আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমারের মূল্যে বাংলাদেশের অর্জন

Click This Link সমুদ্রসীমা নিয়ে জাতিসংঘের আদালতের রায়ে বাংলাদেশের অর্জন হয়েছে। অন্যদিকে হেরে মূল্য দিচ্ছে মিয়ানমার। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডারের মালিকানা হারালো মিয়ানমার। গতকাল মিয়ানমারের অনলাইন দ্য ইরাবতীতে প্রকাশিত ‘সি ট্রাইব্যুনাল রুলিং: বাংলাদেশজ গেইন, বার্মাস পেয়িং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে একথা লিখেছেন উইলিয়াম বুট। এতে বলা হয়, ২০০৮ সালে মিয়ানমারের তেল ও গ্যাস এন্টারপ্রাইজ (এমওজিই) চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি কোম্পানিকে ওই সমুদ্রসীমায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য লাইসেন্স দিয়েছিল।

এখন মিয়ানমারকে ওই লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। কারণ, ওই সীমানায় যে তেল-গ্যাস আছে তার মালিকানা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অর্থ হলো, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো ফিলিপস ও দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন আর বৈধভাবে গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারবে না। এই দ্বীপটি কক্সবাজার থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নৌবাহিনীর মধ্যে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তার কেন্দ্রে ছিল দাইয়ু।

এই আপত্তি শেষ পর্যন্ত যায় জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল’ অব দ্য সি (আইটিএলওএস)-এ। মিয়ানমারের নৌবাহিনীর প্রহরায় দক্ষিণ কোরিয়া ব্লক এডি-৭ এলাকায় ড্রিলিং কাজ শুরু করে। ওই এলাকাটি চিহ্নিত করেছিল এমওজিই। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের সেই কাজকে চ্যালেঞ্জ করার পর মিয়ানমার তার সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, সেন্টমার্টিনে বসবাস করে বেশ কিছু জেলে পরিবার।

এটি কার অধীনে তা নিয়ে কখনও কোন সন্দেহ দেখা দেয়নি। এর মালিক বাংলাদেশ। কিন্তু এর আশপাশের সমুদ্রসীমা কার কতটুকু তা নিয়ে দীর্ঘদিন দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা রয়েছে। গত ১৪ই মার্চ আইটিএলওএস যে রায় দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা এই দ্বীপ থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত করা হয়েছে। এটি এবং অন্যান্য রায় বলে যে, বাংলাদেশের আগে যে সমুদ্রসীমা ছিল তার চেয়ে অতিরিক্ত ৪০০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা তারা পেয়েছে।

দ্য ইরাবতী পত্রিকাকে গত ১৭ই মার্চ ব্যাংককের জ্বালানি কারখানা বিষয়ক পরামর্শক কলিন রেনল্ড বলেন, জাতিসংঘের আদালত বলেছে তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- বাংলাদেশ প্রচুর গ্যাসের মজুত সম্পন্ন এলাকার অধিকারী হলো। মিয়ানমারের জ্বালানি বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দাইয়ু এবং কোরিয়ান অপারেটর কোগাসকে অনুসন্ধানের লাইসেন্স দিয়েছিল। এ কাজ করতে অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানকেও তারা অনুমতি দিয়েছিল। আদালত যে এলাকা এখন বর্ধিত করেছে ওই এলাকায় বাংলাদেশ অনুসন্ধানের জন্য কনোকো ফিলিপসকে লাইসেন্স দিয়েছে আগেই।

এই রায়ে কি অর্জিত হবে- তা হলো এই দু’টি দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা। কারণ, ওই রায়ের পর এখন বড় বড় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারীরা নতুন অনুসন্ধান লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে কোন দ্বিধা করবে না। এর আগে সীমানাগত সমস্যার কারণে অনেক ভাল ভাল বিনিয়োগকারী ফিরে গেছেন। এই রায়ের ফলে মিয়ানমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারে। এর কারণ, এই রায় এবং দেশের ভিতরে রাজনৈতিক সংস্কার এই দু’টি বিষয় বিদেশী বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করতে পারবে মিয়ানমার।

