আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতবর্ষে মুসলমানদের চেপে রাখা ইতিহাস !! - ২ --সভ্যতা ও বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
আর্যদের বর্হিভারত থেকে আগমণের তথ্যঃ "আর্যদের সম্বন্ধে ব্যাবিলনীয় ও এশিয়া-মাইনরের প্রাচীন ভাষায় লেখা যেসব বিবরণ পাওয়া গেছে তাই এ বিষয়ে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উল্লেখ । এই উল্লেখ হতে অনুমান হয় যে উত্তর হতে ককেশাস পর্বত পার হয়ে, অথবা উত্তর-গ্রিসে মেসিডন ও থ্রেস প্রদেশ হয়ে, কৃষ্ঞসাগরের দক্ষিণে উত্তর এশিয়া-মাইনরের পথ ধরে মেসোপটেমিয়া ও এশিয়া মাইনর অন্চলে আর্যদের আগমণ ঘটে । " [বিনয়ঘোষ, ভারতজনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা-৭০] "কেউ কেউ মধ্য এশিয়ার বদলে পূর্ব ইউরোপকে আর্যদের আদি বাসকেন্দ্র বলেন । " [দ্রষ্টব্য ঐ লেখকের ঐ গ্রন্হ ] আর্য এবং মুসলমান জাতি যাঁরা নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষায় ভারতে এসেছেন, এখানে বাস করছেন, উন্নতি অবনতির শেষ ফল অর্থাৎ স্হাবর-অস্হাবর, সম্পদ-সম্পত্তি, সন্তান-সন্ততি ভারতেই রেখে শ্মশান কিংবা কবরের মাটিতে নিজেদের মিশিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরাই স্বদেশী । আর ইংরেজ, তাঁরাও এসেছিলেন ভাগ্য পরীক্ষা করতেই ।

তারা বণিকের বেশে তুলদন্ড রাজদন্ডে পরিণত করে ভারত দখল করে ভারতের সম্পদ, শস্য , অর্থ যতটা সম্ভব নিংরে নিয়ে চলে গেছেন নিজের দেশে । তারা ব্রিটেনকে করেছেন অধিকতর সমৃদ্ধশালী । অতএব তারা বিদেশী হলেও কোনক্রমেই মুসলমান ও আর্যজাতি বিদেশী নয় । ইসলাম সম্পর্কে মনীষীদের মতামতঃ ভারত তথা পৃথিবী খ্যাতনামা মনীষীরা ইসলাম সম্বন্ধে সু-ধারণা পোষণ করতেন । এখানে অল্প কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলোঃ ১. "প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা' দিল আলো ও স্বাস্তি ।

ইসলাম একটি মিথ্যা ধর্ম নয় । শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুরা অধ্যয়ন করুক তাহলে আমার মতোই তারা একে ভালোবাসবে " মাহাত্না গান্ধী । ২. শ্রী জওহরলাল নেহেরু বলেন- " হযরত মুহাম্মদের প্রচারিত ধর্ম, এর সততা, সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্হা, সমতা ও ন্যায়নীতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের লোকদের অনুপ্রাণিত করে । কারণ , ঐ সমস্ত রাজ্যের জনসাধারণ দীর্ঘদিন যাবৎ একদিকে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল; অপরদিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত - নিস্পেষিত হচ্ছিল পোপদের হাতে । ...তাদের কাছে এ [ইসলাম] নতুন ব্যবস্হা ছিল মুক্তির দিশারী ।

" ৩. মি. জি.সি ওয়েলস বলেছেন- 'আরবদের ভেতর দিয়েই মানব জগৎ তার আলোক ও শক্তি সন্চয় করেছে । ...ল্যাটিন জাতির ভেতর দিয়ে নয় । ' ৪. মেজর আর্থার গ্লিন লিরওয়ার্ড বলেন- ' আরববাসীদের উচ্চশিক্ষা সভ্যতা ও মানসিক উৎকর্ষ এবং তাদের উচ্চশিক্ষার প্রণালি প্রবর্তিত না হলে ইউরোপ অদ্যাবধি অজ্ঞনতার অন্ধকারে নিমগ্ন থাকতো । বিজেতার ওপর সদ্ব্যবহার ও উদারতা তারা যে প্রকার প্রদর্শণ করেছিলেন তা প্রকৃতই চিত্তাকর্ষক । " ৫. পরিব্রাজক ব্যারিষ্টার চন্দ্রশেখর সেন লিখেছেন- "কেবল মাত্র ষোল বছরের বালক হযরত আলীকে ও বিবি খাদীজাকে সাথে করে যিনি সংসারে সনাতন ধর্মপ্রচার করতে সাহসী ও প্রবৃত্ত হন এবং সে প্রচারের ফলে সহস্রাধিকবর্ষ পৃথিবীর অর্ধেক স্হান ব্যাপিয়া এ ধর্ম চলছে, তিনি ও তার সে ধর্ম যে বিধাতা প্রেরিত তাতে তিলমাত্র সন্দেহ নেই ।

