যে নিরপেক্ষ সে একা, যে একা নয় সে বিশুদ্ধ নিরপেক্ষ নয়। চাচ্চু আমার বিদেশফেরত। দেখেই
বোঝা যায়, কারণ এপিয়ারেন্সে ১টু
ফুটবল ফুটবল ভাব চলে এসচে। যদিও ১টু
দূরসম্পর্কের চাচ্চু, তবে খাতির ভালো।
যদ্দরুন ঢাকায় এসে আমাদের তত্কালীন
বাংলাবাজারের বাসায় ওঠেন।
এক বিকেলে চাচ্চু
বাইরে থেকে ঘরে ফেরেন
চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা নিয়ে।
আমরা সবাই কারণ জানতে চেপে ধরতেই
তিনি স্লোমোশানে হাত ঢোকান পকেটে।
বেরিয়ে আসে কাগজেমোড়ানো কিছু ১টা।
কাগজ খুলতেই ১টি স্বর্ণবার চকচক
কোরে ওঠে, সাথে চাচ্চুর দন্তরাজিও।
'কেল্লা ফতে!'- চাচ্চু বলে।
'ঘটনা কী?'-
আমরা জানতে চাই।
চাচ্চু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
'আসচিলাম রিক্সা কোরে।
পথিমধ্যে রিক্সাওলা রাস্তা থেকে ছোঁ মেরে কিছু ১টা তুলে নিয়ে
লুঙ্গির গাঁটে ঢুকিয়ে দিয়ে চারপাশ
দেখতে থাকে ভীতভাবে। বুঝি,
ছামথিং গড়বড় হে। ভাবি-
যেখানে পাইবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই
পাইলেও পাইতে পার...? আর যায় কোথা?
চেপে ধরি তাকে ওটা বের কত্তে।
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বের
করে ভয়ে। জিনিসটা দেখে নিয়ে বলি-
তোকে পুলিশে দব। তার চেয়ে বরং এই
তোকে হাজার টঙ্কা দিচ্ছি নিয়ে ভাগ
গে যা। রিক্সাওলা নিতান্ত অনিচ্ছায়
কিন্তু ভয়ে টাকা নিয়ে পালায়!'- এটুকু
বোলে চাচ্চুর চোখ চকচক কত্তে থাকে।
কিন্তু বাধ সাধে আব্বাজান।
বলে, 'উঁহু
শেখ, তুমি এটা কত্তে পার না। এটা আসল
মালিককে ফিরিয়ে দাও।
প্রয়োজনে মালিকের কাছ থেকে তোমার
হাজার টঙ্কা রেখে দিও। '
চাচ্চুর বিবেক জাগ্রত হয়। স্বর্ণবারের
সাথে ১টা কাগজ পাওয়া যায়।
তাতে 'শ্রী জুয়েলার্স' নামে কোন ১
জুয়েলারির মালিকের উদ্দেশ্যে লেখা-
'বহু কস্ট করিয়া কনের বিবাহের গয়নার
জন্য এই স্বর্ণ জোগাড় করিয়াছি।
এক্ষণে সুন্দর করিয়া গলার হার, নাকফুল,
কানের দুল আর বালা গড়িয়া দিন। '
আব্বাজান তখন কোতোয়ালী থানার
থানা আনসার ও ভিডিপি অফিসার।
তিনি তাঁর কর্মচারীদের
মাধ্যমে সর্বত্র শ্রী জুয়েলার্স খোঁজান।
পাওয়া যায় না।
অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় স্বর্ণবার
বিক্রি কোরে চাচ্চু তাঁর হাজার
টঙ্কা রেখে দিবে আর
বাকী টাকা মালিকের নামে দান
করা হবে।
অনীহা সত্ত্বেও চাচ্চু স্বর্ণবার
নিয়ে জুয়েলারিতে যান বিক্রি কত্তে।
কিন্তু হায়, গোটা বিশেক
জুয়েলারীতে ধর্ণা দিয়েও
তাঁকে শুনতে হয় ১টিই কথা- 'এটা স্বর্ণ
নয় ভায়া, সোনালী প্রলেপ দেয়া পিতল,
দাম বড়জোর দুইশ হবে। '
চাচ্চুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
তিনি বিধ্বস্ত হোয়ে ফিরে আসেন
বাসায়।
যুগপত্ কয়েকটি প্রবাদ তাঁর
বোধগম্য হয়-
১. চকচক কোরলেই সোনা হয় না।
২. অতি লোভে তাঁতী নষ্ট।
৩. যেখানে পাইবে ছাই উড়াইতে যাইও
না তাই খাইলেও খাইতে পার অসহ্য
বাঁশ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।