আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থনীতির ইতিবাচক উন্নতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সব সূচকের উন্নতি ঘটছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি অন্য খাতগুলোও সচল হতে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি রফতানিও বাড়ছে। আমদানি পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। ফলে শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমে আসতে শুরু করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ : বিশ্বমন্দার বিলম্বিত প্রভাব কাটিয়ে অর্থবছরের শেষদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধনাত্মক গতি এসেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১৬৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭২৮ কোটি ৪১ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১২১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়ায় ৯৩৮ কোটি ৬৪ ডলারে, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে ছিল ১০৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বৈদেশিক বিনিময় হার ও কলমানি মার্কেট : বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের বিনিময় হার এবং স্বর্ণমূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কিছুটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে সাম্প্রতিককালে টাকার বিপরীতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, টাকা-ডলার ভারিত গড় বিনিময় হার ৩১ জানুয়ারিতে দাঁড়ায় ৮৪ দশমিক ৪৪ টাকা, পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭১ দশমিক ১৫ টাকা। সাম্প্রতিককালে আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড়হারে কিছুটা ওঠানামা করছে।

৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড়হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আমদানি : ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর ’১০-১১র তুলনায় আমদানি ব্যয় অর্থবছর ’১১-১২ এর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ঋণপত্র স্থাপনাভিত্তিক আমদানি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে এবং ঋণপত্র নিষ্পত্তিভিত্তিক আমদানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

এ সময়ে খাতওয়ারি ঋণপত্র স্থাপনার তথ্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, ভোগ্যপণ্য, মূলধন পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মূল্য যথাক্রমে ৬১ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে পেট্রোলিয়ামের আমদানি মূল্য ১০৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি : সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর ২০১১-১২ সময়ে রফতানি আয় পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ১১৭৭ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি আয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অর্থবছর ’১১-১২ জুলাই-নভেম্বর সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অর্থবছর ’১০-১১ জুলাই-নভেম্বর সময়ে এ উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৭৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০১০-১১ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ : ২০১১-১২ অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০১১ মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা কমেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩৪ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৯৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মুদ্রা সরবরাহ, অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি : ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের রিজার্ভ মুদ্রা ও ব্যাপক অর্থ সরবরাহ যথাক্রমে ২১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।

এ সময়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ ও ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা ওই অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে মোটামুটি সন্তোষজনক। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে রিজার্ভ মুদ্রার পরিমাণ ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ও বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে নভেম্বর, ২০১১ মাসে নভেম্বর ’১০ মাসের তুলনায় রিজার্ভ মুদ্রা, ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ, ১৭ শতাংশ ৭ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মূল্য পরিস্থিতি : সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বর ২০১১ মাসে ১২ মাসের গড়ভিত্তিক ও পয়েন্ট টু পয়েন্টভিত্তিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ; গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রসার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়।

শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণ ও মূলধন পরিস্থিতি : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণে শ্রেণীকৃত ঋণের অংশ সেপ্টেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১০ শেষে ছিল ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নিট ঋণে শ্রেণীকৃত নিট ঋণের অংশ সেপ্টেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১০ শেষে ছিল ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কৃষি ও শিল্পঋণ : কৃষি খাতে নতুন নতুন পণ্য উত্পাদনের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ৯ দশমমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বর ২০১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ৯৩ লাখ এবং ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। রাজস্ব আয়: গত তিন বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে সরকারের বেতন ভাতা খাতে ব্যয় হয় ৫০ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। বাকি রাজস্ব আয় ব্যয় হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন খাতে প্রয়োজন ২১ হাজার ৬শ' কোটি টাকা।

নবেম্বর পর্যনত্ম রাজস্ব আয় হয়েছে ৪০ হাজার ১৯ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছরে এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আয় দাঁড়াবে। রেন্টাল বিদ্যুত: প্রতিবেদনে বলা হয় রেন্টাল বিদ্যুত ও আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৮৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। ওই হিসাবে এই ব্যয় এক বছরে দাঁড়াবে এক হাজার ২০ কোটি টাকা। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বড় ধরনের নেমে আসার কোন আশঙ্কা নেই।

বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬শ কোটি ডলার। এছাড়া রফতানি আয় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, রেমিটেন্স ডিসেম্বরে উর্ধমুখী ধারায় রয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যনত্ম বৃদ্ধির হার ছিল ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্সের উর্ধমুখী ধারা ও আমদানি ব্যয় হ্রাসের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক উন্নতি ঘটবে। ব্যাংক ঋণ: ২০১০ সালের নবেম্বর থেকে গত নবেম্বর পর্যন্ত অর্থনীতিতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবাহ বেড়েছে ৯৭ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ হচ্ছে ৩৮ হাজার ৭১২ কোটি এবং বেসরকারী খাতে ৫৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৭ হাজার ৩শ' কোটি টাকা। সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করলেও বেসরকারী খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবাহ কমেনি তথ্যসূত্র: দৈনিক সকালের খবর দৈনিক জনকণ্ঠ বণিক বার্তা বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবসাইট ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.