কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ফার্স্ট ইয়ারের ঘটনা। কঠিন শীত। হাড় মাংস কাঁপিয়ে দেয়া শীত।
সর্দি হয়ে আমার তখন নাক বন্ধ। জগতের সব কিছুর ঘ্রাণ থেকে আমি তখন বঞ্চিত।
অবশ্য এতে যে খুব একটা লাভ হয় নি তা-ও নয়। মেডিকেলের সামনের ঘোড়া রাখার স্থান, যেখানে যত্রতত্র ঘোড়ার সুগন্ধযুক্ত মলমূত্র পড়ে থাকে সেসব জায়গা আমি সহজেই মাড়িয়ে যাই। বন্ধুরা নাক কুঁচকে আমার দিকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকায়। আমি হু হু হা হা করে আলেকজান্ডার টাইপ ভাব নিয়ে চলাফেরা করি।
তো একদিন তাড়াহুড়া করে এক বান্ধবীর কাছে লেকচার খাতা নিতে মেয়েদের হলের নিচে গিয়েছি, তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা হবে মনে হয়।
কিছুক্ষণ পরে মেয়েটা খাতা হাতে এগিয়ে এল। এসে কোথায় হাসিমুখে কিছু একটা বলবে তা না, হঠাৎ নাকমুখ প্রচণ্ড কুঁচকে সে এমন একটা ভাব করল যেন জীবন্ত এক ড্রাম তেলাপোকা তাকে একটু আগে খাইয়ে দেয়া হয়েছে। আমি তব্দা খেয়ে বললাম, কি হয়েছে?
মেয়ে বলল, তোমার গায়ে শুয়োরের মত গন্ধ কেন?
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। বললাম, কি? কি বললা?
এত গান্ধা কেন তুমি? গোসল কর না কয় মাস?
আমি থতমত খেয়ে বললাম, কই সন্ধ্যায়ই তো গোসল করলাম।
তাইলে এত গন্ধ কেন? বডি স্প্রে মারতে পারো না?
বডি স্প্রে! হঠাৎ বুঝতে পারলাম, আরে তাই তো! আসার আগে পাঁচটা রুম থেকে দশজনের বডি স্প্রে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মেরে এসেছি আমি।
নিজের নেই তো, তাই। হয়তো সে সবগুলোর গন্ধ মিক্স আপ হয়ে উদ্ভট কিছু একটা তৈরি হয়েছে।
আমি বললাম, বডি স্প্রে তো মারছি। কি ব্র্যান্ড শুনবা?
শোনার আগেই মেয়েটা আমার দিকে ওর খাতাটা ছুঁড়ে মারল। তারপর গটগট করে চলে গেল।
আমি স্পষ্ট শুনলাম অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্টতর হওয়া ওর ওয়াক ওয়াক শব্দ।
হতাশ চিত্তে রুমে ফিরে এলাম। রুমে ঢোকার একটু আগে কারেন্ট চলে গেল। রুমে ঢুকে দেখি রুমমেট এতক্ষণ বিছানা গোছাচ্ছিল। ওর নাকের অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ।
গত এক মাস ধরে বন্ধ।
রুমমেট বলল, কি রে খাতা আনছস?
হ্যাঁ আনছি।
তাইলে এইরকম মরা মরা গলায় কথা বলতেছিস ক্যান?
মন ভালো নাই।
ক্যান?
বান্ধবী গান্ধা বলসে। আমার গায়ের গন্ধে তার বমি চলে আসছে।
সে দূরে গিয়ে বমি করে আসছে।
ক্যান তুই বডি স্প্রে মারস নাই?
মারছি। কাম হয় নাই।
হঠাৎ আমার রুমমেট হা হা করে হাসতে শুরু করল। আমি বললাম, হাসতেছিস ক্যান?
একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
কি ঘটনা?
গান্ধামির ঘটনা। শোন, আমার ভর্তির দিন কি হইছিল জানিস?
কি?
