আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভটিজিং এর সংজ্ঞা। ইভটিজিং কেন হয়? কারা বেশি ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে? ইভটিজিং কি বন্ধ হবে না?



ইদানিং আমাদের বাংলাদেশে ইভ টিজিং শব্দটা বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর কারণটা কি ? পত্রিকায় বিভিন্ন লেখালেখিও হচ্ছে এটা নিয়ে। তাই আজকে ইচ্ছা করলাম এটার উপর আমার সংক্ষিপ্ত জ্ঞানের পরিধি অনুসারে একটু লেখালেখি করি। তাই আমার লেখাটাকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার জন্য আমি ছেলে এবং মেয়ে উভয় পক্ষের হয়ে লিখতেছি। ইভটিজিং এর সংজ্ঞা ঃ- কোন ছেলে রাস্তায়, স্কুলে, কলেজে বা যে কোন অলিতে গলিতে কোন মেয়েকে দেখার পর মুখ দিয়ে শিষ দেয়া, এমন কোন বাজে মন্তব্য করা যা শুনলে মেয়েটির খুব খারাপ লাগবে, হাসি ঠাট্টা করা অর্থ্যাৎ তাকে উক্ত্যক্ত করার নামই হল ইভটিজিং।

Eve Teasing এর শাব্দিক অর্থ : Eve অর্থ প্রাক্কাল, প্রাথমিক অবস্থা আর Teas অর্থ উক্ত্যক্ত করা, ক্ষেপানো। সুতরাং Eve Teasing অর্থ পরিচিত, অপিরিত, কোন মেয়ে কোন ছেলেকে/কোন ছেলে কোন মেয়েকে প্রাথমিকভাবে উক্ত্যক্ত করাকেই Eve Teasing বলে। শুধু ছেলেরে ক্ষেত্রে সংজ্ঞাটি প্রযোজ্য নহে। একই ভাবে কোন মেয়ে রাস্তায়, স্কুলে, কলেজে, প্রাইভেট পড়া অবস্থায় বা যে কোন অলিতে গলিতে কোন ছেলেকে দেখার পর মুখ দিয়ে শিষ দেয়া, এমন কোন বাজে মন্তব্য করা যা শুনলে ছেলেটির খুব খারাপ লাগবে, হাসি ঠাট্টা করা অর্থ্যাৎ তাকে উক্ত্যক্ত করার নামই হল ইভটিজিং। আধুনিক সংজ্ঞা ঃ- কৈশোর-যৌবনের mwÜনে আড় চোখে দূর থেকে মেয়েদের দিকে দৃষ্টি দেয়াকে ইভ টিজিং এর অপরাধ বলে জানতাম।

সময়ে তার পরিধি অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট ঘেটেঘুটে বুঝতে পারলাম মেয়ে-উত্ত্যক্ত করার সংজ্ঞা এখন শুধু শিষ দেয়া, কাছে বা দূরে দাঁড়িয়ে অপ্রিয় বাক্য ছুড়ে দেয়া, পথ আগলে দাঁড়ানো বা অযাচিত প্রেম নিবেদনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশে এর পরিধি অযাচিত ভাবে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়া, গায়ের ওপরে এসে পড়া, অপহরণ করা, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ধর্ষন করাকেও এর সংজ্ঞার মাঝে ফেলা হয়। ইভটিজিং যে যে কারণে হয় ঃ- ইভটিজিং ছেলে এবং মেয়েদের উভয় পক্ষের কারণে হয়। তাই প্রথমে ছেলেদের কারণগুলি উল্লেখ করা হলbr /> ছেলেদের ক্ষেত্রে কারণগুলিঃ- ০১।

বয়স : বলা হয় যে ১৩ থেকে ১৯ পর্যন্ত এই বয়সের ছেলেরা মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। মেয়েদেরকে টিপ্পুনি কাটতে ভালো লাগে, যে কোন ভাবে তাদেরকে হারাতে পারলেই তারা যেন খুশী। আবার মেয়েরাও ছেলেদের কে দেখলে শিষ দেয়, কটু মন্তব্য করে এই বয়সে। ০২। মিডিয়া : আমাদের বর্তমান টিভি চ্যানেল, ডিস এন্টিনা হাতের নাগালে আসার কারণে যুবক শ্রেণী প্রতিনিয়ত ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা দেখতেছে তাই মেয়েদেরকে উক্ত্যক্ত করা এটা কোন ব্যাপার মনে করেনা তারা।

তারা এটাকে মনে করে প্রেম খেলা বা একটু মজা (Just Fun)| আবার মেয়েরাও বান্ধবীদের সাথে চ্যালেঞ্জ ধরে ছেলেদেরকে উক্ত্যক্ত করে। ০৩। পরিবেশ ঃ- গ্রামের তুলনায় শহরের পরিবেশ একটু খোলামেলা। তাই গ্রামের ছেলে মেয়েদের তুলনায় শহরের ছেলে মেয়েরা ইভ টিজিং এর শিকার হচ্ছে বেশী। শহরের ছেলেমেয়েরা বেশী আধুনিকতা পছন্দ করে বিধায় তারা বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।

