সংবিধানের ৫ম সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে এনেছে। নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ধর্মকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সহজ সরল মানুষকে প্রতারিত করার রাজনীতি। পথভ্রষ্ট সামরিক শাসকরা বাংলাদেশ নামক সুন্দর দেশটির কপালে যে কলঙ্ক তিলক একে দিয়েছিল তা সযত্বে মুছে ছিল সর্বোচ্চ আদালত।
আমরা এখন বিশ্বের 'সামনে চলা' রাষ্ট্রগুলোর কাতারে, 'পেছনে ঠেলা'র গোষ্ঠীগুলোর দলে নই। এই প্রাপ্তি আমাদের উদযাপন করা উচিত।
কোনো সরকারের পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল না তাই করে দেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছে আমাদের মহামান্য আদালত।
কিন্তু আদালতের রায়ের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি দেশে এখনও সেই 'আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান' শ্লোগান দেয়া নরাধমরা সহি সালামতে অবস্থান করছে। আদালতের রায় তাদের যেন তপ্ত তেলের কড়াইতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। গলা ফাটিয়ে তারা এখনও চিতকার করছে ধর্ম গেল রে ধর্ম গেল রে বলে! এই ব্লগেও তাদের অনেকের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। তাদের অনেকে এমন সব মন্তব্য করছে যা সরাসরি আদালত অবমাননার সামিল।
এই স্পর্ধা প্রদর্শনের সুযোগ তাদের দেয়া উচিত কি না সেটা 'সামহোয়ার ইন ব্লগ' কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে।
কথা বলছিলাম রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে। নরাধম রাজাকার ও তার দোসররা ধর্মনিরপেক্ষতাকে 'ধর্মহীনতা' বলে ইতিমধ্যে অপপ্রচার শুরু করছে। তারা জিকির করে বোঝানোর চেষ্টা করছে রাষ্ট্রধর্ম না থাকলে সেই রাষ্ট্রে অন্য সবাই ধর্মীয় আদর্শ মেনে চলতে পারলেও মুসলমানরা পারে না!! তাদের ভাবখানা এমন যে, কেবলমাত্র যেসব দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সেইসব দেশের মুসলমানরাই ধর্ম পালন করে। তারাই কেবলমাত্র বেহেশতের যাবার চাবি হাতে পায়! বিশ্বে ২৭ টি দেশের ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, সোমালিয়া, সৌদি আরব, ইত্যাদি.........এসব দেশ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হিসাবে ঘোষণা করে মহাসুখে আছে নাকি? তারা গণহারে বেহেশতে যাচ্ছে নাকি? অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, জার্মানী, ভারত ইত্যাদি বিশ্বের উন্নত কিংবা উন্নতশীল কিংবা উন্নয়নশীল এবং শিক্ষিত জাতিসমূহ 'রাষ্ট্র সব ধর্মের মানুষের জন্য' এমনটি মেনে নেয়ার কারণে গনহারে দোজখে যাচ্ছে নাকি? তারা দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত নাকি??
রাষ্ট্র একটি ভূখন্ড মাত্র। সে ধর্ম পালন করে না। ধর্ম পালন করে তার উপর আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো। সেই মানুষগুলোকে যে ইসলাম, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা নাস্তিক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাষ্ট্র সাবাইকে আশ্রয় দেবে।
একটি রাষ্ট্রে কোনো একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া মানেই সেই ধর্মের মানুষ রাষ্ট্রকে ছিনতাই করার অধিকার পেতে পারে না। সংখ্যায় বেশি মানেই শক্তিতে বেশি, চাওয়া-পাওয়ার অধিকার বেশি, এমন মানসিকতা সুস্থ হতে পারে না।
একটি রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের অনুসারীদের, এমন স্বীকৃতি থাকলে অন্য ধর্মগুলোর অনুসারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, হীনমন্যতায় ভোগে। এছাড়া নিখাদ দেশপ্রেম থাকলেও তা প্রদর্শনে ভয় পেতে পারে, সবখানে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা করতে পারে। ঠুনকো কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠদের হামলার শিকার হতে পারে।
এগুলো সবই বাস্তবতা। একজন মেধাবি মুসলমান কিংবা হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ কিংবা অন্য কোনো ধর্মের নারী কিংবা পুরুষ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ভারত কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে নিজেকে 'রাজা বাদশা' বলে ভাবতে পারে। নিজের মেধা ও জ্ঞানের সর্বোচ্চটুকু ব্যবহার করে দুনিয়া জয় করা কোনো উদ্ভাবন করে বসতে পারে। সেসব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা হিন্দুগুলোকে তারা থোড়াই কেয়ার করে। কিন্তু সেই একই ব্যক্তি (মুসলামানটি বাদে) যদি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি, ইরান, ইরাক কিংবা যেসব দেশে "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" নামের "বেহেস্তীয় ব্যবস্থা" বিদ্যমান সেসব দেশে যায় তবে সে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি গোবরে পোকা ছাড়া আর কিছুই কি হতে পারবে?
মুসলমানরা কি বেচে থাকে এবং বেড়ে ওঠে কি শুধুমাত্র ওই "ধর্ম ধর্ম ধর্ম ধর্ম " করে হামাগুড়ি দিয়ে পেছনে হাটার জন্য? যেহেতু আমরা মুসলমান, সেহেতু আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে অন্যদের এগিয়ে যাওয়া দেখব ফ্যালফ্যাল করে? আর মাঝে মাঝে ধর্ম ধর্ম করে চিক্কুর মারব?
ধর্মান্ধদের বলছি, একটি রাষ্ট্রকে এক ইঞ্চি সামনে নেয়ার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
একশ কোটি মাইল পেছনে ঠেলার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা তোমাদের আছে। তোমাদের গোঁড়ামির কাছে যুক্তি মারা পড়বে বার বার। তোমাদের ধারণা, গোটা মহাবিশ্বের ঘুর্ণন থামিয়ে দেয়ার ক্ষমতা তোমাদের আছে! তোমরা মুর্খ, তাই এমনটি ভাব। মহাবিশ্ব ঘুরবেই, এগিয়ে যাবেই। তোমরা বরং তোমাদের অংশটুকুতে ঘুর্ণন থামিয়ে রাখতে পারো, এবং সেই কাজে তোমরা দারুন পারদর্শী!
রাষ্ট্রে যে ধর্মের মানুষ বেশি, তোমরা সেই ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম বলতে চাও।
তাহলে যে বিভাগে যে ধর্মের মানুষ বেশি সেই ধর্ম কেন "বিভাগীয় ধর্ম" স্বীকৃতি পাবে না?!? কিংবা কেন থাকবে না "জেলা ধর্ম" কিংবা "উপজেলা ধর্ম " কিংবা "গ্রাম্য ধর্ম" এজাতীয় ছ্যাবলামি?
পরিশেষে বলি, তোমার জীবন যে রাষ্ট্রেই কাটুক না কেন, সত্যের পথে থেকে নিজের ধর্ম পালন কর। তোমাকে বেহেশতে যাবার জন্য রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এমন দেশের নাগরিক হতে হবে এই ধারণা বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দাও। তোমার রাষ্ট্র আর মসজিদে যাবে না, রোজা রাখবে না, ঈদ পালন করবে না এসব ভেবে মুর্খের মতো মন খারাপ করো না!!
আর, অনর্থক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানিত প্রতিষ্ঠান আদালতকে অসম্মান করে কথা বলার ধৃষ্ঠতা দেখিও না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।