অধিক হারে বিনিয়োগকারীরা বঙ্গোপসাগরে তাদের সীমানায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাবেন। নতুন আন্তর্জাতিক সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে মিয়ানমারের শয়ে ফিল্ড। এর কতগুলো ব্লকে এখনও অনুসন্ধান করা হয়নি। শয়ে ব্লকের মাত্র দু’টি ব্লকে অনুসন্ধান কাজ করেছে দাইয়ু ও ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দু’টি প্রতিষ্ঠান- গেইল লিমিটেড ও অনজিসি বিদেশ। তারা নিশ্চিত করেছেন, ওই গ্যাসক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি ঘনমিটার গ্যাস মজুত আছে।

এই গ্যাসের বেশির ভাগই পাইপলাইন দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে চীনে। এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সাবেক সামরিক জান্তা সরকার চুক্তি করে গেছে। কিন্তু সেই চুক্তিতে কি আছে বা তাতে মিয়ানমারের লাভ কি তা কেউ জানতে পারেনি। ওই পাইপলাইন এখনও নির্মাণ করা হচ্ছে। ওদিকে গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এমপিআরএল ঘোষণা দিয়েছে- তারা বঙ্গোপসাগরে শয়ে ফিল্ডের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এ-৬ ব্লকে ড্রিলিং শুরু করেছে।

এমপিআরএল বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বেকার হাগস সল্যুশন ইনকরপোরেশন, এমওজিই। জ্বালানি বিষয়ক ম্যাগাজিন প্লেটস বলেছে, জাতিসংঘের আদালতের রায় অনুযায়ী এখন কনোকো ফিলিপসকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের আশপাশে বর্ধিত সীমানায় কাজ দেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। এপ্রিলে লাইসেন্স নবায়নের সময় তাদেরকে নতুন করে পাওয়া গভীর সমুদ্রসীমায় দু’টি বা তিনটি সাইটে কাজ দেয়া হতে পারে। প্লেটস ম্যাগাজিনকে উদ্ধৃত করে ইরাবতী লিখেছে, বাংলাদেশের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, কনোকো ফিলিপস যে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান করবে তা রপ্তানি করা হবে না।

বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি উৎস গ্যাস। কিন্তু এই গ্যাসের সীমিত আকারের সরবরাহের জন্য মারাত্মক বিদ্যুৎ সঙ্কটে ভুগছে বাংলাদেশ। এর ফলে এদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে। মিয়ানমারে প্রচুর জ্বালানি উৎস থাকা সত্ত্বেও একইভাবে বিদ্যুতের খুব সঙ্কট রয়েছে। রেডিও মিয়ানমার গত সপ্তাহে বলেছে, মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের আদালতের রায় মেনে নিয়েছে।

কিন্তু এ নিয়ে তারা নীরব। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরব হয়েছে। তারা একে বড় ধরনের অর্জন হিসেবে দেখছে। জাতিসংঘের সমুদ্রসীমা বিষয়ক আদালত যে রায় দিয়েছে তা মেনে চলতে বাধ্য দুই দেশই। এ আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল করার সুযোগ নেই।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী করনেলিয়া পিপার এই আদালতের আয়োজক। তিনি বলেছেন, আমরা মনে করি এই রায় সন্তুষ্ট হওয়ার মতো। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কে টান টান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে তারা সবাই আইনগত বৈধতা পেলো। মিয়ানমার বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকটা ছাড় দিচ্ছে- এমন খবর যখন পাওয়া যাচ্ছে তখনই সমুদ্রসীমা নিয়ে ওই চূড়ান্ত রায় দেয়া হলো।

যদি মিয়ানমারে ওই বিনিয়োগের খবর সত্য হয় তাহলে তারা সমুদ্রসীমায় তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজে বিদেশী প্রচুর বিনিয়োগকারী পাবেন। এই মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারের পার্লামেন্টে নতুন বিদেশী বিনিয়োগ বিষয়ক একটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে- তাতে বিদেশী কোম্পানিকে শতকরা ১০০ ভাগ মালিকানার অনুমতি দেয়া হবে। তারা ৫ বছরের জন্য আয়কর মুক্তির সুবিধাও পাবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.