আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তব্দা পার্ট ৬

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! মাইক্রোবায়োলজি প্র্যাকটিকাল ক্লাস। আমরা কতিপয় ব্যাকবেঞ্চার আগে আগে এসে পিছনের চেয়ারে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি। আমাদের অ্যাপ্রোনের বোতাম খোলা, পায়ের উপর পা তোলা। নিজেদের কেমন রাজা মহারাজা টাইপ মনে হচ্ছে আমাদের। মনে হচ্ছে এমন শুভক্ষণে একটা বাইজি নৃত্য হলে নেহায়েত মন্দ হত না।

ইভটিজিং যদি আর্ট হয়, আমরা হচ্ছি আর্টিস্ট। বেশ ভালো মানের আর্টিস্ট। আর বিভিন্ন সোর্স থেকে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের অম্ল মধুর অভিজ্ঞতার ফলে আমরা জানি, কোন মেয়ে কিসে খ্যাপে, কোন মেয়ের দুর্বলতা কি, কোন মেয়েকে খেপালে গাল টমেটোর মত লাল হয়ে যায়, কোন মেয়ে কারণে অকারণে স্যান্ডেল তুলে তেড়ে আসে, কোন মেয়ে ইভটিজিং শুনলে প্রেমের প্রস্তাব মনে করে মুচকি মুচকি হাসে ইত্যাদি। তো আজ অর্ধ শোয়া অর্ধ বসা অবস্থায় চোখের কোণা দিয়ে দেখলাম, ব্যাচের এক স্বঘোষিত সুন্দরী হাতের নখে কড়া গোলাপি কালারের নেইলপলিশ দিয়ে এসেছে। আলোর প্রতিফলনে তার নখগুলো কেমন চকচক চকচক করছে।

অন্য মেয়েরা আর কিছু নারীঘেঁষা পুরুষনাম্নী হাঁদারামরা "ওহ মাই গড" - "সো সুইট" - "হাউ কিউট" ভাব নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকা লুল ছেলেগুলোর জিহবা থেকে সেকেন্ডে এক মিলিলিটার স্যালাইভা চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। আমার মনে পড়ে গেল, ফার্স্ট ইয়ারে এই মেয়ের নেইলপলিশের দাম জিজ্ঞেস করতে গিয়ে মেয়ের কাছে ফেসবুকে ব্লক খেয়েছিলাম। সেই ব্লক আজও সে তোলে নি। এখনও মাঝে মাঝে সেই ব্লক আমার স্বপ্নের মধ্যে হানা দেয়।

প্রতিশোধ! প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল আমার মাথায়। পাশে আয়েশ করে বসে থাকা বন্ধুকে বললাম, "মামা আজকে পচাইতেই হইব"। বন্ধু আমার সব কথাতেই রাজি। কারণ তাকে আমি প্রতিদিন পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি খাওয়াই। বন্ধু আবার ঝালমুড়ির জন্য পৃথিবীর সবকিছুই করতে পারে।

বন্ধু বলল, "হুম পচাইতেই হইব"। "পচাইয়া আন্ধার বানাইয়া দিতে হইব কিন্তুক!" "হ আন্ধার বানাইয়া দিমু একদম!" বন্ধু নিজের বুকে গরিলার মত থাবা মেরে বলল। আমরা আমাদের ইভটিজিং কোবতে সমগ্র ব্যাগ থেকে বের করে অসাধারণ একটা কোবতে খুঁজে বের করলাম। হঠাৎ সমস্বরে আমরা গাওয়া শুরু করলাম, "শোন মেয়ে সুন্দরী গো শোন দিয়া মন তোমার রূপের বাহার মোরা করিব বর্ণন" এইটুকু বলার সাথে সাথে তড়াক করে সবকয়টা মেয়ে আমাদের দিকে তাকাল। সবকয়টার ভাব এমন, "কি? আমাকে বললে?" আহা, যেন সবকয়টাই ডাই হার্ড সুন্দরী! এইসব মেয়েরা যে নিজেদের কি ভাবে! হুহ! আমরা আবার বলা শুরু করলাম, "মেয়ে তুমি তোমার নখে লাগাইছ নেল পালিশ আমার বুকে ব্যথা বড় করে দিবে মালিশ?" নেইলপলিশ সুন্দরী দেখি রাগে দুঃখে ক্রোধে হতাশায় লাল হয়ে গেছে।

তাকে কেমন আপেল আপেল দেখাচ্ছে। আমরা খ্যাক খ্যাক করে হাসছি। আহ, বড় শান্তি পেলাম বহুদিন পর। ঠিক যেন দশ দিন আটকে থাকার পর পেট খালি করার শান্তি। এরপর স্যার আসলেন।

