আমার ভিতর তুমি থাকো আমি কোথায় রই, আমি না থাকিলে তোমার থাকার জায়গা কই?
ইতিহাসের অন্তরালে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। অনেক দেশ-জাতি-ধর্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরনের অভাবে সঠিকভাবে পাওয়া যায়না। আবার কখনো এমনও দেখা যায় যে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থে আঘাত হেতু উদ্দেশ্যমুলকভাবে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তবুও উতিহাস কথা কয়।
আর এমনি একটি সত্য বেশ কিছুদিন জানতে পেরেছি লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকাটি পড়ে।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে, একসময় অর্ধবিশ্ব জুড়ে মুসলিম শাসন বিস্তৃত ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে কোনো একসময় মুসলিম শাসন বলবৎ ছিল তা কি আমরা কেউ কখনো শুনেছি! আধুনা 758 থেকে 796 (খৃঃ) সময়কালে ইংল্যান্ডে মুসলিম শাসনের স্বপ ে সাপ্তাহিক সুমরা যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা থেকে দেখা যায়, বৃটিশ মিউজিয়ামের এনশিয়েন্ট গ্যালারিতে রতি মুদ্রাগুলির মধ্যে রাজা ওফারেক্সের শাসনামলের প্রথম দিকের সময়কার মুদ্রার এক পিঠে রাজার ছবি এবং অপরদিকে কালেমা শাহাদাৎ লেখা আছে। ঐ সময়েই পরের মুদ্রাগুলিতে দেখা যায়, মুদ্রার একপিঠে রাজার ছবি বাদ দিয়ে শুধু কালেমা শাহাদাৎ লেখা আছে। তাছাড়া মুদ্রাগুলোর নাম 'দিনার' লিখিত আছে।
উপরোক্ত তথ্য থেকে আমরা তিনটি পয়েন্টে অনুসন্ধিৎসু বিশলেষন দ্বারা মুসলিম শাসনের স্বপ ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারি।
প্রথমতঃ রাজার নাম হচ্ছে 'ওফারেক্স'। শব্দটির 'ওফা' (যার অর্থ অনুগত্যকারী) আরবী শব্দ থেকে এসেছে এবং রেক্স ইংরেজী শব্দ। সুতরাং এখানে আমরা আরবী অথর্াৎ মুসলীম সংস্কৃতি ও ইংরেজী অর্থাৎ দেশী সংস্কৃতির একটি মিশ্রন ল্য করছি। বর্তমানেও আমরা অনেক মুসলমানের নামে আরবী শব্দ ও তার নিজ দেশী শব্দের সংমিশ্রনে মিশ্রিত নাম দেখতে পাই।
যেমন-নাজিমুদ্দিন এরবাকান (তুরস্ক), সেলিম খান ইয়ান্দারভায়েব (চেচনিয়া), মুহাম্মদ আলী কে (আমেরিকা) ইত্যাদি। এ নামগুলোতে নাজিমুদ্দিন, সেলিম, মুহাম্মদ আলী মুসলিম সংস্কৃতির এবং এরবাকান, ইয়ান্দারভায়েব, কে দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। অবএব রাজার ওফারেক্স নাম থেকে আমদের এ ধারনা কার যৌক্তিক হবে না যে উনি কিংবা উনার পূর্বর্ পুরুষ অমুসলীম ছিলেন এবং পরে মুসলমান হয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ মুদ্রার পিঠে কালেমা শাহাদাৎ লেখা আছে যা ইসলামের একটি মুলমন্ত্র। কোনো অমুসলিম শাসকের শাসনামলে তো মুদ্রার পিঠে কালেমা শাহাদাৎ লিখার প্রশ্নই উঠেনা।
এ কালেমা মুসলমানদের ঈমানী জজবারই বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং এ থেকে আমরা আশ্বস্থ হতে পারি যে, তখনকার সময়ের শাসক মুসলিম ছিলেন এবং ঐ সময়ে মুসলিম শাসন চলছিল।
তৃতীয়তঃ মুদ্রাগুলোর নাম লেখা আছে 'দিনার' যা মুসলিম সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, দিনার সব সময় মুসলিম রাষ্ট্রের মুদ্রার নাম হিসাবেই ব্যবহূত হয়ে আসছে। বর্তমানেও অনেক মুসলিম রাষ্ট্র যেমন কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, তিউনিশিয়া প্রভৃতি দেশের মুদ্রার নাম দিনার।
তাই দিনার নাম থেকেও আমরা তৎকালীন ইংল্যান্ডে মুসলিম শাসনের ইঙ্গিত পাই।
আরেকটি ব্যাপার যথেষ্ট কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের দিকে ল্য করলে দেখা যায়, রাজা ওফারেক্সের শাসনামলের কোনো বর্ণনা দেয়া হয়নি। যদিও অন্যান্য রাজাদের শাসনামলের বর্ণনা রয়েছে। শুধু বলা হয়েছে, 758 থেকে 796 পর্যন্ত রাজা ওফারেক্স ইংল্যান্ডে রাজা ছিলেন।
তাই এখানে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থাকে যে, কোনো অদৃশ্য কারনে ইংল্যান্ডের ইতিহাসবিদরা রাজা ওফারেক্সের শাসনামলের বর্ণনা দেননি। তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ইংল্যান্ডে মুসলীম শাসনের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্যই এটি করা হয়েছে। যাই হোক ইতিহাস বলে কথা। একদিন অজানা অতীত কথা বলবেই। আমরা আশা করবো, মুসলীম ইতিহাসবিদরা এ ব্যপারে উদ্যোগী হবেন এবং বর্তমান বৃটিশ সরকার রাজা ওফারেক্সের প্রকৃত ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন।
বিঃদ্রঃ লন্ডনে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের প্রতি অনুরোধ রইলো আপনারা বৃটিশ মিউজিয়ামের এনশিয়েন্ট গ্যালারিতে রতি মুদ্রাগুলো একবার দেখে আসবেন এবং এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য এখানে তুলে ধরবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।