ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না চীন সরকার প্রতি বছর বাংলাদেশি ছাত্রদেরকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট, পিএইচডি, পোস্ট পিএইচডি, চাইনিজ ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রামের আওতায় স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশস্হ চাইনিজ দূতাবাসের কালচারাল শাখা এই দায়িত্ব পালন করে। চীনে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য কয়েক উপায়ে আবেদন করা যায়-
১। ক. বাংলাদেশস্হ চাইনিজ দূতাবাসের মাধ্যমে
ঢাকাস্থ চীনা অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে ২০১২ সালে চীনের বৃত্তি পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ ভাষা শেখায় তাদের মাধ্যমে আবেদন করা। এটা সবচেয়ে সুবিধাজনক।
এক্ষেত্রে চীনে আসা-যাওয়ার খরচসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে অবস্থানরত চাইনিজ টিচাররা রিকমেনডেশন করে, কাগজপত্রের কোনো ঝামেলা নাই। কারণ আপনি যেখানে পড়বেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ইনভাইটেশন লেটার নিতে হবে না। এটা পজিটিভ পয়েন্ট। বাংলাদেশস্হ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ শিক্ষকরা কাগজপত্র প্রস্তুত করতে সাহায়তা করায় বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত বলা যায়।
তবে সমস্যা একটাই উনারা চাইনিজ ভাষার ওপর একটা পরীক্ষা নেন তাতে যারা ভাল করে শুধু তাদের জন্য রিকমেনডেশন করে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটে চায়নিজ টিচারদের সাথে যোগাযোগ করে ইনভাইটেশন লেটার সংগ্রহ করা অনেক কষ্টসাধ্য।
বৃত্তিগুলো চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (CSC) এর অধীনে দেত্তয়া হয়। চীনের এডুকেশন মিনিস্ট্রি সুপারিশ করে এদের জন্য। তাই বৃত্তি পাওয়া নিয়ে কোনো টেনশন করতে হয় না।
আর বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের রিসিভ করার জন্য এয়ারপোর্টসহ সব জায়গায় চাইনিজ গভর্নমেন্টের লোক থাকে, যেমন-কুনমিং এয়ারপোর্ট, বেইজিং এয়ারপোর্ট। তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যায় বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে বেইজিং ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচারাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওখানে অবস্হান শেষে সংশ্লিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য ট্রেনে উঠিয়ে দেয়। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি এসে নিয়ে যায়। বিদেশি শিক্ষর্তীদের জন্য এটা এক আলিশান ব্যবস্হা, যেন রাজকীয় অতিথি।
এছাড়াও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের অধীন বৃত্তির জন্যও আবেদন করা যায় শুধুমাত্র চাইনিজ ভাষা শিক্ষার জন্য। তবে এতে একটাই সমস্যা-- যাতায়াত খরচসহ সংশ্লিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছা নিজ দায়িত্বে।
খ. বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে
উনারাও কাগজপত্র বাংলাদেশস্হ চাইনিজ দূতাবাসে প্রেরণ করেন। তবে এই মাধ্যমে কাগজপত্রের বহু ঝামেলা পোহাতে হয়।
চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (CSC) এর অধীন বৃত্তির আত্ততায় সবকিছু ফ্রি [টিউশন, ডরমিটরি, এডুকেশন ম্যাটেরিয়াল, ল্যাব খরচ, হেল্থ ইন্সুরেন্স] আর লিভিং অ্যালাউয়েন্স হিসেবে প্রতি মাসে-
(১) অনার্স - ১৪০০ ইউয়ান
(২) মাস্টার্স - ১৭০০ ইউয়ান
(৩) পি এইচ ডি - ২০০০ ইউয়ান
পি এইচ ডি, মাস্টার্স ছাত্ররা স্পাউস ভিসার অধীনে ফ্যামিলি নিয়ে আসতে পারেন কিন্তু অনার্স ছাত্ররা পারে না।
এই বছর বাংলাদেশস্হ চাইনিজ দূতাবাসের মাধ্যমে ৩৭ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৪৫ জনকে।
বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ ভাষা শেখানো হয় সেগুলো হচ্ছে
(১) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাবি
(২) কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, এন এস ইউ
(৩) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
(৪) সিআরআই কনফুসিয়াস ক্লাসরুম, শান্তা মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়
২। সরাসরি চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (CSC), বেইজিং অফিসে আবেদন করা যায়। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ইনভাইটেশন লেটার নিতে হবে।
এক্ষেত্রে অবশ্য আগে থেকে চাইনিজ ভাষা জানার প্রয়োজন নেই। বর্তমানে যারা চীনে পড়ছেন তারা খুব সহজে তাদের স্বামী বা স্ত্রীর জন্য ইনভাইটেশন লেটার সংগ্রহ করতে পারেন।
সুযোগ সুবিধা উপরের উল্লেখিত ধারায় তবে এক্ষেত্রে যাতায়াত খরচসহ সংশ্লিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছা নিজ দায়িত্বে ।
৩। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়।
এক্ষেত্রেও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ইনভাইটেশন লেটার নিতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য আগে থেকে চাইনিজ ভাষা জানার প্রয়োজন নেই।
তবে এরা অনেক সময় ফুল স্কলারশিপ দেয় আবার অনেক সময় আংশিক। যেমন লিভিং এ্যালাউয়েন্স দেয় কিন্তু ডরমিটরিতে থাকার জন্য নিজেকে খরচ বহন করতে হয়, এটা একটা বড় সমস্যা। কেননা ডরমিটরি ফি অনেক, যেমন কোথাও কোথাও ৬০০ ইউয়ান।
এডুকেশন ম্যাটেরিয়াল [ল্যাব খরচসহ] নিজেকে কিনতে হয় এবং যাতায়াত খরচসহ সংশ্লিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাও নিজ দায়িত্বে। এছাড়াও হেলথ্ ইন্সুরেন্স খরচ নিজের।
বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ ভাষা শেখায় সেগুলোতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা কমপক্ষে এইচএসসি পাশ। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাবি তে ভর্তি হতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় কিন্তু অন্য ৩টা তে দিতে হয় না। সরাসরি ভর্তি হওয়া যায়।
কারণ ঢাবি তে খরচ কম, ১ বছরের জুনিয়র কোর্স করতে সব মিলিয়ে ৩০০০ টাকা তাই ওখানে ছাত্রদের চাপ বেশি।
দেশের যে কোন পাবলিক, বেসরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স (সম্মান) করে আসলে এখানে মাস্টার্স করা যায়। কিন্তু ডিগ্রি [অনার্স (পাস)] করে আসলে এখানে মাস্টার্স করা যায় না। পুনরায় অনার্স করতে হয় । চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (CSC) ওয়েবসাইট http://en.csc.edu.cn/
বৃত্তির জন্য প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে আবেদন করতে হয়।
চায়নাতে শিক্ষাবছর শুরু হয় আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।