২০১২ সালের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর জাসদ সভাপতি ও মহাজোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী বিজয় অনুষ্ঠানের সমাপনী সভায় বিরোধী দলের নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হয় জামায়াত, নয়তো রাজনীতি ছাড়–ন। ’ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ অনেকেই আছে। তবে হাসানুল হক ইনু বিগত বছরের বহু বক্তৃতায় খালেদা জিয়াকে জামায়াত ছাড়ার সুপরামর্শ দিয়েছেন। বাস্তবে খালেদা জিয়া তা পারবেন বলে মনে হয় না। তাহলে কি তিনি রাজনীতি ছাড়বেন! না, তাও নয়।
তিনবার প্রধানমন্ত্রী থেকেও খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ কমেনি। আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন খালেদা জিয়া তাদের পক্ষে কথা বলেছেন, মুক্তি দাবি করেছেন। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে হরতাল আহ্বানকারী জামায়াত-শিবিরের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে যারা সক্রিয় তাদের সমর্থন দিয়ে খালেদা জিয়া কত বড় রাজনৈতিক ভুল করেছেন তা হয়তো তিনি উপলব্ধি করেননি। বাংলার মাটিতে বেঈমানরা গণধিকৃত ও মানুষের দুশমন হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
মীরজাফর, মীর কাসেম, গোলাম আযম, নিজামী, মোশতাকরা ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত। মওদুদী, আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, মওদুদ, সাকা চৌধুরী জনগণের কাছে বিতর্কিত ও ধিকৃত ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খালেদা জিয়ার নাম।
ইতিহাসের দাবানলে পুড়তে থাকবে আরো বহুজনের নাম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের আগমনে জেনারেল জিয়ার ভূমিকা ইতিহাসের কালো অধ্যায়রূপে চিহ্নিত।
খালেদা জিয়াও স্বেচ্ছায় ইতিহাসের উল্টোপথে গিয়ে কালো অধ্যায়ের তালিকাভুক্ত হয়ে পড়লেন। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি পুরনো হলেও তার অবসান ঘটবে ঐতিহাসিক নিয়মে। এদেশের মাটিতে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি টিকেনি। পাক সেনারা বাঙালিদের উপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েও টিকেনি, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েও পরাজিত হয়েছিল। ইতিহাসের এ শিক্ষা নেয়নি খালেদা জিয়া।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাক সেনারা তাদের সব অফিসার, জওয়ান ও সহায়ক শক্তিসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই সূত্রে সহায়ক শক্তি হিসেবে জামায়াত-শিবিরও আত্মসমর্পণ করা দল। জামায়াতের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল ও ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াত ও রাজাকারদের পলাতক থাকাই স্বাভাবিক ছিল। ’৭৫-এর পনেরই আগস্ট জাতির জনকের হত্যার পর রাজাকাররা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছিল। ৩৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সুযোগ পায় জিয়ার তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের সুযোগে।
৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে জামায়াত পুনর্বাসিত হয়। ৫ম সংশোধনী বাতিলের পরও জামায়াত কেন সক্রিয় থাকল! সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে বরং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে না বলেও সরকারি ঘোষণা দেয়া হলো কেন তা নিয়েও প্রশ্ন আছে জনমনে।
জামায়াতে ইসলামী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক। তারা বাস্তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না।
ধর্মীয় লেবাস আর ধর্মের কালোবাজারি তারা করবেই। তাদের সহিংস ও অসুস্থ রাজনীতির ধারাকে সমর্থন দেয় বিএনপি। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবি করলেও জামায়াত ত্যাগ করেননি। তাদের নিয়ে জোটবদ্ধ রাজনীতি করে দেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে চলেছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাদের বিচার চলছে।
ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং তাদের রায়ের অপেক্ষায় জনগণ। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আবদুল কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারসহ বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার চলছে। জনগণ শুধু ব্যক্তির নয়, সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা ও ধর্মের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেছে। ইউরোপে নাৎসীদের রাজনৈতিকভাবে দলীয় তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যৌক্তিক দাবি।
