"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
খলীফা মামুনের বিরাট গ্রন্হাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল খারেজমি । ইনিই পৃথিবীতে প্রথম বীজ গণিতের জন্মদাতা । তখনকার যুগে গ্রন্গারিক পদটি পাওয়া খুব কঠিন ছিল কারণ, তাঁকে অত্যন্ত পান্ডিত্য এবং স্বরণশক্তির অধিকারী, চরিত্রবান, মধুরভাষী ও পরিশ্রমী হতে হতো । সেই সময় পৃথিবীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ । তিনি ঐ অভিজ্ঞতা শুধু বই পড়েই অর্জন করেন নি বরং বিশ্বপর্যটনও ছিল তার কারণ ।
তিনি ভারতেও এসেছিলেন বলে অনেকের ধারণা । ভারতের বহু ছাত্রকে তার জ্ঞানাংশ দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিভার বীজ বপন করেন ।
আর এ কথাও অস্বীকার করা যায় না যে, ভারতে সে যুগে যা কিছু গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন তা তিনিও গ্রহণ করেছিলেন । কারণ পর্যটনের উদ্দেশই ছিল জ্ঞান সন্চয় । তিনি ভারতের বিষয় বর্ণনা করে 'কিতাবুল হিন্দ' নামে একটি গ্রন্হ রচনা করেন ।
আরো মনে রাখার কথা, অঙ্ক বিভাগের শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং অপরিসীম । এই শূন্যের [০] জন্মদাতাও তিনি । 'হিসাব আল জাবার ওয়াল মুকাবেলা' গ্রন্হ তাঁর বিরাট অবদান ।
তিনি বিখ্যাত জোর্তিবিদও ছিলেন । খলীফার অনুরোধে তিনি আকাশের একটি মানচিত্র আঁকেন এবং একটি পন্জিকার জন্ম দেন ।
তাকে সরকারি উপাধি দেওয়া হয়েছিল 'সাহিব আলজিজ' বলে । [প্রমাণঃ সমরেন্দ্রনাথ সেনের লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১২৬, ১৩৬৪]
আল মুকাদ্দিস একজন ঐতিহাসিক এবং পর্যটক । তিনি বলেন- আদাদউল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরি করেছিলেন যে অট্টালিকাটির তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিল না । যা দেখলে মূর্খ শিক্ষিত যে কোন জন মুগ্ধ না হয়ে পারত না । ভবনটির ভেতর অগভীর জলের নহর দিয়ে সাজানো ছিল, উপরে ছিল গম্বুজ আর অট্টালিকাটি উদ্যান দিয়ে ঘেরা ছিল, সেই সংলগ্ন একটি হ্রদ ছিল ।
পাঠকদের সুবিধার জন্য কাঠের মাচান বা কাঠের তাক একেবারে নিচে হতে উপর পর্যন্ত সাজানো ছিল, মেঝেতে কার্পেট সদৃশ বিছানা বিছানো থাকত । সেটা ছাড়াও সেখানে আরো গ্রন্হাগার ছিল ।
সবুরের একাডেমি সংলগ্ন গ্রন্হাগারটিতে বই ছিল ১০৪০০ খানি । সবগুলোই হাতে লেখা । বাগদাদে ১০৬৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আরম্ভ হয় আর শেষ হয় ১০৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ।
এটির প্রতিষ্ঠাতা নিজাম-উল-মূলক । তাঁর কিছূ দোষ-ক্রটি যেমন ছিল, গুণও ছিল সাগরের মতো । এখানে ছেলেরা মাসিক বৃত্তি পেত । অধ্যাপকগণ মিম্বারের মতো উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতেন । ছাত্রদের প্রশ্ন করে উত্তর শুনতেন ।
দেশ-বিদেশের ছাত্রদের সংখ্যা এত ছিল যে উচ্চকন্ঠের ঘোষক চিৎকার করে অধ্যাপকদের কথা জানিয়ে দিতেন ।
ঐ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পৃথিবী বিখ্যাত লাইব্রেরিও সগৌরবে শোভিত হচ্ছিল । ১১১৬ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠানের চারদিকে আগুন লেগে যায় । কোনোরকমে গ্রন্হগুলো সরিয়ে ফেলা হয় বটে কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় । ইবনুল জওজী বলেন, তাঁর ক্যাটালগগুলো বড় সুন্দরভাবে সাজানো ছিল, তার মধ্যে একটা ক্যাটালগে বই এর সংখ্যাই ছ'হাজার ।
[প্রমাণঃ Abdus Subbuh: Libraries in the Early Islamic World (Reprinted from Journal of the University of Peshwar No-6. 1958) P.8]
মোঙ্গলনেতা হালাকু খাঁ ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদ আক্রমণ করে নগর ও খলীফার বংশ ধ্বংস করে দেয় । অনেকে মনে করেন হালাকু বুঝি মুসলমান । কিন্তু আসলে তা নয়, বরং তারা নরপিশাচ শ্রেণীর শক্তিশালী লুণ্ঠণকারী এবং তারা জাতিতে ছিল অমুসলমান । ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে বতুতা যখন বাগদাদ পর্যটন করেন সেই সময়টা ছিল হালাকুর আক্রমণের ৭০তম বছর । তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বর্ণনা করে গেছেন ।
৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আফ্রিকার কায়রো বা মিসরে আল-আজহার নামে একটি বিরাট মসজিদ নির্মিত হয় । আল আজিজ তার সঙ্গে একটি একাডেমি তৈরী করেন পরে সেটা উন্নতির শেষ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় । এখনো সেটা বর্তমান । সেই সময় সেই গ্রন্হাগারে গ্রন্হের সংখ্যা ছিল ১৮,০০০ ।
১০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আল হাকিম 'দারুল ইলম ' এর উদ্বোধন করেন ।
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন-হাদীস, ভাষাতত্ত্ব, জোর্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ ও চিকিৎসা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্হা ছিল । প্রতি মাসে বেশ কয়েকবার বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হতো ।
অষ্টম শতকে খলীফা হারুণের সময় বাগদাদ, সিরিয়ায় দামেস্ক, ত্রিপলি ও হামায় কাগজের কল স্হাপিত হয় । অতএব এ কথা অত্যন্ত সত্য, মুদ্রণ যন্ত্রের আবিস্কারের আগে কাগজকল সাহিত্যিক তৎপরতায় নতুন যুগের দ্বারোদঘাটন করে ।
মিসরের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আরো যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল, তার সবগুলো মুসলিম সভ্যতার সাক্ষ্য দেয় ।
যেমন - কর্ডোভা, গ্রানাডা, টলেডো, মার্সিয়া, আলমেরিয়া, সেভিল, ভ্যালেনসিয়া, কাদজে বিশ্ববিদ্যালয় । যেমন, মিঃ নিকলসন বলেছেন, মুসলমানদের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যলয় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি এমনকি জার্মানির জ্ঞান সাধকদের চুম্বকের মতো টেনে আনত । [দ্রঃ Nicholson এর লেখা History of Arabs পুস্তকের ৮১১ পৃষ্ঠা, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণ, ১৯৬২]
আগেই জানানো হয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা হচ্ছে যে, 'বিদ্যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য । ' মুসলিম বলতে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই বোঝায় । সুতরাং হযরত (সাঃ) এর সময়ে মহিলাগণও কবিতা, কাব্য সাহিত্য এবং কুরআন-হাদীসে যে পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন সে কথা অনেকের জানা আছে ।
যেমন, মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী মা আয়েশা (রাঃ) একজন উচ্চস্তরের হাদীসবিদ ও বিদুষী ছিলেন ।
স্পেন দেশে যখন ইসলামী সভ্যতা পৌছল তখন শুধু পুরুষরাই জ্ঞান চর্চায় এগিয়ে এসেছিলেন তা নয়, বরং মেয়েরাও অনগ্রসর ছিলেন না । যেমন, বিখ্যাত মহিলা লাবানা, ফাতিমা, রাজিয়া, খাদিজা, আয়েশা প্রভৃতি । কেউ যেন মনে না করেন হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী-কন্যা তাঁরা । তাদের নামগুলোর সাথে নবী সাহেবের পরিবারের নামের মিল আছে মাত্র ।
এর থেকে তাদের মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবারের প্রতি ভক্তি বোঝা যায় । এমনিভাবে 'বাদেয়া' নামে এক সুপন্ডিত মহিলা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন । যেহেতু তখন বই ছাপার প্রেস ছিল না তাই হাতে লেখার ওপর নির্ভর করতে হতো জ্ঞান অনুসন্ধানকারীদের । তাই জ্ঞানী পুরুষদের বাড়ির মেয়েরা - স্ত্রী কন্যা - বোনেরা সেই কাজে সহযোগিতা করতেন । অতএব লেখায় আরো হাত পাকত, তাছাড়া যে তথ্য কেউ নিজে হাতে লেখে বা কপি করে অবশ্যই সেটা তার একবার নয় একাধিকবার পড়ার সমতুল্য হয়ে যায় ।
(চলবে )
সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমাদ মোর্তজা , মদীনা পাবলিকেশন্স ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।