" [ ভূ-প্রদক্ষিণ ,- ৫২৫ পৃষ্ঠা] ৬. আচার্য প্রফুল্ল রায় বলেন- "জগতের বুকে ইসলাম সর্বোৎকৃষ্ট গণতন্ত্রমূলক ধর্ম । প্রশান্ত মহাসাগর হতে আরম্ভ করে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবমন্ডলীকে উদারনীতির একসূত্রে আবদ্ধ করে ইসলাম পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে " ৭. ডক্টর তেজ বাহাদুর সাপ্রু বলেন- "হিন্দুদিগকে রক্ষা করিবার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মের কতিপয় মূলনীতি - আল্লাহর একত্ববাদ ও মানবের বিশ্বজনীননত্ব । " মুসলিম জাতির মূল্যায়নঃ ভারতের হিন্দু-মুসলমান জাতি একসূত্রে বাঁধা । যদিও ধর্ম পৃথক তবুও মিলনমৈত্রী, দেশের সু-গঠন, সংরক্ষণ বা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই দুই সম্প্রদায় মস্তক ও দেহের মতো সংযুক্ত । হিন্দু জাতির পাশে মুসলমানদের চিন্তা করতে যে উপকরণ ও বৈশিষ্ট্য মেলে, অন্য ক্ষেত্রে তা মেলে না ।

আমরা জানি ইংরেজ শাসকগণ বিদেশী, কারণ তারা এদেশকে নিজের দেশ বলে মনে করতে পারেন নি । তারা শাসনের নামে শোষণ করে ভারতীয় সম্পদ নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে স্বদেশকে সমৃদ্ধশালী করেছে । আর বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আলমগীর, শেরশাহ এরা ভারতকে স্বদেশ প্রমাণ করেছেন - অন্য কোন দেশে ভারতের ধনরত্ন নিয়ে যাননি । মুসলমান জাতি সাতশ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে ভারতে প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন । মুসলমান জাতি ছাড়া ভারতে আর কোন সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় এই উন্নতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন নি ।

যদি শক্তিশালী ইংরেজকেও তুলনার জন্য টেনে আনা হয় তাহলেও দেখা যাবে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তারা শাসন চালাতে পেরেছেন, অর্থাৎ ২০০ বছরেরও কম । স্বামী বিবেকানন্দের লেখা 'প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য' পুস্তকের ১১৫ পৃষ্ঠা থেকে তুলে ধরছি- " ইউরোপের উদ্দেশ্য - সকলকে নাশ করে আমরা বেচে থাকব, আর্যদের উদ্দেশ্য সকলকে আমরা সমান করব । ...ইউরোপের সভ্যতার উপায় তলোয়ার; আর্যদের উপায় - শিক্ষা সভ্যতার তারতম্যে, সভ্যতা শেখবার সোপান - বর্ণবিভাগ । ইউরোপে বলবানের জয়, দুর্বলের মৃত্যু । " স্বামী বিবেকানন্দ আরো বলেন , " দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে ।

সেসব জাত সেথায় বর্তমান । তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান । " [দ্রঃ ঐ, পৃষ্ঠা-১১৮] স্বামীজির কথার সত্যতা চিন্তা করলেই দেখা যাবে হাজার হাজার বছর ধরে মুসলমানদের প্রশাসন চললেও ভারতের কোন জাতি ও ধর্মকে তাঁরা শেষ করে দেন নি । যদি ঐ মতলব তাঁদের থাকতো তাহলে ভারতে একটিও অমুসলমান থাকার কথা নয় । ভারতের শুধু সংখ্যালঘু জাতিই নয়, যেকোন জাতির সঙ্গে মুসলমানদের তুলনা করলে দেখা যাবে তাঁরা শুধু ভারতীয় জাতি-ই নয় বরং বিশ্ব বা জাগতিক জাতি ।

