আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রের চারপাশে পরাজিতদের উদ্যত ফণা

রাষ্ট্রের চারপাশে পরাজিতদের উদ্যত ফণা ফকির ইলিয়াস =============================== বিএনপি এবং সমমনা জোট তাদের ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজনীতির জন্য তা একটি ইতিবাচক সংবাদ। তারা বলেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান পর্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা হরতাল প্রত্যাহার করেছে। বাংলাদেশ এখন আর হরতালের জন্য উপযুক্ত কোন রাষ্ট্র নয়। কেন নয়, তা দেশের রাজনীতিকরা খুব ভালো করেই জানেন।

কারণ একটি নিষ্পেষণের হাত থেকে মুক্তি পেতেই এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এখন স্বজাতি, স্বদেশ আর নিজ সত্তা পাওয়ার পরও হরতাল-খুনোখুনি করতে হবে কেন? রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অভিলাষ পূরণের জন্য? যেভাবেই হোক, ২৯ মার্চের হরতাল প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিএনপি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ একদিন হরতাল করলে কত ক্ষতি হয়, তার হিসাব এদেশের রাজনীতিকরা ভালোই জানেন। রাজনীতিকরা সহিষ্ণুতার কথা বারবার বলেন। কিন্তু খুবই লজ্জার কথা, তারা মোটেই সহিষ্ণুতা দেখতে পারছেন না।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে শহীদ স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে বারবার। টিভিতে আমরা সংঘর্ষের চিত্র দেখেছি। একটি টিভি চ্যানেল সংবাদে বলেছে, বিএনপির দুটি গ্রুপের সঙ্গে নাকি সংঘর্ষ হয়েছে। বিএনপি বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষ তাদের স্মৃতিসৌধেও যেতে দেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়গুলো খোলাসা হওয়া দরকার।

কারণ এদেশে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার অধিকার কোনভাবেই খর্ব করা উচিত নয়। তা মানুষ মেনেও নেবে না। কারও বিরুদ্ধে বিনা কারণে পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দেয়া মানে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনা। মুখে সুশীল বুলি নিয়ে এদেশে স্বৈরশাসক, সামরিক জান্তারা বারবার গণমানুষের বুকের পাঁজর ভেঙেছেন, সে দৃশ্য আমরা ভুলে যাইনি। সামরিক শক্তিরা সব সময়ই অন্য দেশের স্বৈরশাসকদের মদত পায়।

বাংলাদেশের স্বৈরশাসকরাও পেয়েছিলেন। তারা এই দেশে কীভাবে বুলডোজার চালিয়েছিলেন, তা আমাদের মনে আছে। আর আছে বলেই আমরা গণতন্ত্রের বিকাশ ও উত্থান চাই। এই চাওয়ার মধ্যে আন্তরিকতা থাকা খুবই জরুরি; কারণ গণতন্ত্রের লেবাসে যদি স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতাই পোষণ করা হয়, তবে আর সামরিক ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী? বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অর্জনের মধ্যে দুটি সাম্প্রতিক যোগ হচ্ছে মায়ানমারের সঙ্গে মামলা জয় এবং মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন। সরকার প্রায় সাড়ে তিন বছর পার করেছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যদি করা সম্ভবও হয়, তা শেষ হতে আরও ছয় বছর লাগতে পারে। এই যে সুদূরপ্রসারী মন্থর গতি, তা বিশ্বের অন্যান্য সভ্য দেশে কম। আমরা বুঝি আমাদের দারিদ্র্যের যাপিত সীমাবদ্ধতার কথা। কিন্তু সরকার পদ্মা সেতু ইস্যুতে আরও আগেই কঠোর হলে হয়তো সময় কিছু সাশ্রয় হতো। আইএসআইয়ের দেয়া উৎকোচ বিষয়ে সরকার ও বিরোধীদল বিতর্ক চালিয়েই যাচ্ছে।

আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি বলেছেন, এমন কথা তিনি বলেননি। সংবাদটি বানোয়াট, ভিত্তিহীন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি এমন কথা বলেছেন- বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এমন ঘটনা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের সরকারপক্ষ তাদের গোয়েন্দাদের চাপে এমনটি এখনো বলছে কি না, প্রকৃত সত্যইবা কী, তা বের করার দায়িত্ব বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যক্তিদেরই নিতে হবে।

কারণ সরকারপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন বা এখনো দিচ্ছেন, তা মানুষের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা হলফনামার ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তান সরকার যদি এখন যে কোন কারণেই তা অস্বীকার করে, তবে তারা বাংলাদেশকে ট্রান্সক্রিপ্ট দেবে কী? যদি না দেয়, তবে বাংলাদেশ সরকার উৎকোচের ঘটনা কীভাবে প্রমাণ করবে? মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী একটি শক্তি বরাবরই নানা রকম ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। আমাদের জানা আছে, জামায়াত একাত্তরে বাংলাদেশের সরাসরি বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ, চীনাপন্থি সমাজবাদীরা- যারা চীনের মিত্রতা সূত্রে প্রকারান্তরে পাকিস্তানের দরদি ছিলেন, তারাও স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেননি।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৫ পর্যন্ত তারা বেশ নীরব থাকলেও পরে এরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। আজ যারা বিএনপির কান্ডারি বলে পরিচিত, তাদের পরিবার, পূর্বপুরুষ মুসলিম লীগ কিংবা অন্য দলের ঝান্ডায় 'পাকিস্তানই ভালো' এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট দেখা যাবে। আওয়ামী মহাজোটের প্রতিপক্ষ হয়ে যে জোটটি দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রাম করছে, তার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা। ২০০১-২০০৬ সালের মতো আরেকটি সরকার এরা পেলে দেশকে আগের চেয়েও ভয়ঙ্কর অবস্থায় নিবে, তাতে কোনও সন্দেহ নাই। বিষয়গুলো সবাইকে মনে রাখা দরকার।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় আদালত যাত্রা শুরু করেছে। অন্যদিকে এই বিচারকে বানচাল করার জন্য দেশে-বিদেশে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চক্র- যারা মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়। সম্প্রতি নিউইয়র্কে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে নিয়ে তেমনই একটি সমাবেশ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের কিছু দোসর। ওই সমাবেশে উচ্চমূল্যে ভাড়া করে আনা ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেছেন, ওই ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক আইন কিংবা বাংলাদেশে ফৌজদারি আইন দ্বারা বিচার হচ্ছে না।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি দামি হোটেলে এই সমাবেশের আয়োজক ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি। আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান পুরোপুরিই বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নানা উদাহরণ টেনে বক্তব্য রাখেন। ওই সমাবেশে এমনও দাবি করা হয়- ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু করে পাক হানাদাররা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত নাকি 'পূর্ব পাকিস্তানে' অবাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, ধর্ষণ করা হয়েছিল। তারও বিচারের দাবি জানানো হয় সমাবেশে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর যে চেষ্টা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে তালি বাজাচ্ছে ক্ষমতালোভী সেই চক্রটি- যারা দেশকে জঙ্গিবাদের লীলাভূমি বানাতে চায়।

এদের নেপথ্য উদ্দেশ্য এদেশের মানুষের অজানা থাকার কথা নয়। নিউইয়র্ক, ২৮ মার্চ ২০১২ ------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ /ঢাকা / ৩০ মার্চ ২০১২ শুক্রবার প্রকাশিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.