যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে মাঝে মাঝে দেখি তালবে-এলেম কয়েকটা বাচ্চা বাসার কলিং বেল টিপছে। বারো থেকে চৌদ্দ বয়স হবে। শুভ্র পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত। আশেপাশের কোনো কউমি মাদ্রাসার ছাত্র। একবার জিজ্ঞেস করলাম, কি পড়ছে? জানালো হেফজ করছে! তারা চাল নিতে আসে।
কিছু কিছু ফ্লাটের মানুষ তাদের দেখলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আমার খুব মায়া লাগে। কি বাচ্চা বাচ্চা ছেলেপুলে। কুরআন শরীফ মুখস্থ করার মত এত কঠিন একটা কাজ তারা করছে, কিন্তু আবার বাসায় বাসায় ঘুরে নিজেদের রুটি-রুজির ব্যবস্থাও করছে।
আমার প্রতিবেশী যারা এসমস্ত এতিম বাচ্চাদের কলিং বেলে বিরক্ত হন - তারাই আবার শুক্রবার দামী জায়নামাজ, লন্ড্রিজাত পাঞ্জাবী আর আতর মেখে জুম্মায় শরীক হন।
অন্য নামাজের কোনো খবর নাই - বাসায় সারাদিন স্টার মুভিস নইলে ফেসবুকে আজেবাজে পেইজে পড়ে থাকেন, শুক্রবারই কেবল তাদের মসজিদে দেখা যায়। আমার খুবই খারাপ লাগে। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন সাহেবকে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে খেতে হয়। আমার এক প্রতিবেশী একদিন আমাকে বললো, ইমামসাহেবকে আমি টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার পাঠিয়ে দেই। ঘরের মধ্যে ঢুকলে অস্বস্তি লাগে।
অথচ এই ব্যক্তিই কুরবানীর সময়ে বড় একটা গরু কোরবানী দেন।
আমি কিছু করতে পারি না। তবে মনে হয় সত্যিই যারা আমাদের মৃত্যুর পরে জানাজা পড়ে, যাদের ইমামতীতে আমরা নামাজ পড়ি, যেসব বাচ্চারা কুরআন শরীফ হেফজ করার সুমহান দায়িত্ব নেয় - তাদেরকে আমরা সঠিক মর্যাদা দেই না। মিলাদের সময় তাদের কথা মনে পড়ে, নইলে মৃত্যুতে - এছাড়া তাদের জন্য কি আমাদের আর কিছুই করার নেই? সবার আচরণ দেখে আমার মনে হয় তাদের কে আমরা উপরে উপরে কেবল সম্মান দেখাই।
আজকে ব্লগাররা যদি ইমাম-মুয়াজ্জিন-হেফজকারীদের যদি ব্লগিং বা ইন্টারনেটের হাতেখড়ি দিতে পারতো - নিশ্চয়ই তাদের অনেক আক্ষেপের কথা আমরা জানতে পারতাম।
এতিম বাচ্চার কলিং বেল শুনে বিরক্তিতে নাক কুচকানো আমার প্রতিবেশী হয়তো একটু সহানুভুতির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাতেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।