শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... জিন্স প্যান্ট পরা, গায়ে চমৎকার শার্ট,পরনে দামী স্যান্ডেল। শো পরার ফ্যাশান এখন নাই বললেই চলে। মাথায় স্পাইক করা চুল। সুদর্শন,আধুনিক,ফ্যাশন সচেতন এক যুবক। আমি তার নাম জানি না, কিন্তু পথে তাকে দেখতে দেখতে চিনে নিয়েছি।
কি জানি সেও হয়তো আমাকে মুখে মুখে চিনে থাকতে পারে।
আমার সামনে থেকে লাফ দিয়ে রিকসায় উঠে গেল। উঠেই বলল চল। রিকসা চলতে শুরো করেছে। আমি হেটেই যাচ্ছি।
সাধারনত পাঁচ/সাত মিনিটের পথ , আমি হেটেই যাই। দুজনের রাস্তা দেখা গেল একই।
অল্প সামনে পান দোকানে রিকসা থামলো, একটি সিগারেট ধরিয়ে আবার লাফ দিয়ে উঠলো। উঠেই চল। ঘোড় সওয়াররা ঘোড়ার পিঠে চড়েই পা দিয়ে যেমন দাবড়ানি দেয় অনেকটা এমন ।
( রিকসা ওয়ালাকে তো আর পা দিয়ে দাবড়ানি দেয়া যায়না,যতই হোক আমরা গনতন্ত্রী দেশের মানুষ, তার ভোটের মূল্যও সবার সমান। ) আমি তাকে অতিক্রম করতে করতে আবার আমাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেল। অল্প দূরেই আবার নামলো, এবার সেলুনে। আমার হাতে কাজের তাড়া নেই তাই এবার হাঁটা আরো মন্থর করে দিলাম। সেলুনে কিছু ক্ষন চেয়ারে বসলো আবার রিকসায় উঠলো।
...
আমি অনেক লক্ষ করে দেখেছি, আধুনিক ফ্যাশানের মাঝে এই রিকসায় চড়া ফ্যাশানটা নতুন যোগ হয়েছে। এখন স্মার্ট ছেলেরা মোটেও হাঁটে না। তারা যতটা সম্ভব রিকসায় চড়ে। স্মর্টলি রিকসায় উঠে, স্মার্টলি নামে। সব খানে স্মার্টের জয় জয়কার।
বাকই তরুনদে সাথে এদের আচরনের কিছু মিল দেখা যায়। বাইক নিয়ে বেড়িয়েছে হঠাৎ কোন সেলুন বা পানের দোকানের সামনে থামলো। বাইকটা রাখলো রাস্তার প্রায় মাঝামাঝি। পারত পক্ষে তারা রাস্তা থেকে নামাতে চান না। এর কারন কি? আম্লিক,বিম্পর নেতাদের কাছ থেকে যারা তালিম নেয়।
ভাল কিছু তাদের কাছে কতই আশা করতে পারি? বাইক চালকের প্রতি মানুষের এক ধরনের ভীতি আছে। কারনটা স্পষ্ট। বাইকের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় দলীয় শোডাউনে। বিয়েতেও এখন বাইকের শোডাউন দেখা যায়। প্রয়োজনে যারা বাইক ব্যবহার করেন তাদের ব্যপারটা আলাদা।
তাই বেশির ভাগ বাইকারের হাতে কোন কাজ থাকেনা। কিন্তু তাদের আচরন দেখে মনে হতে পারে তারা খুবই ব্যস্ত।
যেসব স্মার্টদের হাতে বাইক থাকেনা তারাই বোধ হয় রিকসা দিয়ে বাইকের মজা নিতে চান। তাই তাদের আচরন গত কিছুটা সামঞ্জস্য দেখতে পাওয়া যায়।
এই লাফ মেরে রিকসায় উঠা যে একটা ফ্যাশন হতে পারে আমিও কল্পনা করিনাই।
কিন্তু পাঁচ মিনিট হাঁটার পথ যদি কেউ রিকসায় চড়ার বিলাসিতা দেখায় তখন একে কি বলবো? জরুরি প্রয়োজন, অথবা শারীরিক অসুস্থতা অন্য ব্যপার। স্কুল কলেজ, ভার্সিটির মেয়েদের কথা না আনাই ভাল। তাদের বেশির ভাগ আরাম প্রিয় হতে হতে হাঁটার অভ্যাস ভুলতেই বসেছে। তাই বলে পুরুষ শাষিত সমাজে যুবকরা পাঁচ মিনিট হাঁটতে চাইবে না?এটা কেমন কথা? পৌরষ বলে একটা ব্যপার আছে। সেই পৌরষ টাও বোধ হয় আজকাল রিকসায় চড়ে বেড়ায়।