কারণ ভারতের সমস্ত মুসলমান যদি কোনভাবে শেষ হয়েও যায় তবু এই পৃথিবীতে এই জাতি ও ধর্মের বিলুপ্তি ঘটবে না । কারণ, আরব, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়শিয়া ও উগান্ডার মতো গন্ডা গন্ডা দেশ আছে যেখানে মুসলমান সংখ্যাধিক্য । সভ্যতা ও বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানঃ মুসলমান সভ্যতা বিশ্বের উন্নতির সর্ব বিভাগে এমন সৃজনশীলতা ও আবিস্কারের জনক হয়ে আছে যা ঐতিহাসিক সত্য । বিজ্ঞান বিভাগে দৃষ্টি দিলেই দেখা যায়, রসায়ন বা কেমিষ্ট্রির জন্মদাতা মুসলমান । রসায়নের ইতিহাসে জাবিরের নাম সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ।

তাছাড়া ছোটখাট জিনিস ধরলে তো ফিরিশ্তি অনেক লম্বা হয়ে যাবে । বন্দুক, বারুদ, কামান, প্রস্তর নিক্ষেপ যন্ত্রের আবিস্কারেও তাদের অবদান । ভূগোলেও মুসলমানদের অবদান এত বেশি যা জানলে অবাক হতে হয় । ৬৯ মুসলিম ভুগোলবিদ পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র একেছিলেন তা আজও বিশ্বের বিস্ময় । তার আরবী নাম হচ্ছে 'সূরাতুল আরদ' , যার অর্থ হচ্ছে বিশ্বের আকৃতি ।

জনাব ইবনে ইউনূছের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা মন্ডল নিয়ে গবেষণার ফল ইউরোপ মাথা পেতে নিয়েছিল । জনাব ফারগানি, জনাব বাত্তানি ও আল-খেরজেমি প্রমুখের ভৈাগলিক অবদান স্বর্ণমন্ডিত বলা যায় । কম্পাস যন্ত্রের আবিস্কারকও মুসলমান । তার নাম ইবনে আহমাদ । বিজ্ঞানের উপর যেসব মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্হ পাওয়া যায় আজও যা বিজ্ঞান জগতের পুজিঁর মতো ব্যবহৃত হচ্ছে ।

২৭৫টি গবেষণামূলক পুস্তক যিনি একাই লিখেছেন তিনি হচ্ছেন জনাব আলকিন্দি । প্রাচীন বিজ্ঞানী জনাব হাসান, জনাব আহমাদ ও মুহাম্মাদ সম্মিলিতভাবে ৮৬০ সালে বিজ্ঞানের একশ রকমের যন্ত্র তৈরীর নিয়ম ও ব্যবহার প্রণালি এবং তার প্রয়োজন নিয়ে গ্রন্হ রচনা করে গেছেন । মুসলমানরাই পৃথিবীতে প্রথম চিনি তৈরী করেন । ভূতত্ব সম্বন্ধে বিখ্যাত গ্রন্হ 'মুজাম আল-উবাদা'র লেখক হচ্ছেন ইয়াকুব ইবনে আবদুল্লাহ । ৭০২ খ্রিষ্টাব্দে তুলো থেকে তুলট কাগজ প্রথম সৃষ্টি করেন ইউসুফ ইবনে উমার ।

তার দু'বছর পর বাগদাদে কাগজের কারখানা তৈরী হয় । জাবীর ইবনে হাইয়ান - ইস্পাত তৈরী, ধাতুর শোধন, তরল বাস্পীকরণ, কাপড় ও চামড়া রঙ করা, ওয়াটার প্রুফ তৈরী করা, লোহার মরিচা প্রতিরোধক বার্নিস, চুলের কলপ ও লেখার পাকা কালি কলম সৃষ্টিতে অমর হয়ে রয়েছেন । ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড থেকে কাচ তৈরীর প্রথম চিন্তাবিদ মুসলিম বিজ্ঞানী আররাজীও অমর হয়ে আছেন । ইংরেজদের ইংরেজী শব্দে ঐ বিজ্ঞানীর নাম Razes লেখা আছে । একদিকে তিনি ধর্মীয় পন্ডিত অপরদিকে গণিতজ্ঞ ও চিকিৎসা বিশারদ ছিলেন ।

সোহাগা, লবণ, পারদ, গন্ধক, আর্সেনিক ও সালমিয়াক নিয়ে তার লেখা ও গবেষণা উল্লেখযোগ্য । আরা মজার কথা , পৃথিবীতে প্রথম জল জমিয়ে বরফ তৈরী করাও তার অক্ষয় কীর্তি । ইউরোপ পরে নিজের দেশে বরফ প্রস্তুত কারখানা চালু করে । (চলবে ) সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমদ মোর্তজা, মদীনা পাবলিকেশন্স ।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.