এসে বললেন, আজকে তিনি Gram stain হাতে কলমে করাবেন। (Gram staining হচ্ছে মাইক্রোস্কোপের নিচে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার চমৎকার একটা পদ্ধতি। যেসব ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর পুরু তারা gram staining এর পর বেগুনী রঙ দেখায়। আর যাদের কোষ প্রাচীর পাতলা তারা gram staining এর পর লাল রঙ দেখায়। ) করান।

কোন সমস্যা নাই। আজ আমার বড় সুখের দিন। স্যার প্রথমে লেকচার দেয়া শুরু করলেন। স্যারের প্রতিটা কথা আমার কানে বিটোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনির মত বাজতে লাগল। পাশে বসা মোটা কামরুলের বগলের গন্ধ ইরান দেশের কস্তূরীর সুবাসের মত লাগতে লাগল।

গভীর মনোযোগ দিয়ে লেখায় ব্যস্ত মেয়েগুলোকে কেমন অপ্সরা অপ্সরা লাগতে লাগল। হেল আই লাভ দিস ফিলিং! স্যারের লেকচার দেয়া শেষ হল। স্যার একবার পুরো Procedure দেখিয়ে দিলেন। Primary staining করে বেগুনী রঙের Crystal violet দিয়ে, Mordanting করে Lugol's iodine দিয়ে, Decolourisation করে Acetone দিয়ে আর Counter staining করে লালচে গোলাপি রঙের Carbol fuschin দিয়ে। দেখলাম।

এরপর স্যার সবার হাতে একটা করে স্লাইড ধরিয়ে দিলেন। বললেন সবাইকে আলাদা আলাদা করে Gram staining করতে। জীবনে প্রথম Gram Stain করলাম। প্রথমবার Carbol Fuschin দিতে ভুলে গেছি, দ্বিতীয়বার Gram negative এর স্লাইড পেয়েছি বলে মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখে শান্তি পাই নি। তৃতীয়বার Gram positive এর স্লাইড পেয়েছি, মাইক্রোস্কোপের নিচে দিয়ে তো আমি হা! ইতা কিতা! বহুবার আপন মনে মুখস্থ করা Gram positive cocci arranged in clusters, most likely Staphylococcus তখন জলজ্যান্ত আমার চোখের সামনে! একে তো সফল ইভটিজিং অভিজ্ঞতা, তার উপর লাইফের থার্ড চান্সেই স্পষ্ট Staphyococcus দেখা! আমার আনন্দ তখন তুঙ্গে।

প্রায় আকাশে উড়ছি তখন আমি। ক্লাস শেষ। হাসি হাসি মুখে আমি বের হয়ে আসছি। এমন সময় খুব কাছ থেকে একসাথে সব মেয়ে গেয়ে উঠল, "পোলা তুমি তোমার নখে লাগাইছ নেল পালিশ তুমি কি চাও তোমার নামে কইরা দিই নালিশ? না চাইলে এখন কর আমার জুতা পালিশ" এই বলে সব মেয়ে আমার দিকে তাদের জুতা বাড়িয়ে দিল। অবস্থা বেগতিক দেখে আমার ইভটিজিং সহযোগীরা সব সটকে পড়ল সুযোগ বুঝে।

কিন্তু মেয়েরা এটা কি বলল? আমার নখে নেইল পালিশ মানে? আর মেয়েরা আমার হাতের দিকে তাকিয়ে হু হু হা হা করে হাসছে কেন? আমি আমার দু হাতের নখের দিকে তাকালাম। এবং তব্দা খাইলাম। টাসকি খাইলাম। Staining করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত লাল রঙের Carbol fuschin পড়ে আমার ডান আর বাম হাতের সব নখ লাল হয়ে গেছে। আলোর বিপরীতে সেগুলো অতি চকচক করছে।

দেখে মনে হচ্ছে কেউ অতি যত্ন করে নেইল পলিশ মেরে দিয়েছে। সাথে সাথে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। শুরু করলাম হাত ধোয়া। কিন্তু না! হায় হায়! Carbol fuschin যে এত শক্তিশালী রঙ তা কে জানত? এ যে হাজার বার সাবান দিয়ে ধোয়ার পরও সামান্যও উঠছে না! মাথা নিচু করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। মেয়েরা তখনও আমাকে দুয়ো দিচ্ছে।

আরে! তাদের সাপোর্ট দিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসছে নারীবাদী ছাগল ছেলেগুলো! আর...আর...খোদা এ দৃশ্য দেখার আগে আমার মরণ হল না কেন? আমার ইভটিজিং পার্টনারগুলোও হা হা করে হাসছে মেয়েদের সাথে তাল মিলিয়ে! তব্দা খাইলাম। টাসকি খাইলাম। অতঃপর আমার লাল নখ ঘষতে ঘষতে আবিষ্কার করলাম অমর সূত্র, "প্রতিটি ইটের বিপরীতে সমান ও বিপরীতধর্মী পাটকেল ভক্ষণ করিতে হয়!!!" ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।