে। এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছেন।
সূত্র জানায়, ডেসটিনির কর ফাঁকির তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েও তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর। ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) তদন্ত শুরু করলে প্রভাবশালীদের চাপের মুখে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সম্প্রতি গণমাধ্যমে তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর আবার তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর।
১১ বছরের ব্যবধানে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ৩৭। ডেসটিনি ২০০০-এর মুনাফা দিয়েই এই প্রতিষ্ঠানগুলো করা হয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা এখন ৭০ লাখ বলে তাদের দাবি। চলতি বছরের মধ্যে এক কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া তাদের লক্ষ্য। ডেসটিনি ২০০০-এর কার্যক্রম শুরুর চার বছর পর ২০০৪ সালে নিবন্ধিত হয় ডেসটিনি শপিং সেন্টার। পাঁচ বছর পর বর্তমান সরকারের শুরুর বছর ২০০৯ সালে নিবন্ধিত হয় আরও পাঁচটি। এগুলো হচ্ছেথ ডেসটিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডেসটিনি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ডেসটিনি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেসটিনি হিটাচি ইলেকট্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ডেসটিনি এনভায়রনমেন্ট সেভিংস।
২০১০ সালে নিবন্ধিত হয় ডেসটিনি বিল্ডার্স লিমিটেড, ডেসটিনি কনজুমার প্রোডাক্টস, ডেসটিনি টি লিমিটেড ও ডেসটিনি সাসকো প্রোপার্টিজ। ২০১১ সালে নিবন্ধিত হয় ডেসটিনি চীনা তিয়ানহং কনস্ট্রাকশন, এয়ার ডেসটিনি লিমিটেড, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমস, ডেসটিনি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস ও ডেসটিনি ট্রি প¬্যানটেশনস লিমিটেড। এ ছাড়া রয়েছে আলিশা ডেসটিনি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেসটিনি ডায়মন্ড বিল্ডার্স, কনফিগার হাউজিং লিমিটেড, ডেসটিনি সিকিউরিটি ফোর্স, ডেসটিনি এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন, বন্দীশাহী কোল্ড স্টোরেজ, ডেসটিনি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কনফিগার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, বৈশাখী টেলিভিশন ও দৈনিক ডেসটিনি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানিতেই পরিচালকরা হলেন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তি।
দৈনিক যুগান্তর ‘দিশেহারা গ্রাহকরা’ শিরোনামে লিখেছে
ডেসটিনির অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, যশোর ও ময়মনসিংহসহ সারাদেশে ডেসটিনির গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তারা ভিড় জমাচ্ছেন ডেসটিনির স্থানীয় অফিসগুলোতে। অবস্থা বেগতিক দেখে রংপুর, ধামরাই এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অফিসে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে ডেসটিনির কর্মকর্তারা।
দৈনিক মানবজমিন ‘গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক’ শিরোনামে লিখেছে
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের গ্রাহকদের মধ্যে চলছে আতঙ্ক। বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাবেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
এদিকে, একের পর এক বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির অনেক শাখা।
গ্রাহকরা ধরনা দিচ্ছেন সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। প্রশ্নবানে জর্জরিত করছেন তারা। ফেরত চাইছেন বিনিয়োগ করা অর্থ। এসব কারণে গ্রাহকদের পাশাপাশি ডেসটিনির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন আতঙ্কে ও অনিশ্চয়তায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেসটিনি গ্র“পের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি অবৈধ ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারের পর এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও ও গাজীপুরে ডেসটিনির বেশ কয়েকটি শাখা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অফিসে আসছেন না। তাদের অনেকেই এখন লাপাত্তা। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পারে, এটি একটি ‘হায় হায় কোম্পানি’।
কোম্পানির সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা গ্রাহকদের জমানো হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যে কোন সময় চম্পট দিতে পারেন। এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল¬ী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয় ও সমবায় অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত টিম।
সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে ডেসটিনির অবৈধ কার্যক্রমের কিছু অংশ জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ডেসটিনির কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তি এরই মধ্যে বিনাশ্রমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
লিংক-
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।