আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভটিজিং ব্যাধি মুক্ত বাংলাদেশ চাই/ব্যাধি নয় ইভটিজিং হোক শিল্প

...............................................................................................................................................................। ০১/০৩/২০১২,ঢাকা। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি ইভটিজিং সমস্যা। এ যেন ক্রমাগতই বিরাট আকার ধারন করছে,জনমনের এ উৎকন্ঠায় আমি মোটেও তাদের সমর্থন করিনা। তবে ইভটিজিং যে হচ্ছেনা তাতেও আমি সমর্থন করিনা।

ইভটিজিং হচ্ছে। ইভটিজিং্যের প্রকোপ কোনকালেই কম ছিলনা। আধুনিকতার প্রসারে মিডিয়ার ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার কারনে বর্তমান সময়ে দেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া ইভটিজিং ঘটনাবলী আমাদের চোখে পড়ছে। ইভটিজিং হবে,ইভটিজিং হতেই হবে। তবে এ ইভটিজিংকে ব্যাধি আকারে না ছড়িয়ে অনেকটা শিল্পের মত করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

আমরা চাইনা কোন মেয়ে আতংকের মধ্যে থাকুক,কোন ছেলের কারনে তার স্কুল কিংবা কলেজে যাওয়া বন্ধ হোক। তবে প্রত্যেকের উচিত ইভটিজিং ব্যাধি থেকে নিজেদের দূরে রাখা কিংবা প্রতিহত করার পরিকল্পনা নিয়ে পথচলা। নিরবে সয়ে গেলে যে আঘাত আরো দৃঢ় হতে থাকবে। ইভটিজিংকে যদি আমরা আইন করে বন্ধ করতে যাই আমার দৃষ্টিতে তা হবে অধিকার হরনের শামিল। আইন প্রনয়ন না করে অপরাধের মাত্রা হিসেব বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি দেয়া যেতে পারে।

প্রেমের উপর বড় কোন শিল্প পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয়না। কবিতা,গান,ছবি আকা যত ধরনের শিল্প আছে সবই প্রেমের অংশবিশেষ মাত্র। প্রেম না থাকলে এসব সম্ভব হত না। এবং নারীও এদের সাথে যুক্ত। শিল্পের আরেক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কবিতা,গান,ছবি আকা যাই বলিনা কেন সব শিল্পীরই মস্তিষ্কে কল্পনায় হোক আর বাস্তবে হোক নারীই প্রেরনা যুগিয়ে চলেছে। মোবাইল কিংবা ইন্টারনেট যুগের পুর্বে চিঠির প্রচলন ব্যাপক ভাবে ছিল। প্রেম নিবেদনের অন্যতম বাহন ছিল চিঠি। আপনি যখন কোন নারীর প্রেমে পড়বেন আপনি কোন না কোন ভাবে অবশ্যই চাইবেন তার সংস্পর্শে আসতে,তার প্রতি আপনার আকাংখাকে বুঝিয়ে দিতে,কিংবা সরিসরি মুখফুটে বলতে। এর জন্য আপনি কোন না কোন পন্থা অবলম্বন করতে চাইবেন।

আর এর ফল যদি উল্টো হয় তা হয়ে যায় ইভটিজিং আর যদি ফলাফল আপনার অনুকুলে আসে তখন তা হয়ে যায় প্রেম। ধরে নেয়া যাক একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে। ছেলেটি মেয়েটির পরিবার আত্নীয়স্বজন বা বন্ধবান্ধব কারো সাথে পরিচিত নই। প্রতিদিন তাকে কলেজে যেতে রাস্তায় দেখতে দেখতে তার প্রতি ভালোলাগা জন্মে গেছে। এবং ক্রমাগতই তা বিরাট আকার ধারন করে চলেছে,সহ্যের বাধ ভেঙ্গে গেছে কবেই,শেষ যে কবে প্রানভরে ঘুমিয়েছে মনে নেই,ঘুমালেই তার চেহারা চোখে ভেসে উঠে,আর ঘুম আসেনা।

বিছানায় ছটপট করতে করতেই সকাল হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইভটিজিং্যের বেশকিছু ঘটনাবলী পত্রিকার শিরোনাম হওয়ায় পরিবেশ এখন বেশ থমথমে যাচ্ছে। অনেক স্কুল কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন খুব কম মেয়েকে দেখা যায় একা স্কুল কিংবা কলেজে আসতে। সাথে বৃষ্টিদিনের সঙ্গী ছাতার মত মায়েরা মেয়েদের সাথে লেগে থাকে।

স্কুল কলেজের সামনে অভিভাবকদের এখনকার উপছে পড়া ভিড় দেখলে মনে হয় সরকার যদি এদের জন্যও ঐ সময়ের মধ্যে কোন কাজের বা ট্রেনিং্যের ব্যবস্থা করতো বোধহয় ভালো হত,তারা কাজের মধ্যে থাকত। তারা যেভাবে গোল হয়ে আড্ডা জমায় সত্যি দেখার মত। আর আড্ডার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নাইবা বললাম,স্বামীরা যদি চুপিচুপি একদিন সেখানে গিয়ে আড্ডা উপভোগ করতে পারতেন তাহলে ভালোই হত,নিজের কানে বহুদিন পর বউয়ের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতেন। যাই হোক,ইদানীং নাকি স্কুল কলেজের সামনে বখাটেদের আড্ডা দেখলে পুলিশ নানা রকম শাস্তি দেয়,এরকম কোন ঘটনা যদি একবার পরিবারের কানে যায় তাহলে খবর আছে এ ভয়ে ছেলেটি কোন কিছু করার সাহস পাচ্ছেনা,আবার নিজেকেও স্থির করতে পারছেনা। কিন্তু পরিশেষে নিজের মনকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে একদিন সে নিজেই রাস্তায় মেয়েটির সামনে দাড়ায়,দেহে কাপুনি তুলে কাপা স্বরে শান্ত মনে তাকে তার মনের কথা বলতে শুরু করে,একটু না বলতেই মেয়েটি পিছু হাটতে শুরু করে অনেকটা রাস্তায় কোন বিষাক্ত প্রানী দেখার ফলে যেমনটা হয়।

