আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকাইয়া বিয়ে

www.cameraman-blog.com/

রোজা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে একটা বিয়ে খেতে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে গিয়েছিলাম। এক ঢাকাইয়া ছেলের বিয়ে। ঢাকাইয়া বিয়ে এর আগে আরো ৪/৫ টা খেয়েছি। আচার অনুষ্ঠান বাংলাদেশের আর দশটা বিয়ের মতোই, তবে ২/৩ টা ব্যাপার-স্যাপার আছে একটু অন্যরকম, চোখে পড়ার মতো। গায়ে হলুদের আগে মেয়ের বাসা থেকে জামাই এর বাসায় 'জামাই খাওন' পাঠান হয়।

জামাই তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সে খাবার খান। এই খাবারটা কাঁচাও হতে পারে আবার পাকাও হতে পারে, মানে মেয়ের বাবা জামাই বাড়ীর ইচ্ছানুযায়ী কাঁচাবাজার অথবা রান্না করা খাবার পাঠান। আমি যে কয়টা 'জামাই খাওনে' আমন্ত্রিত হয়েছি তার প্রতিটাই ছিলো ছোটখাট একটা বিয়ের খাওয়া। কমপক্ষে ৫০ জন খেতে পারে এমন খাবারই পাঠান হয়েছিলো প্রতিটাতে। ঢাকাইয়া বিয়েতে এটা একটা প্রেস্টিজ ইস্যু।

ধনী-গরিব সব মেয়ের বাবাই এটা পাঠাতে বাধ্য। কখনো কখনো এটা নিয়ে দরকষাকষিও হয়। ছেলের পক্ষ থেকে কি কি পাঠাতে হবে তা ঠিক করে দেয়া হয়। এরপর যে অনুষ্ঠানের কথা বলবো সেটা বিয়ের কোন অফিসিয়াল অনুষ্ঠান না। যার ফলে এটার কোন নাম দেয়া যাচ্ছে না।

বড়জোর 'পানপর্ব' বলা যেতে পারে। ছেলের গায়ে হলুদের রাত্রে ছেলের বন্ধুরা, ছেলের বড়ভাই আর ছোটভাই এর বন্ধুরা কিঞ্চিত পান করার আবদার করে। আর এই আবদার এখন রীতিমতো ট্রাডিশন। ঢাকাইয়া বিয়ে অথচ এই পানপর্ব নাই এমনটা বোধহয় কল্পনাও করা যায় না। তবে শুধূমাত্র সিলেকটেড লোকজনই এতে আমন্ত্রন পান।

মেয়ে বাড়িতেও অনেক সময় মেয়ের ভাইরা তাদের বন্ধুদের জন্য পানপর্বের আয়োজন করেন। এই পানপর্বের মূল আকষর্ণ হলো বিয়ার। পরবর্তীতে নানারকম সমস্যা হয় বলে মদ পরিহার করার চেষ্টা করা হয়। আর মদ থাকলেও তা খাকে সীমিত আকারে। ইদানিং বিয়ার দূস্প্রাপ্য হওয়ায় মদ পরিবেশিত হচ্ছে আর বিয়ারের বিকল্প হিসেবে থাকছে নানা রকম এনার্জী ড্রিংকস।

আর মদ না দিয়ে শুধূ এনার্জি ড্রিংক দিলে জামাই এর ইজ্জত পূরাই পাংখা। আর সর্বশেষ যে বিষয়টা আপনার চোখে পড়বে সেটা হলো উপহার। ঢাকাইয়া বিয়েতে টাকা দেয়া হয় উপহার হিসেবে। এটাই রেওয়াজ। খাওয়ার পর নির্দিষ্ট জায়গায় খাতা কলম সহ খাজাঞ্চিকে বসে থাকতে দেখবেন।

নিজের নাম বলে তার হাতেই টাকাটা গুজে দেবেন। সে আপনার নাম আর টাকার অংকটা খাতায় টুকে রাখবে। এই প্রথার ভাল দিক হলো মেয়ে বা ছেলের পরিবার বিয়ের (খাবার) খরচের একটা বড় অংশ তুলে ফেলতে পারে। আমি এরকম এক বিয়েতে এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার টাকার মতো উঠতে দেখেছি। আর খারাপ দিক হলো আপনি আমন্তিত হিসেবে ২/৩ শ টাকার জিনিস উপহার দিয়ে পার পেলেও ওখানে চক্ষুলজ্জায় অন্তত ৫০০ টাকা দিতেই হবে।

আর ভূলেও যদি সোনার গয়না ছাড়া অন্য কিছু সুন্দর প্যাকেট করে উপহার দেন তবে আশেপাশের লোকের দৃষ্টি দেখেই বুঝবেন যে আপনি একটা নিরেট ছাগল। আর আপনার পিছনে যেসব কথাবার্তা বলা হবে সেগুলো শুনতে পেলে বলবেন ধরণী দ্বিধা হও। তবে একটা বিষয়ে কেউ মনে হয় এদেরকে টেক্কা দিতে পারবেনা। এরা নিজেরা যেমন খেতে ভালবাসে তেমনি অন্যকে খাওয়াতেও ভালবাসে। সেসব নিয়ে না হয় আরেকদিন লিখবো।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.