আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তব্দা পার্ট ৪

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! দুনিয়াতে আমি তিনটা জিনিস ভয় করি, মেয়েমানুষ, কুত্তা আর চুলকাটা। পাঠক শুনলে ভাববেন, প্রথমটা ঠিক আছে, দুনিয়ার সব বাঘই মেয়েদের সামনে বিড়াল হয়ে যায়, প্রথমটার তুলনায় দ্বিতীয়টা তো কিছুই না, কিন্তু চুলকাটা এই লিস্টে কেমনে আসল? হাউ কাম? উত্তর এক কথায়, আই লাভ মাই চুল, ব্যস। আমি বছরে চুল কাটি তিনবার। এইটা আবার আমার ফ্যামিলির কারো পছন্দ না। বাপ দেখলেই বলে, সন্ন্যাসী! পুত্র আমার সন্ন্যাসী হইছে! আমারে উদ্ধার করছে!! গত মাসে ছিল আমার বাৎসরিক প্রথম চুল কাটার ডেট।

তো আমি সবসময়েই যা করি, চুল কাটা উপলক্ষ্যে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী যার কাছ থেকে পারি টাকা ম্যানেজ করি। দশ বিশ পঞ্চাশ করে প্রত্যেকবারই হাজার ছাড়িয়ে যায় ইনকাম। এবারও তাই করলাম। আমার আসন্ন চুল কাটার কথা শুনে আমার বড় ভাই একশ টাকার দুইটা কচকচে নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি সবমিলিয়ে গুণে দেখলাম, এবারের কালেকশনটা বেশ ভালোই হয়েছে।

চুল কাটার দিন সকালে বাপের সামনে পড়ে গেলাম। বাপ ঈষৎ আনন্দিত মুখে জিজ্ঞেস করলেন, কি রে? তুই নাকি চুল কাটবি? আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম, জি আব্বা। কত টাকা লাগবে? ইয়ে মানে... ইয়ে মানে কি? টাকা লাগবে না আব্বা। তার বদলে... তার বদলে কি? আমি সাহস করে বলেই ফেললাম, আমি যা চাই তাই দিতে হবে। আব্বা ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি চাস? আমি হেঁয়ালি করে বললাম, যা চাই তাই দিবা তো? আব্বা বললেন, আগে তো বলবি।

না আগে বল যা চাই তা-ই দিবা কি না। আব্বা বুঝলেন তিনি একটা ব্যাপক ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু পরক্ষণেই তার চোখ গেল আমার মাথার উপরের পাখির বাসার দিকে। ব্যস, মুহূর্তেই গলে গেলেন তিনি। আচ্ছা ঠিক আছে যা তুই যা চাস তাই দিব।

আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চুল কাটতে গেলাম। পরিচিত নাপিত, আমার চারমাসের চুল সে একবারে কাটে। বিনিময়ে পারিশ্রমিকও পায় ঈষৎ বেশি। যাহোক, দুই ঘণ্টার ব্যাপক কসরতের পর নাপিত ঘর্মাক্ত দেহে ঘোষণা দিল, হইছে। সাইজ হইছে।

আমি আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখলাম। বাহ, ভালোই তো লাগছে। চুল কাটা ব্যাপারটা আসলে অতটা খারাপ নয় বই কি! বাসায় আসতে আসতে চিন্তা করতে লাগলাম, আব্বার কাছে কি চাওয়া যায়? আব্বা তো বলেছেই যা চাইব তা-ই দিবে। তাহলে কি চাওয়া যায়? ল্যাপটপ? আইফোন? বউ? একাধিক বউ? বাসায় আসলাম। দিগবিজয়ীর বেশে আব্বার সামনে গিয়ে বললাম, আব্বা, আমার লাগবে... তারপর আব্বার সামনে ঝাড়া এক মিনিট ধরে আমার বিভিন্ন আর্জি পেশ করলাম।

আব্বা শুনলেন। তারপর ধূসর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "হ্যাঁ, আমি বলেছি তো দেব। তার আগে বাবা চুলটা কাটিয়ে এস!!!!!!!!!" টাসকি খাইলাম। তব্দা খাইলাম। আব্বা আবার বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, "সন্ন্যাসী! সন্ন্যাসী পুত্র আমার!" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।