সংবিধান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বাস্তবায়ন চাইলে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাই শ্রেয়। বিএনপি তাদের সমর্থন দিয়ে রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জামায়াতের আছে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা। প্রয়োগক্ষেত্রে জঙ্গিদের মাঠে নামিয়ে তারা সহিংসতার প্রমাণ রেখেছে সরকারি দায়িত্বরত সশস্ত্র পুলিশকে আক্রমণ করে, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করে। এদেশে জঙ্গিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ, সংগঠনও নিষিদ্ধ।
তাহলে জঙ্গিসমর্থক ও সংশ্লিষ্ট জামায়াত কেন নিষিদ্ধ নয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বড় রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয় ও সমর্থন ছাড়া এদেশে জামায়াত টিকতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা। আমেরিকা মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ ও অভিযান পরিচালনা করে। অথচ সে দেশের রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা করে শিবির কর্মীরা দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণের কথা বলার পরও তাদের নিষিদ্ধ করার তৎপরতা নেই।
জনগণ এ ব্যাপারে আমেরিকার তৎপরতাও বেশি লক্ষ্য করেনি। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের কথা বলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা সমালোচিত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখান করেছেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী খালেদা জিয়াকে জামায়াতের অঘোষিত ভারপ্রাপ্ত আমীর বলে আখ্যায়িত করার পরও তিনি জামায়াত ত্যাগ করেননি। তার দলের মহাসমাবেশ থেকে প্রথম পর্বেই জামায়াত নেতারা বক্তৃতা করে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি করেছেন।
মহাসমাবেশের ৬০ ভাগ পোস্টার-ফেস্টুন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিসম্বলিত। রাজধানীর পথসভায় খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে ‘সাপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাপের খেলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, পালিত সাপের কামড়েই একদিন খালেদা জিয়ার মহাবিপদ হবে।
খালেদা জিয়া মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন জামায়াত-শিবিরের পক্ষ ত্যাগ করে। বাস্তবে তিনি রাজপথের আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ৩৬ জন নেতার জেলখাটা ও জামিন নেয়া তার বড় প্রমাণ। খালেদা জিয়া দেশে জরুরি অবস্থা আনার বহু চেষ্টা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থার আশঙ্কা নাকচ করেছেন।
জামায়াতের আতঙ্ক সৃষ্টির ধারাবাহিক তৎপরতাকে সমর্থন দিয়ে খালেদা জিয়া বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় পুনরায় গ্রেফতার হয়ে ৬ মাসের অন্তবর্তী জামিন পেয়েছেন। পরবর্তীতে অন্য ২টি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ১২ মামলা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ২৭ নেতা নতুন করে হুকুমের আসামি হচ্ছেন।
যখন মাত্র এক বছরের সময়ে নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে দল গুছিয়ে আগামী দশম নির্বাচনের জন্য অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন, সেই সময় বিএনপির গৃহদাহ ও ভাঙন দলের অস্তিত্বই সংকটগ্রস্ত করেছে। আবোল-তাবোল কথা বলে খালেদা জিয়া-মওদুদ আহমদ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনগণের কাছে হাসি-তামাশার পাত্র হয়ে উঠেছেন। খালেদা জিয়ার পরিবার ২৭টি দুর্নীতির মামলায় পর্যুদস্ত। চীন ও ভারত সফরের পর রাজনীতির নতুন মেরুকরণের আশা জাগলেও বিএনপি ভুল পথে পরিচালিত হয়ে আত্মধ্বংসী হয়ে ওঠে। সংসদ বর্জনের রেকর্ড ভেঙেছে বিএনপি।
৮৩ দিনের মধ্যে মাত্র ১২ দিন উপস্থিত থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতা তুলে নিয়েছেন সাংসদরা। দেশ ও জনগণের প্রতি সঠিক ভূমিকা পালন না করে বিএনপি ক্রমাগত বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের নেতা-নেত্রীদের হতাশা চরমে পৌঁছে গেছে। বিশেষত জাতি যখন যুদ্ধাপরাধের জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ, বিএনপি তখন পশ্চাৎপন্থী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার মিশনে তৎপর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইসলামী ব্রাদারহুডের প্রবেশ আর তুরস্কের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্থগিত করার অনুরোধ বিস্ময়কর।
