আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিষ্য নামা

বরাবরের মতই প্রতারক এবং পলাতকগণ দূরে থাকুন ১. স্যা........র । হঠাৎ চমকে ফিরে তাকালাম। মাত্র একটা রিকশা আমার রিকশাকে পাশ কাটালো আর সেটাতেই বসে আছে তূর্য, আমার ইট ভাঙ্গা/মাটি কাটা জীবনের প্রথম ছাত্র। ঠিক তখনই আমার মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। তার মত ভালো এবং ভদ্র ছাত্র আমি পরে আর পাইনি।

তূর্যকে তিন বছর পড়িয়েছি, সেটা ছিল আমার ইট ভাঙ্গা জীবনের সবচেয়ে সুখকর সময়। সে ফাঁকি মারত খুব কম আর মারলেও নিজ দায়িত্বে ফাঁকিটুকু কমপ্লিট করে ফেলত। যার ফলে অধিকাংশ ছাত্রের সাথেই লেখাপড়া নিয়ে খেলা কুস্তিটা তূর্যের সাথে কখনোই খেলতে হয় নি। তবে সে একটু বোকাও ছিল। একদিনের কথা খুব মনে পড়ছে, সে বোধহয় তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, ওকে একটা মডেল কোয়েশ্চেন সল্ভ করতে দিয়েছি।

লিখতে লিখতে সে হঠাৎ বলল স্যার, প্যারাগ্রাফ কোনটা লিখব? আমি জিজ্ঞেস করলাম কী কী দেয়া আছে? উত্তরে সে বলল রিমুভিং ইলিটেরেসি আর ফ্যামিলি প্লানিং। আমি তখন বললাম একটা হলো অশিক্ষা দূরীকরণ আর আরেকটা হলো পরিবার পরিকল্পনা, তুমি কোনটা লিখবা? যেটা পারো সেইটা লিখো। সে বলল আমি ফ্যামিলি প্লানিং নিয়ে লিখব, আমি আর বাবা প্লান করেছি আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার বেড়াতে যাব আমি হাসতেও পারছিলাম না, কাঁদারও ইচ্ছে ছিল না। তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে তাকে মোটামুটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর পরিকল্পিত পরিবার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম। বাসায় ফিরে যখন রুমমেট এবং অন্যান্য বন্ধুদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম তাতেও একচোট হাসির পসরা বয়ে গেলো ২. আমার দুই নম্বর ছাত্রটা ছিলো ভীষণ ...... যাকে সোজা বাংলায় বলে পিছলা।

এর কাছ থেকে পড়া আদায় করতে আমাকে নিয়মিত কুস্তি করতে হত, বলার জন্য বলছি না সত্যিই কুস্তি করতে হত। আরেকটা কথা হচ্ছে পড়ানোর সময় দুনিয়ার তাবৎ বিষয়ে তার সুবিশাল বিস্তীর্ণ কৌতূহল মেটাতে হত আমাকে। তারমধ্যে কিছু প্রশ্ন ছিল বড় বিচিত্র যেমনঃ “স্যার যদি টারজান আর রোবকপের মধ্যে মারামারি হয় তাহলে কে জিতবে ??” এহেন অনেক দ্বৈরথের উত্তর দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করে তবে পড়ায় মনোযোগ দেয়াতাম। এর মাঝে একদিন হঠাৎ বলে বসলো “আচ্ছা স্যার কে সেরা, জেমস বন্ড না শার্লক হোমস??” আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু প্রাতঃস্মরণীয় গুরু হোমসের পরাজয় সহ্য করতে পারিনা। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় হোমসকে জয়ী ঘোষণা করলাম।

কিন্তু সে মানতে নারাজ। আমি তাকে প্রথমে একটু ফাপড় দেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু উপায় না পেয়ে ঘোষণা করলাম তাদের মধ্যে আসলে তুলনাই সম্ভব না, কারন একজন হচ্ছেন গোয়েন্দা আরেক জন হচ্ছেন গুপ্তচর। এবার ঠ্যালা সামলাও !! “স্যার গুপ্তচর মানে কি??” প্রথমে ইংরেজি বললাম স্পাই, তাও কাজ হলনা। তখন গুপ্তচরের সংজ্ঞা দেয়া শুরু করলাম, আমার ছাত্র আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে “ও!! স্যার আগে বলবেন না, গুপ্তচর মানে হচ্ছে জাসুস ” হে বঙ্গ মাতা !! আমায় ক্ষমা কর, আমার ছাত্র বাংলায় গুপ্তচর বোঝেনা, কিন্তু হিন্দিতে জাসুস বোঝে !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.