আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি দেখো না আমার বৃষ্টি, তুমি দেখো না আমার ঝড়-(চিঠি)

বলার নেই কিছু। প্রিয় বন্ধু, কেমন আছো? এই যা! তোমাকে ''প্রিয়'' বলে ডেকে ফেললাম! কেন যেন স্মৃতিভ্রংশ উদ্ভ্রান্তের মত এ কথা বার বার ভুলে যাই এখন আর তোমাকে 'প্রিয়' ডাকার অধিকার আমার নেই! কি অদ্ভুত তাই না? এক সময় যাকে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ভালোবাসতাম আজ তাকে 'প্রিয়' ডাকার অধিকার নিয়ে শংকিত! আর 'ভালোবাসি' বলা, সে তো পরাজয়ের খাতায় নতুন অংক কষা! অথচ তুমি তো বেশ ভালো করেই জানো আমি ইচ্ছে করে তোমায় ভালোবাসিনি! তুমি বলেছিলে এখনো ঘৃণাময় আস্ত্রিনের অন্যপাশে সবুজাভ উপঢৌকনে নববধু সাজে কিছু বৃক্ষ! এখনো কিছু পাখি এক সাথে জোড়া বেঁধে সূর্যস্লানে স্লানিত হয় পৃথিবীর মেঘে মেঘে! এখনো অযুত কল্পনার নিযুত স্রোতে পরিশীলিত ভাবনার দল ঘাতপ্রতিঘাতে এক সাথে বেঁচে থাকার রঙিন স্বপ্নে প্রজাপতির ডানা মেলে স্বপ্নিল আকাশের সীমাহীন পরিধিতে। এখনো পৌষের শেষে বসন্তের পয়গাম নিয়ে হলুদাভ টিয়ে লাল টুকটুক ঠোটে কামাগ্নি প্রণয়িনীর মত গভীর প্রশ্বাসে চুম্বন এঁকে দেয় কৃষ্ণচুড়ার রক্তিম আভাতে। আর তাই তো তোমাকে ভালোবেসেছি! অতপর তুমি ছেড়ে চলে গেলে! আমি পিছু ডেকে বলি নি আঁধারের নাভিশ্বাসে আর ভোর হবে না! দুঃসহ যাতনা মৌনতা ভাঙিয়ে আছড়ে পড়বে তোমার পদচিহ্নে! মুখ বুজে হজম করে নিয়েছি সব দুঃখ, অলংঘিত প্রতিশ্রুতির নিশ্চুপে পরাজয় বরণ! সহস্র দুর্বিষহ যন্ত্রনাতেও করি নি এতটুকু উফ শব্দ অথবা কোন গোপনচুক্তিতে প্রতিশোধের অভিলাষে ছুটে যাইনি নিষিদ্ধ সীমা লঙ্ঘন করে প্রিয়হারা কালনাগিনীর বেশে! আর্তচিৎকারে ভুবন কাঁপিয়ে বলিনি ধুমকেতুর মত সব ত্রিমাত্রিক সীমানা ছেড়ে অসীমেও তোমায় খুঁজে চলবো জনম জনম ভর! আমি তো সবই সয়ে নিয়েছিলাম! তোমার ব্যক্তিত্বহীনতা, তোমার হীনমন্যতা,তোমার কাপুরুষের মত যমের দুয়ারে আমায় একলা ফেলে পালিয়ে যাওয়া! আমি সব মেনে নিয়েছিলাম! মেনে নিয়েছিলাম নিজের মাঝের গড়ে ওঠা অপ্রতিরোধ্য সেই ঘৃণার দুর্গকেও যেখানে প্রতি নিয়ত তোমার স্পর্শ মেশানো স্মৃতির হিংস্র প্রেতাত্মারা হানা দিয়ে যেতো বিষাক্ত সাপের মত! বিবেকের সামনে আঙ্গুল তুলে চিবিয়ে চিবিয়ে বলতো ,''ওরে বোকা মেয়ে, তুই এই কাপুরুষের জন্য জীবন বাজি রেখেছিস? হায়েনার তীক্ষ্ণ নখরের ভয় ভুলে গিয়ে কাপুরুষের মান বাঁচাতে একাকী ছুটে চলেছিস এই নিঃশব্দ গহিন বনে? সে তোর কাছে কোন দিন ফিরে আসবে না! সে তার ভোগবাদিতার এতটুকু স্বার্থ বিসর্জন দেবে না!'' তবুও আমি সব জেনে বুঝে ধিক্কারগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কেননা ভালোবাসা সে তো প্রতিদানের অন্য নাম! এতো নয় স্বৈরাচারীর মত প্রিয় মানস-মানসীর তনুতে গড়া সম্রাজ্য! আমি যে নিঃস্বার্থভাবে তোমায় ভালোবেসেছি! মন প্রাণ উজার করে দিয়ে ভালোবেসেছি! তাই একটি বারের জন্যও পিছুটান হয়ে পিছু ডাকি নি! অতপর তুমি আবার ফিরে এলে! একদম স্বেচ্ছায়! হয়তবা কিছু কষ্ট দেয়া তখনো অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল তোমার হাসি ঠাট্টার প্রেম প্রেম খেলায়! তাই এবার তুমি এলে নতুন কোমলতায়! নতুন চেহারায় নতুন স্বপ্নের ডাকবাংলোতে নতুন হাসি ,ছড়া গান আর দুষ্টুমির পসরা বসানো এক ঝাঁক স্বপ্নের রঙিন ডালি নিয়ে মন মর্তলীলায়! আর আমায় দেখালে তোমায় নিয়ে এক সাথে বাঁচার মহেন্দ্রাণী স্বপ্ন! আমিও দেখলাম বিভোর হয়ে! একটা ছোট্ট ফুলের বাগানে থোকা থোকা ফুল আর মাঝখান থেকে বয়ে চলা ভালোবাসার অমিয় ধারা! তোমার কাল্পনিক বাহুর শক্ত বাঁধনে দুটি প্রাণ এক সাথে যুগল বন্দী! তাই নিরবে নিভৃতে তোমার বুকের জলের জোয়ারহীন নদীতে চুমুক দিয়ে জল টেনে নেবার আকাঙ্ক্ষায় হয়েছিলাম ঠিক গলা পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত! অথচ তুমি ভেবেছিলে তোমার ভালোবাসা আমি চিনতেই পারবো না! তুমি কি করে ধরে নাও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে চন্দ্রিমা তার শুকতারাকে ভুলে যাবে? নিষ্ঠুর মহাকালের যাতাকলে চিরচেনা উপমার দল পুরনোর ছন্দের সুর হারাবে?যেখানে আত্মা ছুয়েছিল আত্মাকে, সে কি নশ্বর দেহের মতন মৃত্তিকার কঠিন আঘাতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধূলি কণা হয়ে মিশে যাবে! তাই কি হয়? আমি তো তোমায় চিনে নিয়েছি অলিন্দের স্পন্দিত অতীন্দ্রিয় কোন অনুভূতির খাঁজে যেখানে শুকনো পাতার দল মড়মড় করে বাতাশে গুঞ্জন তুলে বলে তুমি এসেছো! আমি যে ছায়াতেও তোমাকে চিনি! তাই তো তোমার মিথ্যাচারের নষ্ট মুখোশের লাল, নীল আঁকিবুঁকি প্রলোভনের পাকাপোক্ত রহস্যজড়িত তোমার মুখোছবি দেখে তোমার ভালোবাসা নিয়ে হয়েছিলাম দ্বিধান্বিত, হয়েছিলাম সন্দিহান! সেই সন্দেহকেই তুমি কঠিন বাস্তবতার শক্ত চিবুকটি দেখিয়েছো! তুমি আবারো বলেছো তোমায় ভুলে যেতে! আবারো নষ্ট শপথের জ্বলন্ত কয়লায় ভস্মীভূত ভোরের মগ্নতা! আবারো রাত, অসীম রাত! আবারো ছলনার ছলাকলে নিষ্পেষিত নিখাদ ভালোবাসা! সবই তোমার ইচ্ছের অধীন! এই মৌনতা, মেঘ, রোদ, বৃষ্টি , ঝড়! কিন্তু তুমি জানো কি? এবার তোমায় ভালোবেসে