এ ব্যাপারে বিএনপির কথা বলার প্রয়োজন থাকলেও তারা রহস্যজনকভাবে নীরব। জনগণ খালেদা জিয়ার এ ভূমিকা ভালো চোখে দেখছে না। ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি চূড়ান্ত বিজয়ে পৌঁছে। গত বছর বিজয়ের মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি জামায়াতের তৎপরতাকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল, পারেনি। বিদেশী বন্ধুরাও বিএনপির এ তৎপরতাকে ভালোভাবে নেয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে তারা সমর্থন দেবেন না বলেও জানিয়েছেন। শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা বাংলাদেশের পবিত্রতা রক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধারা বদ্ধপরিকর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথে থাকবেন। অপশক্তিকে মোকাবেলা করার এ পন্থায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ রয়েছেন। জাতি এবার যুদ্ধাপরাধীদের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে চায়।
বিজয়ের মাসে এদেশের ক্রিকেটাররা বিজয়ী হয়ে আনন্দ করলেও বিএনপি রাজপথে বিক্ষোভ পালন করেছে। জনগণ এটা ভালোভাবে নেয়নি।
২০১২ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিনে শিখা চিরন্তনী থেকে বাঙালি শপথ নিয়েছে রাজাকারদের রুখে দেয়ার জন্য। আজ বাংলাদেশের মানুষ বিভক্ত হয়েছে একাত্তরের ন্যায়Ñ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আর বিপক্ষ শক্তিরূপে। ১৯ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার পরও জামায়াত নেতা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনাকে পুনরায় সপরিবারে হত্যার হুমকি দিয়েছে, বিচারকদের মোবাইল মেসেজে হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছেন।
জামায়াতের তৎপরতা গোয়েন্দাজালে রয়েছে। সরকারের কঠোর তৎপরতা না থাকায় এবং খালেদা জিয়ার প্রশ্রয় ও সহনশীলতায় জামায়াত-শিবির সর্বশেষ ছোবল হানার অপেক্ষায় আছে। প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া আইনের শাসন চাইলে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন দেন কেন? তিনি গণতন্ত্র চাইলে দলীয় নেতা-কর্মীদের গণবিরোধী কর্মসূচিতে ঠেলে দেন কেন? বিএনপি ইসির সংলাপে না গিয়ে ভুল করেছে। দিনের পর দিন সংসদ বর্জন করেও ভুল করছেন। সংসদে গিয়ে দলীয় দাবি উত্থাপন করলেই গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় ফুটে উঠবে তা তাকে বুঝতে হবে।
রাজপথের কর্মসূচিতে হুঙ্কার আর আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা শান্তিপ্রিয় জনগণ পছন্দ করে না। জামায়াতকে বিএনপির আত্মঘাতী ও অন্ধ সমর্থন জনগণের পছন্দ হয়নি। বিএনপিকে জামায়াতের কবল থেকে সুরক্ষা করার নেতৃত্বও নেই বিএনপিতে! বিএনপি ভাঙনের মুখে পড়তে পারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি এ দল থেকে বেরিয়ে এলে। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি-জামায়াতের কর্মকা-ে জনগণ বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন। গত বছরের ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি দলের শক্তিমত্তা জানান দিলেও জিয়া চেরিটেবল মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনের মামলা খালেদার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে।
১৮ মার্চ বিএনপির সাংসদ রেহানা আক্তারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদ অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নারী সাংসদের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়েছিল। শক্তিমত্তাকে আরো বৃদ্ধি করার জন্য বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট থেকে ১৮ দলীয় জোট গঠন হয় গত বছরের ১৮ এপ্রিল। ২০ মার্চ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণঅনশন চলে। বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোট হাইকোর্টের রায়ে জাতীয় সংসদে বাতিলকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনে আজো আন্দোলনরত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল প্রতিরোধে বিএনপি সংসদে যায়নি।
এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবন অথবা নতুন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপন করেনি জাতীয় সংসদে গিয়ে। সংসদে ভূমিকা পালনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএনপি রাজপথেই কাটালো বছরের পর বছর। সংসদ নির্বাচনে পরাজিতরা রাজপথের হিরো হতে বিএনপির সঙ্গে যোগ দিয়েছে। জনগণ এটাও ভাবছে যে, আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদত্যাগীদের রাজপথ থেকে সংসদে যাওয়ার অনুমোদন দেবে কিনা। সংসদীয় গণতন্ত্র, সংবিধান ও গণস্বার্থ রক্ষায় বিএনপিকে কেন জনগণ আগামী সংসদে পাঠাবেন তাও বিবেচনার বিষয়।
জনগণের সমর্থনের অবমাননা করে যারা সংসদ নয় রাজপথই শ্রেয় মনে করে তাদের আর নির্বাচনের প্রতি, ভোটের প্রতি আস্থা আছে কিনা তা নিয়েও জনমনে সংশয় রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া একের পর এক ভুল পথে হাঁটছেন, ইতিহাসের বিপরীত নিয়মে চালিত হচ্ছেন অপশক্তির দৌরাত্ম্যে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।