আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় আমিঃ ২০১২। বিমান যাত্রা পর্ব।

স্বাগতম আমরা যারা প্রবাসী ছুটি এলেই ঝাপিয়ে পরি দেশে যাবো, কিন্তু কোন এয়ারলাইন্সে? খবর নিই কম ঝামেলায় কোন এয়ারলাইন্সটি আমাদেরকে নিরাপদে দেশের মাটিতে পৌছে দিতে পারে। আমাদের মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুড়পাক খায় যেমনঃ ১। নির্দিস্ট দিনে বুকিং পাওয়া যায় কিনা(কারন বাচ্চার স্কুলের ছুটির সঙ্গে মেলাতে হয়) ২। প্লেনে করে কতটুকু ওজনের মাল নেয়া যাবে ৩। প্লেনটি সময়মতো এবং সরাসরি যাবে ,নাকি কানেক্টিং এবং সবশেষের চিন্তা প্লেনটা কোন দেশের।

এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুজে তবেই আমরা টিকিট কাটার কথা ভাবি। অনেকদিন যাবৎ প্রবাসী থাকার কারনে বেশ কয়েকবার প্লেনে দেশে যাতায়ত করেছি। এর মধ্যে মাত্র দুইবার যাত্রা ছিল আমাদের অহঙ্কার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। কিছু বাজে অভিজ্ঞতার কারনে আমি এখন আর বিমানে উঠিনা। আমার অনেক বন্ধুরও বাংলাদেশ বিমানে যাওয়ার বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।

যেমন ভাবীকে গভীর রাতে এয়ারপোর্টে সী-অফ করে দিয়ে ভাইটি বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে অফিস যাওয়ার আগে দেশে ফোন করে জেনেছেন,তাদের ফ্লাইট সৌদি থেকেই ছেড়ে আসেনি। অবাক হয়ে খবর নিয়ে জেনেছে ভাবী-বাচ্চা সবাইকে নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ এক হোটেলে রেখেছে! কারন শেষ মুহুর্তে বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগ! সৌদি আরবের দাম্মাম এয়ারপোর্ট থেকে একমাত্র বাংলাদেশ বিমান আর সৌদি এয়ার লাইন্স সরাসরি ঢাকা যায়। আর অন্যান্য গুলি বিভিন্ন দেশ ঘুড়ে অর্থাৎ লোকাল ট্রেনের মতো---। বাংলাদেশ বিমানের সময়জ্ঞান আর লক্কর ঝক্কর প্লেনের কারনে বেশিরভাগ যাত্রীই হাজারো দেশপ্রেম থাকলেও সহজে বিমানে ঊঠেনা।

আবার সৌদি এয়ার লাইন্সেও রয়েছে অনেক অসুবিদা,তারা যাত্রীদের সঙ্গে বেশীর ভাগ সময়ই ভাল ব্যবহার করেননা। বেশী বেশী করে মাল নিতে মিডল ইস্টের যাত্রীরা একপ্রকারের প্রতিযোগীতা করে থাকে। কারন তাদের আত্মীয় স্বজনরা আগে থেকেই লম্বা গিফটের ফর্দ আব্দার করে রাখে। এই কারনে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলিও যাত্রী টানতে বেশী ওজনের ছাড় দেন। একসময় দেখা যেত ৯০ভাগ যাত্রীর হাতেই একখানা টুইন-ওয়ান নিয়ে দেশে আসতে।

দিন বদলে গিয়েছে তাই এখন তাদের হাতে হাতে ল্যাপটপ আর হেন যাত্রী নেই যারা একটা কম্বল না নিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টে স্পর্শ করেছেন। মজার ব্যাপার এদের লাগেজ বাধার স্টাইলও একটু অন্যরকমের। স্যুটকেস হোক বা কাগজের কার্টুন হোক, লাল-লীল প্লাস্টিকের রশি বা দড়ি দিয়ে সেগুলো বাধা হয়। আমার মনে হয় এই লাগেজ বাধা দেখেই লোকে বুঝে যায় এরা মিডল ইস্ট থেকে এসেছেন। আমার বাসায় একমাস আগেই লাগেজ রেডি যাইহোক আমি এবার সৌদি এয়ার লাইন্সের চারটি টিকিট দুমাস আগেই কেটে রেখেছিলাম।

সারা রাত জাগার পর ভোর সাড়ে ছয়টায় ছিল আমাদের যাত্রা। প্লেন চালু হবার একটু পরই বিমানবালা স্পষ্ট বাংলায় ঘোষনা দিলেন - প্লেনে সিগারেট খাবেন না, যদি ধুমপানরত অবস্থায় পাওয়া যায় তবে তার জরিমানাসহ পাসপোর্টও নিয়ে নেয়া হবে! কথা শুনে আমারতো মাথা বোঁবোঁ করে ঘুড়তে লাগলো,যদিও আমি স্মোকার নই কিন্তু ভাবছি এ কেমন বেয়াদবি কথাবার্তা! এটা কি প্লেন নাকি সালসাবিল বাস সার্ভিস!! ওদিকে আমার স্ত্রীতো খুশীতে বাকবাকুম,কারন বিদেশী প্লেনে বসে বাংলায় ঘোষনা শুনতে পেয়েছে! যাইহোক একটু পরই প্লেনের দেয়া খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর টয়লেট পেতেই দৌড়ালাম এবং সেখানে গিয়ে দেখলাম দেশী-বিদেশী এয়ারহোস্টেসরা এয়ার ফ্রেসনার হাতে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন। ব্যপার আর কিছুই না যাত্রীরা টয়লেটে ঢুকে সিগারেট খেয়েছে তার গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে পুড়া এলাকা। আমি ঐ অশোভনীয় ঘোষনাটি মনে করলাম আর পাশ কাটিয়ে একটি টয়লেটে ঢুকে পড়লাম।

ভেতরে গিয়ে আমিতো আরো অবাক এবং লজ্জিত হলাম। ঘুমানোর আগে দেখেছিলাম,তাকে তাকে সুন্দর করে সাজানো টুথপেস্ট, ব্রাস, সাবান, পারফিউম ইত্যাদি। কিন্তু এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই,যেন ভুবুক্ষরা সব লুটে নিয়েছে। ঢাকায় নেমেই খুশীতে পাসপোর্ট হাতে ইমিগ্রেসনের দিকে দৌড়ালাম। কিন্তু সেখানে এক বিশাল লাইন শুনলাম আরও তিনটে প্লেন নাকি পর পর ল্যান্ড করেছে।

তবুও অনেকদিন পর গিজগিজ করা মানুষ দেখে ভালই লাগলো। কিন্তু আমাদের লাইন টপকিয়ে সার্ক দেশের প্যাসেঞ্জার নামে ভারতীয় মেষমশাই আর মাসিমারা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল পাশ থেকে এক প্রবাসী যাত্রীকে আক্ষেপ করতে দেখলাম। সে বলতেছিল বিদেশেও তাদেরকে সৌদিদের পেছনে পড়ে থাকতে হয় দেশে এসেও দেখি বিদেশীদের পেছনে থাকতে হচ্ছে!!! হারানো লাগেজ সাতদিন পর এভাবে খুজে পেলাম এরপর লাগেজ বেল্টে প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর চারটে লাগেজের আশা ছেড়েই এয়ারপোর্ট ত্যাগ করলাম। তবে যাওয়ার আগে মাল হারানোর অভিযোগ রেখে যাই। সাতদিন পর অবশ্য হারানো লাগেজগুলো অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলাম।

(চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।