আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানদের উপর নিউইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দাগিরি কি আইনসঙ্গত ছিল?

বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... সম্প্রতি নতুন কিছু সংগৃহিত গোপন নথিপত্র থেকে জানা গেছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এদেশে বসবাসরত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের মুসলমান আমেরিকানদের মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্ত তথ্য তাদের সংগ্রহে রেখেছে। আর এতেই প্রমাণিত হয়, মুসলমানদের ওপর গোয়েন্দাগিরি শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক কারণেই ছিল। নিউইয়র্ক এবং তার পার্শ্ববর্তী ষ্টেটগুলোতে বসবাসরত নিরপরাধ মুসলমানদের নাম গোপন নথিতে রাখা এবং মসজিদ, মুসলমান ছাত্রদের গ্রুপ, এবং মুসলমানদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উপর গোপনে গোয়েন্দাগিরি করার কারণে মুসলিম কমিউনিটি, আইন বিশেষজ্ঞ এমনকি এফবিআই এর দ্বারা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। যদিও মেয়র ব্লুমবার্গ পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে সমর্থন করে বলেছেন, তারা নিউইয়র্ক সিটিকে নিরাপদ রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত এবং তারা যা করছে তা সম্পূর্ণ আইনসম্মত এবং কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে লক্ষ্য করে করছে না এবং সিটির নিরাপত্তার স্বার্থে এই গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যহত থাকবে। সম্প্রতি ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দ্বারা মুসলমানদের উপর গোয়েন্দা তৎপরতা কতটা আইনসঙ্গত ছিল, এই সম্পর্কে সাধারণ জনগণ কতটা অবগত ছিল, এই গোয়েন্দা তৎপরতা কোন নির্দিষ্ট ধর্ম কিংবা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা এবং এই গোয়েন্দা অভিযানের রিপোটগুলো কাদের দ্বারা পর্যালোচিত হয়েছে- এই ধরনের অনেক আইনগত দিক নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আগ্রাসী গোয়েন্দা সংস্থায় পরিণত করে। ‘ডেমোগ্রাফিক ইউনিট’ নামের একটি গোপন দল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অফিসারদের ছদ্মবেশে নিউইয়র্ক এবং এর আশেপাশের শহরগুলোতে মুসলমান কমিউনিটির লোকজনদের উপর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে নিয়োজিত করে। তাদের কাজ ছিল গোপনে কমিউনিটির মসজিদ, মুসলমান মালিকানাধীন রেষ্টুরেন্ট, গ্রোসারী ষ্টোর, ইন্টারনেট ক্যাফে, ট্রাভেল এজেন্সীগুলোর ছবি তোলা এবং ওই সমস্ত জায়গায় কি ধরনের আলাপচারিতা হচ্ছে, কি ধরনের কার্যক্রম হচ্ছে তার বিষদ বিবরণী দিয়ে দৈনিক রিপোর্ট তৈরি করা। তবে এই কার্যকলাপ নির্দিষ্ট কোন অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি এবং কোন শহরেও সীমাবদ্ধ ছিল না। পুলিশ কর্মকর্তারা সবার অলক্ষ্যে মুসলমান ছাত্রদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত ওয়েবসাইটগুলো মনিটর করেছে।

এছাড়াও কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই মুসলমান ছাত্র এবং প্রফেসরদের নামের তালিকা পুলিশ লিস্টে নথিভুক্ত করেছে। মুসলিম কমিউনিটির কিছু নেতা যারা সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে মেয়র ব্লুমবার্গকে সমর্থন দিয়ে আসছেন, তাদের উপরও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নজর রেখেছিল বলে জানা গেছে। যারা তাদের নাম বদল করে আমেরিকান নাম রেখেছে কিংবা আরবী নাম রেখেছে তাদের সবার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সিটির মসজিদগুলোতে আগত মুসল্লীদের তথ্য এবং তাদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেট এর নাম্বার এমনকি মসজিদেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছবি কিংবা ভিডিও পুলিশ রেকর্ডে রেখেছে। পুলিশ কেন বিভিন্ন মসজিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কিংবা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পরিকল্পনার কথা রেকর্ডে রেখেছে তা সম্পর্কে মেয়র ব্লুমবার্গ বা তার প্রশাসন থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

তারা এটাও ব্যাক্ষা করেনি কেন যে সমস্ত রেষ্টুরেন্টে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা খেতে যায় সেগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে, যারা নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছে তাদের তালিকাভুক্ত করেছে কিংবা শুক্রবার যারা জুম্মা নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে কেন তাদের ছবি তুলেছে বা ভিডিও করেছে। অনেক মুসলমান ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন, এই সমস্ত তথ্য জানার পর তাদের মনে হয়েছে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে তাদের এই ধরণের নজরদারীর সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন্যদিকে, নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বলছে তারা যা করেছে তা আইনসঙ্গত ছিল। অন্যদিকে সিভিল রাইটস্ এর আইনজীবীরা বলছেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রেকর্ড পুলিশ ফাইলে রাখা ন্যায়সঙ্গত নয়। সাধারণ জনগণের ওপর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কিংবা ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট গুলোতে নজরদারি করা কৌশলগতভাবে অন্যায় কিছু নয় কারণ যেখানে সাধারণ জনগণ যেতে পারে সেখানে পুলিশের যাবারও সমান অধিকার আছে।

