বাংলা আমার দেশ
আর্থিক দুর্যোগে সমপ্রতি বিপন্ন আমিরশাহির খুদে দেশ দুবাই মেতে আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বহুতল গড়ার গর্বে। বুর্জ দুবাই। নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংসের দ্বিগুণ উঁচু! তাইওয়ানের ১৬৭১ ফুটের তাইপে ১০১ ছিল এ সময়ের উচ্চতম ভবন। তাকেও খাটো করে দিয়েছে বুজ দুবাই, আরো অন্তত ১০০০ ফুট উঁচুতে মাথা তুলে! মানুষের গড়া সবচেয়ে উঁচু হিসেবে চিহ্নিত আমেরিকার নর্থ ডাকোটার ২০৬৩ ফুট কেভিএলওয়াই টিভি মাস্টটিও হেরে ভূত! নির্দিষ্ট উচ্চতার মাপ রহস্যে ঢেকে রেখে বলা হয়েছে বুর্জ দুবাই-এর উচ্চতা ২৭০০ ফুট ছাড়িয়ে গেছে! মোট ২০৬ তলা। এর মধ্যে ১৬০ তলা ব্যবহারের জন্য।
বাকিগুলি যান্ত্রিক প্রয়োজনে। রঙিন ফোয়ারা, আলো-ধ্বনির সম্মোহন, লেজার বিমের মাতামাতি, নৃত্যগীত, আতশবাজির চমকপ্রদ প্রদর্শনের ভেতর ৪ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় দুবাই শহরতলিতে বুর্জ দুবাইয়ের উদ্বোধন করলেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল মাকটোম। নতুন নামকরণ করলেন বুর্জ খলিফা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এলাহি অনুষ্ঠান। আলো, জল, রং, ধ্বনি সব মিলেমিশে সে এক বিস্ময়।
পৃথিবীর সব থেকে উঁচু চালু ফোয়ারাটিও এখানেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল হাইটেক প্রযুক্তিতে মোড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক একটি পর্বের জন্য এসেছিলেন আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন থেকে বিশেষজ্ঞরা। দুবাই মলের লাগোয়া জলাশয়ের পাড় থেকে হাজার হাজার মানুষ বুর্জ দুবাই-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই বহুতল গড়ার কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে। বুর্জ দুবাই-এর ডেভেলপার এমার প্রপার্টিজ।
স্থপতি আড্রিয়ান স্মিথ। শিকাগোর নির্মাণ সংস্থা স্কিডমোর, ওইংস অ্যান্ড মেরিলের তরফে স্মিথ এই বুর্জ দুবাই টাওয়ারের নকশা করেন। প্রথমদিকে কিছুদিন যৌথভাবে নির্মাণকাজে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সামসুং সংস্থাও। সামসুং গড়েছে তাইওয়ানের তাইপে ১০১ টাওয়ার। বুর্জ দুবাই নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা ছিল ৪১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর সঙ্গে গোটা ডাউন টাউন দুবাই চত্বরটি সাজাতে খরচ হয়েছে ২০০০ কোটি মার্কিন ডলার। বুর্জ দুবাই-এর ১৬০ থেকে ২০৬ তলা যান্ত্রিক ব্যবহারের জন্য। ১৫৬ থেকে ১৫৯ তলা টেলি যোগাযোগ, বেতার, টিভির ব্যবহারের জন্য। ১৫৫ তলাটি যান্ত্রিক ব্যবহারের। ১৩৯ তলা থেকে ১৫৪ তলা কর্পোরেট সংস্থার জন্য।
১২৪ তলা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। ১২২ তলায় মোট অ্যাট মোস্ফিয়ার রেঁস্তোরা। ১১১ থেকে ১২১ তলা কর্পোরেট সংস্থার জন্য। ৭৭ থেকে ১০৮ তলা বিলাসবহুল আবাসন। ৪৪ থেকে ৭২ তলাও আবাসন।
মোট ১০৪৪টি ফ্ল্যাট। ৩৮-৩৯ তলা আর্মানি হোটেল। ৯ থেকে ১৬ তলা আর্মানি হোটেলের আবাসন। ১ থেকে ৮ তলাও আর্মানি হোটেল। গ্রাউন্ড ফ্লোরেও ওই হোটেল।
ভূগর্ভের বি-১, বি-২, তলে পার্কিং। নির্মাণ সংস্থা এমার প্রপার্টিজে সিইও মহম্মদ আলি আকবর জানিয়েছেন, বুর্জ দুবাই-এর প্রায় ৭৫ শতাংশ বুক করা হয়ে গেছে। অফিসের ব্যবহারের জন্য প্রতি বর্গফুট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার মার্কিন ডলারে। আবাসনের জন্য ৩৫০০ ডলারে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দিলীপ দাসানি ফ্ল্যাট নিয়েছেন বুর্জ দুবাইয়ে।
সরাসরি এমার সংস্থা থেকে। প্রতি বর্গফুটে দাম লেগেছে ২৫৬৩ দিরহাম। প্রায় ১০০টি দেশের হাজার বারো কর্মী মিলে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে গড়ে তুলেছেন বুর্জ দুবাই। শ্রমিক দলে ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশীরাই ছিলেন সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শ্রমিক।
এটা নিগ্রহ, ক্রীতদাসের মতো খাটানো হয়েছে তাদের-প্রতিবাদে মুখর বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কিন্তু কে শোনে কার কথা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।