অভিন্ন নদীর পানি নিয়া বাংলাদেশ আর ভারতের কাপঝাপ চলতেছে কম দিন হইল না। মনমোহন বাবু সেই যে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন এবং যাওয়ার সময় মমতা'দি কে খুশি করার জন্য কয়েকশো মণ ইলিশ নিয়ে গেলেন ধুতি কাছা মেরে, তখন থেকেই শুনছি বাংলাদেশের পাওনা ন্যায্য পানি নিয়ে দাদাবাবুদের গড়িমসির খবর। পানিবন্টন চুক্তি নাকি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও থেমে গেছে মমতা দিদির আপত্তির কারনে। পশ্চিমবঙ্গ যথেষ্ট পরিমাণে পানি পাবেনা- এই কারন দেখিয়ে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বরাবর ভেটো দিয়ে বসেছেন যে এই চুক্তি করা যাবেনা! যার ফলে বাংলাদেশে কাগজপত্র নিয়ে এসেও তাতে সই করা হলনা এরকম একটা নাটক হয়ে গেল। এরমধ্যে গত কয়দিন আগে মমতা দিদি আবার দাবী করেছেন, বাঁধে ফাটল ধরার কারনে বাংলাদেশ নাকি ফারাক্কা চুক্তি হিসাবে যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি পরিমাণে পানি পাচ্ছে! এই দাবীর কারনে তিনি কেন্দ্রসরকারের কাছে ফারাক্কার ফাটল সারিয়ে তুলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তাদের পরিমানমত পানি বুঝিয়ে দেওয়ার বায়না ধরেছেন।
ওনার এই উক্তির সবচেয়ে বিখ্যাত রিপোর্ট করেছিল 'দৈনিক মগবাজার'। তারা লিখেছিল "ফাঁক গলে খসে পড়া মমতার অবৈধ জল ফিরিয়ে দেওয়া হবে"!!!
পানিকে মুলার মত ঝুলিয়ে আমাদের গাধা বানিয়ে ভারত এরই মধ্যে তাদের কাঙ্ক্ষিত ট্রানজিট সুবিধা অলিখিতভাবে আদায় করে নিয়ে গেছে। পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কোনরকম আন্তর্জাতিক শুল্ক কিংবা টোল আদায় ছাড়াই! এই বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগছে যে বাংলাদেশ কি ভারতের কোন অঙ্গরাজ্য যার উপর দিয়ে দিল্লী সরকারের যানবাহন চলাচলের জন্য অতিরিক্ত কোন শুল্ক পরিশোধ করতে হবেনা? (যেমনটা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, একটি স্টেটের উপর দিয়ে আরেকটি স্টেটে যেতে আলাদা করে শুল্ক দিতে হয়না)
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তি যদি আরেকটি বিষয় বিবেচনায় আনেন, তাহলে তার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মাতে বাধ্য যে বাংলাদেশ ভারতের একটি প্রদেশ না হয়ে পারেই না!!!
বিষয়টি হল, চুক্তি হওয়ার কথা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি হিসাব করলে এখানে পক্ষ দুইটি। কিন্তু প্রকারান্তরে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা হল এখানে ৩টি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে- বাংলাদেশ, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং মমতা ব্যানার্জী তথা পশ্চিমবঙ্গ।
এই ব্যাপারটি চিন্তা করলেই গা গুলিয়ে আসে। যতই মিষ্টি কথা বলা হোক মুখে, অবস্থাদৃষ্টে যদি মনে হচ্ছে নয়াদিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার এখানে একটা সালিশী দায়িত্ব নিয়েছে। আর এই সালিশের বিষয়বস্তু হল তার মহান ভারতবর্ষের ক্ষুদ্র ২টি প্রদেশের মধ্যে পানির সুষম বণ্টন! যেই রোলটা বাবাকে অভিনয় করতে হয় তার ছোট ২ সন্তান মারামারি করলে!!! আরে বাপু, চুক্তিটা যেখানে ২দেশের মধ্যে, তখন একটি দেশের প্রদেশের মতামত প্রকাশের সুযোগটা কোথায়? এটা পুরোপুরিই তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আমাদের মাথা ঘামানোর বিষয় না। "আমাদের দরকার আমাদের ন্যায্য পানি, সেটা আমাদের বুঝিয়ে দাও, নাইলে আমরা আমাদের মত হার্ডলাইনে যেতে বাধ্য হব। তোমার কোন প্রদেশ কি বলল,সেটা আমাকে শুনিয়ে কাজ নাই"- এরকম ঘটনা হওয়া উচিৎ ছিল।
সত্যি কথা বললে, এটা খুবই অমানবিক হয়ে যায় যে আমাদের প্রতিবেশী বাঙ্গালীরা যদি আমাদের কারনে পানির অভাবে কষ্ট পায়। কিন্তু বাস্তবতা বলে, আমাদের পশ্চিমা প্রতিবেশীরা আমাদের মতই বাংলা ভাষাভাষী হওয়ার পরও তারা যখন আমাদের কথা চিন্তা করেনাই, তখন আমাদের কি ঠেকা পড়েছে যে আমরা নিজে খেয়ে না খেয়ে তাদের বাগানে পানি দিয়ে আসব? ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে আমাদের যখন আমাদের ন্যায্য পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে দশকের পর দশক, তারা তো এর প্রতিবাদ করেনাই! আর আমরা যদি আমাদের পানি বুঝে নিতে চাই, সেখানে তাদের তো আপত্তি তুলার কোন অধিকার থাকার কথা না। তাদের পক্ষ হয়ে মমতা এখানে কথা বলার কে? পৃথিবীতে একজন এখন আরেকজনকে মুফতে গালিও দেয়না, তাই সত্যি কথা বলতে আমাদের এখন একমাত্র পথই খোলা আছে। সেটা হল পশ্চিমবঙ্গের কথা ভুলে গিয়ে চরম স্বার্থপরের মত চিন্তা করে নিজের অধিকারের পানি নিজের দেশে নিয়ে আসা। এতে যদি পশ্চিমারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে আমাদের পরিহাসের সুরে দুঃখ প্রকাশ করাটাও অনেক বেশি ভদ্রতা দেখানো হয়ে যায়।
কারণ ফারাক্কার কারনে আমাদের একের পর এক নদী শুকিয়ে যাওয়ার পর তারা যে দুঃখপ্রকাশের সৌজন্যবোধটুকুও দেখায়নি! আমাদের যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা ও অহমবোধ থাকে, তাহলে আমাদের এখন উচিৎ হবে ভারতকে চাপে রেখে আবার আলোচনার টেবিলে বসানো এবং পানিবন্টন চুক্তি সই করতে বাধ্য করা। তখন যদি মনমোহনবাবু আবারও বলে বসেন, "মমতা ব্যানার্জী বেঁকে বসেছেন, তার অনাপত্তিপত্র ছাড়া এই চুক্তি করা সম্ভব না", তখন তার মুখের উপর জবাব দেওয়া, "মমতা!!! হু দা ** ইজ শী????" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।