কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! তব্দা পার্ট ৮
আমার বন্ধু রিঙ্কু। পড়াশোনায় ও ক্লাস করায় তার সিরিয়াসনেস লিজেন্ডারি পর্যায়ের। দশ বছরের বড় আপু থেকে শুরু করে সদ্যজাত ফার্স্ট ইয়ারের অবুঝ মেয়েরা পর্যন্ত মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, "ভাইয়া, রিঙ্কু ভাইয়া দিনে কত ঘণ্টা পড়ালেখা করে?" "ভাইয়া, উনি নাকি সময় নষ্ট হবে বলে খাওয়া দাওয়া করেন না?" "ভাইয়া, উনি নাকি টয়লেট করতে করতেও পড়া মুখস্থ করেন?" "ভাইয়া, ইয়ে মানে, উনার ফেসবুক আই ডি কি?" ইত্যাদি।
তো আজ ক্লাস শেষে রিঙ্কু হুট করে বলে বসল, "কি রে তুই তো তব্দা টব্দা লিখে ভালোই লাইক কামাইতেছস"।
আমি তো সাথে সাথে টাসকি।
রিঙ্কু মিয়া সারাদিন পড়ার ফাঁকে ফেসবুকেই বা ঢুকল কখন আর তব্দাই বা খেল কখন? তবুও গম্ভীর স্বরে বললাম, "হুম"।
"কিন্তু সবই তো বানানো গল্প। চাপাবাজি গল্প। একটাও তো রিয়েল না"।
"নাহ দোস্ত সবই রিয়েল"।
"সবই রিয়েল?" ভ্রূ কুঁচকে বলল রিঙ্কু, "তুই যে রেটে তব্দা পোস্ট করিস সেই রেটে মজার ঘটনা দুনিয়াতে ঘটে? মনে তো হয় না"।
"আরে হয় হয়"।
"আচ্ছা, চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক", রিঙ্কু বলে, "কলেজ থেকে হলে যাবার মধ্যের সময়টুকুর মাঝে যদি তব্দা খাবার মত কোন কাহিনী ঘটে তাহলে আমি তোকে আফতাবে খাওয়াব। আর না ঘটলে তুই খাওয়াবি"।
"এটা কি ধরণের চ্যালেঞ্জ?" বলি আমি, "এত কম সময়ে কেমনে তব্দা খামু? একদিন তো অন্তত টাইম দে"।
"না। যা বলসি তাই। চ্যালেঞ্জ নিলে নে নাইলে আমি বুঝব তোর সবই চাপা। সবই গুলপট্টি"।
রিঙ্কুর এই আপাতদৃষ্ট অতিসাধারণ চ্যালেঞ্জে আমার লেখকানুভূতিতে আঘাত লাগল।
প্রচণ্ড আঘাত। নাহ, এই চ্যালেঞ্জ না নিলে জীবনই বৃথা। আর হারলেও তেমন কিছু না, আফতাবে ১০০ টাকায় রিঙ্কুকে ভালোই খাইয়ে দেয়া যাবে। তেমন কোন সমস্যা হবে না।
অবশেষে বললাম, "ওকে আমি রাজি।
টাইম বিগিন্স নাউ"।
আমরা কলেজ থেকে হলের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। রিঙ্কু হাসতে হাসতে আকাশ বাতাস দেখে, আমি মানুষ দেখি। কেউ কোন হাস্যকর কাজ করল কি না, কারো মাথায় কাক হেগে দিল কি না, কোন সুন্দরী নিজের হাই হিলে নিজেই উশটা খেয়ে পড়ে গেল কি না, কোন ম্যাডামের শাড়ির কোণা রিকশায় বেঁধে ছিঁড়ে গেল কি না, ভাবিস্ট বড় ভাইয়ের প্যান্টে লেবুর শরবত খেতে গিয়ে শরবত পড়ে সন্দেহজনক চিত্রকর্ম সৃষ্টি হল কি না, সম্ভাব্য ঘটনাগুলোর দিকে আমি চিলের দৃষ্টি দিয়ে মনোযোগ দেই। আমার চোখ তন্ন তন্ন করে আশেপাশের মানুষদের সার্চ করে।
বাট অ্যালাস! কিছুই খুঁজে পাই না আমি। হঠাৎ করেই যেন বাংলাদেশের সব মানুষ পারফেক্ট হয়ে গেছে। কেউ কোন হাস্যকর কাজ করছে না। কেউ গ্যাড়াচ্ছে না। সবাই কেমন যেন সিরিয়াস হয়ে গেছে।