কাগজপত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়ায়া আছি, আমার সামনে আর মাত্র দুই জন। ঠিক এমন সময় আমার প্রচণ্ড টয়লেট লাগল। আমি করলাম কি, আমার হবু আগের রোলের হাতে কাগজপত্র দিয়ে দৌড়ায়া টয়লেটে গেলাম। টয়লেটে গিয়া আরামে কাম সারলাম।
মানে, বড় কাম আর কি। কিন্তু কাম সারার পর হইল যন্ত্রণা। দেখি, ট্যাপে পানি নাই।
এখন কি করি? পকেটে হাত দিলাম। টিস্যু নাই।
কাগজ নাই। মানিব্যাগও বাইরে দিয়ে আসছি। টয়লেট পরিষ্কার করার জিনিসটাও পাশে নাই। আন্ডারওয়ারও পরি নাই।
আল্লাহর নাম কইরা দিলাম জুতার নিচ দিয়া ঠেলা।
বর্জ্য পদার্থ কমোডের ব্ল্যাকহোলে চালান হয়ে গেল। এইবার শৌচকার্য। বাট কাগজ টাগজ তো নাই-ই, একটা ইট টিট কিছুই নাই। আন্ডারওয়ার থাকলেও কাম সাইরা ফালায়া দেয়া যাইত, বাট ঐটাও নাই।
এদিকে আমার আগেরজনের টার্ন মনে হয় চলে আসছে।
তারপর আমার টার্ন। কি করব কি করব, দিলাম প্যান্ট তুইলা। ইন কইরা চেন লাগায়া বোতাম লাগায়া ফেললাম, যা থাকে কপালে। বের হয়ে সোজা চলে গেলাম ভর্তির রুমে। কোনভাবে চেয়ারের সামনে আগায়া সাইজ কইরা বসলাম যেন কেউ কিছু টের না পায়।
ঐখানে সব ঠিকঠাকমত হইল। বাট শেষরক্ষা হইল না। মেডিকেল এক্সামিনেশনের জন্য ডাক পড়ল একসময়। একেকজন যায় আর হাইসা হাইসা বের হয়ে আসে।
আমার টার্ন আসলে আমি গেলাম।
ডাক্তারে কয়, প্যান্ট খুলো।
ক্যান স্যার?
একশিরা কি না দেখব। খুলো।
একশিরা কি স্যার?
খুলো বেয়াদপ ছেলে।
আমি প্যান্টের উপরের বোতাম খুইলা বললাম, স্যার, আন্ডারওয়ার পরি নাই।
ইজ্জত নিয়া টানাটানি কইরেন না।
ডাক্তার কি বুঝল কে জানে? উপর থেকে পার্টস চেক করে বলল, এত গন্ধ কেন তোমার গায়ে?
স্যার মনে হয় ঘামের গন্ধ।
আচ্ছা যাও। আর শোন, এইরকম জঙ্গল বানায়া রাখবা না। নিয়মিত পরিষ্কার করবা।
জি স্যার আচ্ছা স্যার। তারপর আমি কোনভাবে বাসায় এসে গোসল করে ফেললাম। ঐ প্যান্ট আমি আর জীবনে পরি নাই। তো এই হল গিয়া আমার গান্ধামির কাহিনী। সেইটার তুলনায় তো তোর এইটা কিছুই না।
বুঝছস?
আমি বললাম, তা...ঐ প্যান্ট এখন কই?
সাথে সাথে কারেন্ট চলে এল। বন্ধু হিটারের সুইচ লাগাতে লাগাতে বলল, আছে। আমার আলমারির নিচের তাকে রাইখা দিসি। সুভেন্যির হিসাবে। পোলাপানরে দেখামু।
আমার তখন কেমন মাথা ঘোরা শুরু করেছে। কেমন বমি বমি আসছে আমার। ঠিক এমন সময় রুমমেট আমার দিকে তাকাল। তারপর তাকাল প্যান্টের দিকে।
তব্দা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে আমার কানে ঢোকা শেষ বাক্যটি ছিল এরূপ - "তুই আবার আমার প্যান্ট পরসোশ?????" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।