আমি অভ্যস্থ! এবার ভালোবাসার সেই অলঙ্ঘনীয় সিড়িটিও আমি পাড় করে এসেছি যে ফিরে যাবার পথ ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে বেঁকে গেছে নিঃশেষিত পরাজয়ের দিকে! বলো কি করে আমি তোমায় ভুলে যাবো? এরপর.........। এরপর কি হয়েছে শুনলে উপন্যাসের পাতায় ঘুমিয়ে পড়া সব থেকে মানবেতর ট্রাজিডিটিও চমকে জেগে উঠবে! এরপর আমার চিরকালের অসীম ধৈর্য কাচের মত ভেঙে হয়েছে টুকরো টুকরো! আর আমি কত খন্ডে খন্ডিত হয়েছি সে নাই বা বললাম! জানো ভালোবাসার উপর বিশ্বাসও মরে গেছে চিরতরে! মরে গেছে জগত সংসার ভুলে প্রেমের লালিমায় কোন স্বপ্ন পুরুষকে রঙ মাখানোর স্বপ্ন! শুধু বেঁচে আছে তোমার ছলাকলার বিভ্রম স্মৃতিগুলো যারা হিংস্র প্রেতাত্মা হয়ে প্রতিনিয়ত ধারালো ছুরি দিয়ে খুবলে খুবলে পুরনো ব্যথাগুলোকে চাষাবাদ করে আমার বুকের জমিনে! আর আমি হই রক্তাক্ত ,ক্ষতবিক্ষত! কখনো কখনো কষ্টের তীব্র আঘাতে নিজেই নিজের মাঝেই গুমরে গুমরে কেঁদে উঠি! আবার কখনো স্মৃতি ভ্রষ্টের মত নিজের মাঝে নিজে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে রই! যেন পৃথিবী থেমে গেছে দুঃসহ কষ্টের নির্দয় সীমানা ধরে! বার বার একটা ভাবনায় স্তম্ভিত হই - তুমি তো ছিলে ধর্মপ্রেমী নীতিবুলি আওড়ানো সব্যসাচী এক মানব যাকে আমি দেবতার মত হৃদয় অলিন্দে পুজো করতাম। ধর্মহীন কাপুরুষদের মত সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অন্তসার শুন্য মানব তুমি নও। তুমি কি করে এতটা নিচে নেমে এলে যে রাত্রির উচ্চশিখরে আরোহিত মাংসাশী পিশাচও তোমাকে দেখে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেবে! বলো বন্ধু কাকে করব বিশ্বাস? শুনেছি তুমি বেশ সুখেই আছো! নববাসরের ফুল সজ্জায় নতুন নতুন রক্তকরবী আর কৃষ্ণচূড়ার রঙ মাখাচ্ছো! অথচ এক সময় তোমার বুকপকেটের লাল গোলাপটিই ছিলাম আমি, কিন্তু এখন তোমার বুকের পাঁজর নাকি অন্য কোন মানসী! বলো কি দিয়ে আমি এই ব্যথা ঢাকবো? কষ্টগুলো যে আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে রাখে! আর আমি বার বার ফুপিয়ে উঠে ভাবি যদি এই নিয়তি মিথ্যে হয়ে যেতো! যদি এই জনমেই তুমি আমার হতে! তবে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? পরিশেষে এতটুকু অনুনয়, তোমার স্মৃতিগুলোকে তুমি ফিরিয়ে নিও! ওদেরকেও নিয়ে যেও তোমার সাথে! আমিও যে চাই তোমার স্মৃতি ছাড়া একটা জোছনা উপচানো রাত! ইতি, তোমার ভালোবাসার মোহে মোহিত এক পরাজিত প্রেয়সী অবন্তিকা!  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.