রিঙ্কু হাসছে। তার হলুদ দাঁত বেরিয়ে গেছে আনন্দে। আফতাবে যাবার জন্য রিকশা ঠিক করতে রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে ধীরপায়ে দিগ্বিজয়ী ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে। আমি ঘামছি। ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড ঘামছি আমি।
আমার সম্মান এখন হুমকির মুখে। তব্দার সম্মান এখন হুমকির মুখে।
রিকশায় উঠলাম। এখনও সময় আছে। আফতাব পর্যন্ত যাবার আগে যদি পেয়ে যাই কোন হাস্যকর ঘটনা, যদি পেয়ে যাই নেক্সট তব্দার কাহিনী, তাহলেই চ্যালেঞ্জে জিতে যাব আমি।
আফতাবে তখন আমারই আনন্দিত মুখে খাবার ঢুকতে সাহায্য করবে পরাজিত রিঙ্কুর অভিশপ্ত টাকা। আর নাহলে...
হঠাৎ রিঙ্কুর ফোন এল। রিঙ্কু হাসতে হাসতেই রিসিভ করল ফোন।
"হ্যালো? কে?"
রিঙ্কুর কথা শুনে বুঝলাম তার কোন এক আত্মীয় বা পরিচিত বা স্টুডেন্ট লেভেলের কেউ আগামীকাল ডিএমসিতে কোন কারণে আসতে চাচ্ছে। হয়তো রিঙ্কুর কাছে পড়বে বা ডাক্তার দেখাবে।
রিঙ্কু হেসে হেসে কবে আসতে হবে এটা নিয়ে বারগেইন করছে। আজ হরতাল, কাল এই, পরশু ঐ ইত্যাদি বলে সে সম্ভাব্য দিন আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আফতাবে আমরা চলে এসেছি। রিকশা থেকে নেমেছি। আমি হতাশ।
পরাজিত। মানিব্যাগের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে আমার হতাশ হাত। একটু পরে এটাই হালকা হয়ে যাবে বেশ খানিক গ্রাম। সেই সাথে হালকা করে দিয়ে যাবে আমার মূল্যবান সম্মানের একটা অংশ।
কিন্তু না! হঠাৎ আমার কানে প্রবেশ করল রিঙ্কুর একটা কথা।
এবং আমি তব্দা খাইলাম। টাসকি খাইলাম।
রিঙ্কু বলল, "শনিবারে মনে হয় আসতে পারবেন না, শনিবারে মহাসেন না মহাসমাবেশ কি যেন হবে..."
মহাসেন না মহাসমাবেশ!! ওহ এইটা আমি কি শুনলাম!!!
তব্দা ভাব কাটতে না কাটতেই রিঙ্কু বলল, "কি রে আমি তো জিইতা গেসি। তব্দা খাওয়ার মত কোন ঘটনা তো এখন পর্যন্ত ঘটে নাই। চল খাওয়া"।
আমি ভগ্ন স্বরে রিঙ্কুকে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা তুই উনারে শনিবারে আসতে মানা করলি ক্যান?"
রিঙ্কু বলল, "ঐদিন তো ঢাকায় ঝামেলা। বিএনপি মহাসেন না মহাসমাবেশ কি যেন দিয়ে রাখছে..."
এবং আমি আবারও টাসকি খাইলাম। তব্দা খাইলাম। রিঙ্কু আনন্দিত মুখে আফতাবের দিকে আগাতে লাগল। হাসিতে তার হলুদ দাঁত বেরিয়ে পড়েছে।
(মহাসেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসা একটি সম্ভাব্য ঝড়ের নাম যেটা আবহাওয়াবিদদের মতে সম্ভবত ১৬ মে ২০১৩, বৃহস্পতিবারে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানবে। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।