ভালবাসি
বিশেষ সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অর্থনীতির মেঘ কেটে গেছে। দেশের অর্থনীতি এখন আর সঙ্কটে নয় এবং মূল্যস্ফীতিও উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেই। তিনি বলেন, সরকারের দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ইতো-মধ্যে কেটে গেছে। এখন আমাদের প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বধারা অব্যাহত থাকবে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও বহাল থাকবে। যায়যায়দিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি আছে সত্য, তবে তা অবশ্যই উদ্বেগজনক পর্যায়ে নয়। গত তিন বছরে (২০০৮-০৯, ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছর) দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৮ শতাংশ যা অন্য বহু দেশের তুলনায় কম। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশে।
এর পর থেকেই মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। বাজেটে অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫-এ রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও জানুয়ারি মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আভাস দিয়েছে, তা ৯ শতাংশ হতে পারে। মুহিত বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও গত তিন বছওে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭৪, ৬ দশমিক ০৭ এবং ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। গত তিন বছরের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরেও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। তবে পুনরায় মন্দা আসা, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে দাম সমন্বয়ের চেষ্টা, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব, ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সামগ্রী আমদানির ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ কওে রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবচিতি জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঝুঁকি তৈরি করেছিল।
তিনি বলেন, সেজন্য দেশবাসীকে পূর্বে থেকেই সচেতন করা হয় যে চলতি অর্থবছর খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত অভিঘাত মোকাবেলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার ১৭ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া নিট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক থেকে সরকার ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা নতুন ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে আগের নেয়া ১৭ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের শুরুতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫ হাজার ৩৪৯ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার। আর গত ২০ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ৯ হাজার ৮৫৬ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ৯ ভাগ। অন্যদিকে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময় অর্থাৎ ২০০৫ সালের ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। আর ২০০৬ সালের ৩০ জুন এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৮৩ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলার।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ২২ ভাগ। মুহিত জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দাতাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ১৪ হাজার ১২৯ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭৭০ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ২ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার অনুদান। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে (২০১০-১১ অর্থবছরে) জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮১৮ ডলার। রাজস্ব আদায় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা (এনবিআর অংশ) ছিল ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৪০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এটি লক্ষ্যমাত্রার ১০৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের তুলনায় তা ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয়কর আদায়ের আনুপাতিক লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা হলেও ১০ হাজার ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আদায় হয়েছে বলে জানান তিনি। শেয়ারবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের কারসাজি চিরতরে বন্ধ করতে সরকার পুনর্গঠিত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান যুগোপযোগী করছে। তাছাড়া প্রচলিত সিকিউরিটিজ আইনের আওতায় বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কার্যক্রম তদারক করা হচ্ছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর যে সব অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে কারসাজি চলছে, তা চিরতরে আইনগতভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার ই-গর্ভন্যান্স চালু করায় ব্যবসায়িক লেন-দেনের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ সময়ের সাশ্রয় হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
আয়কর অফিসে (ছোট হোক) অনলাইন ট্রানজেকশন হচ্ছে। দেশে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। ই-গর্ভন্যান্স চালু হওয়ায় এই দুর্নীতি বন্ধ করতে সক্ষম হচ্ছেন। ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইন টেন্ডারিং শুরু করেছেন। জনগণ অতিসত্বর এর সুফল পাবেন।
তিনি বলেন, দেশে অনেক মানুষ, এসব মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। বেশির ভাগ লোক এখনো কৃষিতে নিবেদিত। তাদের সংখ্যা ৫০ শতাংশের কিছুটা নিচে। তাদের অনেককে শিল্পে নিয়ে আসছেন। বিশেষ করে পোশাক এবং কাপড় শিল্পে।
এ খাতগুলো ভালো কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। এ ভিশন নিয়ে সরকার তিন বছর অতিক্রম করেছেন। প্রথমে তারা যে ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যে রকম ভেবেছিলেন, তার চেয়েও অনেক দ্রুতগতিতে তারা এগিয়েছেন। যেমন, সারাদেশে ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র হয়েছে, এত তাড়াতাড়ি তা করা সম্ভব হবে বলে তারা ভাবেননি।
এটা হয়ে গেছে প্রায় দেড় বছর আগে। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল এটা চলতি বছর বা আগামী বছর হবে। এছাড়াও ৬৪ জেলায় ৬৪টি জেলা তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যা নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ই-গর্ভন্যান্স কি অবস্থায় আছে এবং আগামীতে কোন অবস্থায় নিয়ে যেতে চান জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সরকারের ই-গর্ভন্যান্স বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
এত জলদি তা হবে না এবং এটার মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ জড়িত রয়েছে। তবে তার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরে তার মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল অগ্রগতি ভালো। অর্থ বিভাগের নেটওয়ার্ক সারাদেশে আছে। তিনি যেকোনো মুহূর্তে বলতে পারেন দেশে কত রাজস্ব আদায় হয়েছে কত ব্যয় হয়েছে। তবে তার রাজস্ব বোর্ড পেছনে ছিল এখন তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
দু'বছর হয় অনলাইনে ট্যাক্স দেয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক লোক দিতে পারে না। তবে ২০১৩ সালের মধ্যে আশা করেন সবাই অনলাইনেই ট্যাক্স দিতে পারবেন। এমনকি নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপ থেকেই দিতে পারবেন। ভ্যাট অফিসে যেতে হবে না।
ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় তারা যে রকম অগ্রগতি আশা করেছিলেন তা হয়নি। তারা চেয়েছিলেন জমির যে রেকর্ড আছে তার সবই ডিজিটালাইজড করতে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি। তার মতে, এ বিষয়ে যে সব প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আছে তাদের দিয়ে কাজটা করা সহজ হবে। এ জন্য কিছু ফিল্ড ওয়ার্ক লাগে। দেশে একটা ভূমি জরিপে ৭ থেকে ৮ বছর লাগে।
কিন্তু ডিজিটাল জরিপের জন্য সারাদেশকে ৬৪ ভাগে ভাগ করে ৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৪ জেলার দায়িত্ব দিয়ে দিলে কাজটা তাড়াতাড়ি হবে। সরকারের আরো দু'বছর আছে। এ দুই বছরে সরকারের অবস্থান কি রকম দেখতে চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মন্ত্রণালয়ে ৪টা বিভাগ আছে। এই ৪টা বিভাগে পেপারলেস কাজ করতে চান। সেটা প্রথমে অর্থ বিভাগে হতে পারে।
কেননা তাদের সিস্টেমটা খুবই উন্নত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।