বিএনপির তিন বছর : নেতিবাচক রাজনীতির বাইরে যেতে পারেনি
বেগম জিয়ার ইচ্ছায় তাঁর ছেলে তারেক রহমানকেই বানাতে হবে বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগে মামলা চলছে। বেগম খালেদা জিয়া একে সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিতে চান।
মহাজোট সরকারের তিন বছরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে তেমন সোচ্চার হতে পারেনি।
তিন বছরে ১১ দিন হরতাল করলেও দুটি ছাড়া সব ছিল দলের শীর্ষ নেতা ও তার পারিবারিক ইস্যুকেন্দ্রিক।
সংসদে গিয়ে জনগণের সমস্যা ও চাহিদা নিয়ে কথা বলেনি বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের বন্ধুর ভূমিকায় থাকা বিএনপির অবস্থান এখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। আর সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, বোমাবাজি ও তৎপরবর্তী মামলায় দলটি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাসা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে ১৪ ও ৩০ নভেম্বর হরতাল করে বিএনপি।
গত ১৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গমুখী রোডমার্চে বগুড়ার জনসভায় যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তৃতা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
তিনি সরাসরি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক অভিহিত করে আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানান।
এমনকি গত ৩ ডিসেমবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবি জানান। এ দাবি বিএনপির তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি ছিল গত তিনবছরজুড়েই।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও গ্রুপিং রাজনীতির একটি প্রভাব প্রচ্ছন্নভাবে ফুটে উঠেছে।
ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সম্পাদকমণ্ডলীর পাশাপাশি অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোতে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চরমে। এ কারণে কর্মসূচি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে ব্যাপক চ্যালেঞ্জে পড়ছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদ সম্মেলন ও সভা-সমাবেশে প্রতিদিনই ঘুরেফিরে একই চেহারা দেখা যায়।
বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ ও ছাত্রদলের সমাবেশে একই কর্মী-সমর্থকরা অংশ নিচ্ছেন। জিয়াউর রহমানের চালু করা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুনরায় চালু করলেও মৌলিক কর্মী সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেই।
যার ফলে হরতাল বা চ্যালেঞ্জের কোনো কর্মসূচিতে কর্মীরা মাঠে নামছে না। কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরুদ্ধ অফিসে বসে থাকতে দেখা যায় সিনিয়র নেতাদের।
মোট কার্যদিবস ২৫৪ দিনের মধ্যে বিএনপি উপস্থিত ছিল ৫৪ দিন, অনুপস্থিত ২০০ দিন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ছয় দিন। এই সময়ে তিনি সংসদে ভাষণ দিয়েছেন চার ঘণ্টা ৩৪ মিনিটি।
অথচ বিএনপি সব সময় অভিযোগ করছে যে সংসদে ওদের কথা বলতে দেওয়া হয় না! বিএনপি সর্বশেষ সংসদে গেছে ১৫ মার্চ, ২০১১।
আর বিএনপির সাংসদেরা অধিবেশনে না যান, তাহলে তাদের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যেতে পারে। হয়তো সে কারণে তাঁরা কৌশল হিসেবে একবার সংসদে উঁকি দেবেন।
নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপি বলেছিল, ‘ইস্যুভিত্তিক ওয়াকআউট ছাড়া কোনো দল বা জোট সংসদের সেশন বা বৈঠক বর্জন করতে পারবে না। ’ এখন ওরা ঠিক বিপরীত কাজটিই করছে।
অধিবেশন বর্জন করলেও বিএনপি প্রথম থেকেই নয়টি সংসদীয় কমিটি ও ৩৯টি মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রয়েছে।
আবার বেতন-ভাতা গ্রহণ, বিদেশ সফর এবং শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার সুযোগ নিতে চারদলীয় জোটের সাংসদেরা দ্বিধাবোধ করেন না। এ ব্যাপারে তাঁদের কেউ পেছনে পড়ে নেই।
গত তিন বছরে বিএনপির রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সেই একই ধারায় রাজপথ উত্তপ্ত করার কর্মসূচি। নির্বাচন বর্জনের হুমকি। সরকার পতনের আহ্বান।
তিন বছরে ১১টি হরতাল দিলেও তা সফল করতে পারেনি, দলটি সারাদেশে ৭৮ সাংগঠনিক কমিটি গঠনেও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, গত অষ্টম সংসদে এই হার ছিল ৬০ ভাগ, সপ্তম সংসদে ছিল ৪৩ ভাগ।
নবম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার সংসদ উপস্থিতি হচ্ছে মাত্র ২. ৯ শতাংশ। মাত্র ৬ দিন।
পথসভা ও জনসভায় নামে মানুষের ঢল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ কমিশন, জেলা প্রশাসক সর্বোপরি সরকারের অভূতপূর্ব সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এই রোডমার্চ। তবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় দেশবাসীর সমালোচনার শিকার হন তিনি।
তবে বিএনপি বছরের একেবারে শেষে দিকে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। মহান বিজয় দিবসের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দুপুর আড়াইটায় শুরু হবার কথা থাকলেও ভোর ৬টায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দলীয় নেতাকর্মী নামিয়ে শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে তোলে। এদিন ভোর পৌনে ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস মোড়, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর মোড়, কাকরাইল মোড়, বিজয়নগর মোড়, নয়াপল্টন, পল্টনমোড়, মুক্তাঙ্গন, বায়তুল মোকাররম, জিরো পয়েন্ট, গোলাপাশাহ মাজার, চাঁনখারপুল মোড়, শাহবাগ মোড়, পরিবাগ মোড়, মহাখালী ওয়ারলেস ও মতিঝিলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণে গোটা রাজধানীতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ঢাকার বাইরে সিলেট মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে অগি্ন সংযোগের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে মারা হয়।
মতিঝিলে ককটেল বিস্ফোরণে আরিফুজ্জামান নামে এক যুবক মারা যায়। ঢাকার উত্তাপ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সহিংস ঘটনার জন্ম হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভোর ৬টায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়াকে অনেকে জামায়াত ফরম্যাটে বিএনপির আন্দোলন বলে আখ্যা দেয়
তথ্য সূত্র: দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।