আপনার বিষয়টা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তাই না। আপনি যে কোন কলেজ গেটে দাঁড়াবেন দেখবেন, ছেলেরাই গেটে রিকসা থেকে নামছেনা (যদিনা কলেজ কতৃপক্ষ গেটের ভেতরে রিকসা ঢুকতে নিষেধ করে), তারা একমিনিট হাটাতেও রাজি নয়। সকল ছাত্র ছাত্রীর মধ্য দিয়ে তার রিকসা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে। একে বারে তার ডিপার্টমেন্ডের দড়জায় গিয়ে রিকসা থেকে নামবে। এটা এক ধরনের বাহাদুরি।
বাহদুরির বিষয়টা তাদের চোখ মুখ এবং আচরন দেখলেই বোঝা যায়।
এবার কথা আসবে তাতে কি হয়েছে? এটা করলে আপনার সমস্যা কোথায়? রিকসা তো চড়ার জন্যই, তাকে কি মাথায় তুলে নিয়ে ঘুড়তে হবে? আর রিকসা ভাড়া তো আপনি দেনা না? নিজের চড়কায় তেল দেন কামে দিব।
কথা ঠিক। আপনার টাকায় চড়েন। আমার তবু বলার কিছু আছে।
রিকসাওয়ালাদের শারীরিক অবস্থা নিশ্চয় দেখেছেন। বেশির ভাগ হাড়জিরজিরে অবস্থা। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ যেখানে সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা নাই। সেখানে রিকসাওয়ালার সু স্বস্থ কি ভাবে কল্পনা করতে পারি? পারি না।
প্রয়োজন সে তো প্রয়োজন কিন্তু যখন বিলাসিতার জন্য হয় তখন?এখন একজন যুবক,তরুন যখন এমন এক হাড় জিরজিরে রিকসাওয়ালাকে দাবড়ি দিয়ে "চল" বলেন তখন বিবেকের প্রশ্নটা মাথা আসে? কোথায় আমাদের বিবেক?
পারতপক্ষে আমি রিকসায় চড়িনা।
কিন্তু কখনো কখনো সময়ের কারনে চড়তে বাধ্য হই। আমার কাছে রিকসা একটা অমানবীক পরিবহন ব্যবস্থা। আগে ঠেলা গাড়ির ব্যবস্থা ছিল,একজন চেয়ারে চড়ে বসতো অন্যজন টেনে নিয়ে যেত। পাশের দেশে আইন করে তা বন্ধ করতে হয়েছে সেটা অমানবিক বলে। দু পায়ে ভর করে যাত্রি টানা যদি অমানবিক হয় তবে দু পায়ের প্যাডলের রিকসা কেন অমানবিক হবে না?
ঠেলা গাড়ির তুলনায় রিকসার যান্ত্রিক সুবিধা খুবই সামান্য।
তার পরেও থেমে থাকা অবস্থায়,ঢালু থেকে উঠতে,আধা পাকা, বা কাঁচা রাস্তায় ঠেলা গাড়ির সমানই পরিশ্রম করতে হয়।
রিকসাওয়ালার পায়ের গোড়ালির ফুলে উঠা রকগের দিকে তাকিয়ে কত জন আরোহী দেখেছেন? কত জন লোক ভাড়া দেবার সময় ঘামে ভেজা রিকসাওয়ালার মুখের দিকে তাকান? চোখ মেলে রাখলেই সব দেখা যায়নাএজন্য মনও খোলা রাখতে হয়। মন খোলার শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদে কোথায়? আমাদের সুন্দর সুন্দর ভাব সম্প্রাসারন কেবল বই এর পাতা থেকে পরীক্ষার খাতায় যায় মনের খাতায় কখনো নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।