তবে কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়া পুলিশ নিরীহ সাধারণ নাগরিকের তথ্য রেকর্ড করতে পারে কিনা সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এফবিআই তে এ ধরণের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ। এই সমস্ত প্রশ্নের সদুত্তর নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে এমন আশা করা যাচ্ছে না। ষাট এবং সত্তুরের দশকে ঘটিত যুদ্ধের বিপক্ষে বিক্ষোভকারী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নজরদারী করার অপরাধে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তারই ফলশ্রুতিতে বর্তমান পুলিশের সমস্ত কার্যকলাপ উক্ত মামলার ভিত্তিতে কোর্ট যে অর্ডার করে, সে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।

সিভিল রাইটস্ এর আইনজীবীরা একজন জাজকে অনুরোধ করেছেন পুলিশের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড খতিয়ে দেখতে, কিন্তু এটি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেকের প্রশ্ন, কোন নির্দিষ্ট ধর্ম কিংবা জাতিকে লক্ষ্য করে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো সাম্প্রদায়িক নীতির পরিপন্থি কিনা? এক্ষেত্রে বলা যায়, নির্দিষ্ট কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণকে লক্ষ্য করে কোন ধরনের পুলিশি ক্ষমতা প্রয়োগ করা, ২০০৪ সালের প্রনোদিত নিউইয়র্ক সিটির একটি আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে আইনটি কিছুটা অষ্পষ্ট এই কারণে যে, এতে পুলিশের কোন ধরনের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে তা ব্যাক্ষা করা হয়নি। তাছাড়া এই আইন ভঙ্গ করলে এর শাস্তি কি হবে তাও বলা হয়নি। পুলিশের এহেন গোয়েন্দাগিরির কতটা ন্যায়সঙ্গত ছিল তা নিয়ে অনেক মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গত এক দশক ধরে সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন, ওয়াটার বোর্ডিং (এক ধরনের শাস্তি), গোপন সিআইএ জেল, টেলিফোনে আড়িপাতা কিংবা ড্রোন এ্যাটাক এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফাঁস হয়ে যাওয়া সাধারণ নাগরিকের উপর পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকান্ড এই সবই এক বিশাল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিতর্কটি শুধু বৈধতা নিয়ে নয় বরং আদৌ এগুলো কোন ভাল পন্থা কিনা তা নিয়েও। পুলিশের অযথা নজরদারির কারণে অনেক মুসলমান যারা মসজিদে যান কিংবা কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত নিজেদের সন্দেহভাজনদের একজন বলে মনে করছেন। পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতার স্বীকার নিউজার্সির একটি সিটি ন্যুওয়ার্কের মেয়র কোরি বুকার বলেছেন, তার শহরে মুসলমানরা মসজিদে কিংবা রেষ্টুরেন্টগুলোতে যেতে ভয় পাচ্ছে। কমিউনিটিতে এক ধরনের শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।

এনওয়াইপিডি’র এই প্রোগ্রামটি আরেকটি বিরাট প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্নটি হচ্ছে এটি যদি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান হয়ে থাকে তবে কেন গোটা কমিউনিটিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মুসলমানদের দিকে দৃষ্টিপাত করা হচ্ছে এবং কেন সবার মাঝে এই ধারণার সৃষ্টি করছে যে মুসলমানরা সবাই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। পরিশেষে যে প্রশ্নটি রয়ে যায় সেটি হচ্ছে, কারা এই প্রোগ্রামগুলো পর্যালোচনা করছে? এনওয়াইপিডি বলছে তাদের শক্তিশালী আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা নীতি আছে। ভেটারান আইনজীবীরা এই কেসগুলো রিভিউ করে থাকেন। ডিপার্টমেন্টের বাইরে এই গোয়েন্দা বিভাগ গোপনীয়তার সাথে সকল কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলকে পর্যন্ত এই গোপন প্রোগ্রাম এর ব্যাপারে অবহিত করা হয় না। । ডিপাটমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি যা বছরে কয়েক শত মিলিয়ন ডলার এইওয়াইপিডি’র পেছনে ব্যয় করে এবং কংগ্রেস যা কিনা এই অর্থ অনুমোদন করে থাকে, বলছে তারা জানেনা এই অর্থ কোন খাতে ব্যয় হয় এবং গোয়েন্দা বিভাগ দ্বারা সংগৃহীত তথ্যও তারা পর্যালোচনা করেনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.