একইভাবে মেয়েরা ছেলেদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করে থাকে। ০৪। বাজে আড্ডা ঃ- ছেলেদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় ২/৩জন ছেলে একসাথ হলে তার পাশ দিয়ে একজন মেয়ে বাজে মন্তব্য শুনা ব্যতিত হেঁটে যেতে পারাটা কষ্ট সাধ্য। ০৫। ধর্মীয় অনুশাসন না মানা ঃ- যথাযথভাবে ধর্মীয় নিয়ম কানুন গুলো না মানার কারণে এ অবস্থার শিকার হতে হয়।

কেননা কোন ধর্মেই এই নেক্কার জনক বিষয়টিকে সমর্থন করেনা। ০৬। সঠিক গাইড লাইনের অভাব ঃ- ছোট কাল থেকে মা বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে যারা তারাই এই কাজে বেশি লিপ্ত হয়। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা চাকুরীর পিছনে দৌড়াতে দৌঁড়াতে ছেলেমেয়েদের খোঁজ খবর রাখতে পারে না। তাই তারা বিপথে চলতে থাকে।

০৭। মোবাইল ফোন ঃ- মোবাইল ফোনের অবাধ ব্যবহারের ফলে ছেলেরা মেয়েদেরকে একটু বেশি জ্বালাতন করে। নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বেই মোবাইল হাতে আসার কারনে তারা মোবাইলের সঠিক ব্যবহার না করে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করাটাই তাদের মোবাইলের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। একজন মেয়ে অনেকগুলো ছেলের সাথে কথা বলে কিন্তু তার পরিবার এ ব্যাপারটি কিছুই জানে না। প্রাথমিক অবস্থায় এটা তার কাছে Uneasy মনে হলেও পরে সে এটাকে খেলা মনে করে থাকে।

[এই সমস্যাগুলো মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য] ০৮। রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার ঃ- আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কিছু ছেলেকে এমন সাহস জোগায় যে তারা যে কোন কাজ নির্ভয়ে করতে পারবে। কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। যার ফলে তারা মেয়েদেরকে একটু বেশীই উক্ত্যক্ত করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কারণগুলিঃ- ১।

বয়স ২। মিডিয়া ৩। পরিবেশ ৪। বাজে আড্ডা ৫। ধর্মীয় অনুশাসন না মানা ৬।

সঠিক গাইড লাইনের অভাব ৭। মোবাইল ফোন (বিস্তারিত উপরের অংশ প্রযোজ্য) ০৮। বেপর্দা ঃ- মেয়েদের ক্ষেত্রে, তারা অতি আধুনিক হয়ে টাইপ পিট জামা পরিধান করে যা স্বাভাবিক ভাবে একজন ছেলেকে তার প্রতি আকর্ষণ করে। যার ফলে সে ইভ টিজিং এর শিকার হয়। শুনতে খারাপ লাগলে ও সত্য, ছেলেরা যদি শরীরের ১০০ ভাগের মধ্যে ৭৫ ভাগ কাপড় দিয়ে ঢাকে, তবে বেশির ভাগ মেয়েরা তাদের শরীরের ১০০ ভাগের মধ্যে ২৫ ভাগ মাত্র কাপড় দিয়ে ঢাকে।

০৯। নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা ঃ- আমি বলবো হতো ছেলেরা মেয়েদের ইভ টিজিং করে, তবে মেয়েরাই তাতে ছেলেদের আগ্রহী করে তোলে। বাংলাদশেরে মত ধর্ম ভীরু একটা দেশে যদি একটা মেয়ে ওড়না ছাড়া হাতাকাটা বডি জামা, টাইট ফিট জামা পরে তাদের স্তন জোড়া সবার চোখে সদৃশ করে তোলে, তার কোমরের নিচে হতে পায়ের গোড়ালীর উপর পর্যন্ত টাইট-ফিট গেঞ্জি পরে সবার সামনে ঘুরে বেড়ায়, তবে কেন একটা ছেলে সে ব্যপার নিয়ে কথা বলবে না? মেয়েটা যদি তার শালীনতা বজায় রাখতো তবে কোন ছেলে তাকে টিজ করার সুযোগ পেতোনা। তবে হ্যাঁ কছিু ছলেে যে বখাটে তা আমি অস্বীকার করবোনা। কন্তিু সবাই যে বখাটে তা আমি কখনো স্বীকার করবোনা।

ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে যারা ঃ- সাধারণতঃ উঠতি বয়সের যুবক-যুবতী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশী ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। ইভটিজিং কি বন্ধ হবে না ঃ- এই প্রশ্নের উত্তরটি এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ উপরে বর্ণিত কারণগুলি বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, ধর্মীয় অনুশাসন এবং অতি আধুনিকতা এই দুইটি জিনিসের প্রতি একটু গুরুত্ব দিলেই ইভ টিজিং বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে হয়। এ ছাড়াও প্রত্যেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে বিপরীত লিঙ্গকে নিজ পরিবারের সদস্য বলে মনে করলে ইভ টিজিং বন্ধ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। লেখক ইউছুফ আলী মোবাইল : ০১১৯৫১০১৯৪৮ E-Mail : , ইন্টারনেট ভিলেজ(কলেজ লাইব্রেরীর একটি শাখা প্রতিষ্ঠান)বসুরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।

Basurhat, Companigonj, Noakhali ফেনী সরকারী কলেজরাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ১ম বর্ষ, ২০১০রোল নং : ২০৩৩

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.