দূর থেকে কিছু লোক এ অবস্থা দেখে তারা এসে ছেলেটিকে চড় থাপ্পড় দিতে শুরু করে,এক পর্যায়ে পুলিশ এসে কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেয়। এবং পরদিন এ খবরটি পত্রিকার উঠে আমরা তা দেখে আতংকিত হই। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে ছেলেটি কি খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছে?আর যদি এর ফল উল্টো হত ছেলেটির অনুকুলে আসত এবং কোন পর্যায়ে যদি তাদের বিয়ে হত তখন একসময় মেয়েটি ঐ মুহুর্তটিকে মধুর সময় মনে করে এক গাল হাসি হেসে আনন্দে ভাসত। তবে ইভটিজিং নিয়ে কোন উদ্ভট পরিস্থিতি সৃষ্ট হোক এ কারো কাম্য নয়। যেহেতু মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর শিকার হয় এক্ষেত্রে আমি বলব তাদেরই উচিত এর প্রতিরোধে বিরাট ভুমিকা পালন করা।

কোন ছেলে যদি পথ আটকে কিছু বলতে চায় নিরব মনে প্রথমে তা শোনা উচিত। এরপর তাকে ঠান্ডা মাথায় একটু বুঝিয়ে বলতে হবে যে তুমি তা চাচ্ছনা,এক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েও তুমি বাচতে পার,একটু মিথ্যের আশ্রয় না হয় নিলে। বুঝিয়ে বললে ছেলেটি হয়ত পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে পরদিন তাকে এড়িয়ে না যেয়ে তুমি ভয়ংকর রুপ ধারন করতে পার,ধমকের স্বরে তাকে আবার না করে পাশ কাটিয়ে চলে আসবে। মনে রাখবে তোমার দৃঢ়তাই তোমার শক্তি।

কখনো নমনীয় ভাব নিয়ে পিছু হটা ঠিক হবেনা। আবার ইচ্ছে করলে প্রথম দেখায়-ই তুমি ভয়ংকর রুপ ধারন করতে পারো। সব কিছুই তোমার বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করছে। আমার শুধু একটাই বলা কখনো চুপসে যাবে না,হতাশ হবেনা,ভয় পাবে না,তোমার দৃঢ়তা,তোমার বুদ্ধিমত্তায় পারে সবকিছু শান্তভাবে সমাধান করতে। নিজের রক্ষার জন্য কেন আরেকজনকে ছায়ার মত সাথে রাখতে হবে?নিজের উপর আত্নবিশ্বাস তৈরী করো,প্রতিরোধ করার সাহস নিয়ে চলতে শিখো।

এ প্রজন্মকেইতো দেশ বদলাতে হবে,সত্য সুন্দরে ভরে দিতে হবে। এ প্রজন্মের মেয়ে হয়ে চুপসে থাকা মানায় না। সোচ্চার হতে শেখো। আবার এমন আচরন করোনা যাতে পছন্দের ছেলেটিও প্রেম নিবেদন করতে ভয় পায়। আর আমাদের ছেলেদের কথা আসলে বিশেষ করে বলার নেই।

পরিবারে ছায়া যার উপর ভালো ভাবে পড়েনা সে এরকম কিছু করতে কখনো দ্বিধা করবেনা,পরিবারের শিক্ষাটা অনেক বড়। তবে হৃদয় মোহনায় যতকাল ঝড় উঠবে ছোট পরিসরে ইভটিজিং ঘটবেই,আর কোন মেয়েই বা না চায় আমাকে কোন ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিক,তারা তো উম্মুখ হয়েই থাকে কখন কোন ছেলে এসে তাদের রুপের প্রশংসা করে প্রেমের প্রস্তাব দিবে?সাগর মোহনা,বৃষ্টিধারা,গোলাপের সুগন্ধ,কবিতা,গান,…………,…,পৃথিবীতে সতেজ রাখতে হলে যে প্রেম নিয়ে বাচতে হবে,ইভটিজিংকে ব্যাধির পর্যায়ে না নিয়ে শিল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আমার তাকে পছন্দ হয়েছে কিংবা তার তো আমাকে পছন্দ নাও হতে পারে,এর বিপরীতেতো আমি অন্যায় কিছু করতে পারিনা?তার পথের কাটা হতে পারিনা?তার পড়ালেখা বন্ধের অন্যতম কারন হতে পারিনা?ইভটিজিংকে ব্যাধির পর্যায়ে আমরা নিবোনা। আমি জোর গলায় আবার বলছি এ ব্যাধি বন্ধ করতে মেয়েদের দৃঢ় ভুমিকা পালন করা উচিত। আইন করে নয়,পুলিশ দিয়ে নয়।

নতুন প্রজন্ম সত্য সুন্দরের স্বপ্ন দেখে,তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ?ধিক্কার!ইভটিজিং ব্যাধি বুকে লালন করা কোন সভ্য ছেলের কাম্য নয়। আমাদের পরিবর্তন আমাদের নিজেদেরই ঘটাতে হবে। আমরা আলোর পথের যাত্রী,আগামীর দেশ গড়ার হাতিয়ার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.