আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঙ্গ মঞ্চের বিপিএলঃ বরিশাল-চিটাগাং নাটকের পোস্টমর্টেম

"বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র" অবশেষে বিপিএল এর বরিশাল-চিটাগাং নাটকের সমাপ্তি ঘটল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বরিশাল বার্নার্স চতুর্থ দল হিসেবে সেমি ফাইনালে। সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (২৮শে ফেব্রুয়ারি,২০১২) বলা হয় “বরিশাল বার্নার্স (০.১৭৮) ও চট্টগ্রাম কিংস (০.০৭৮) নিজেদের মধ্যে একটি করে ম্যাচ জিতেছে, সে জন্য রান রেটের হিসেবে সেমিফাইনালের চতুর্থ দল হিসেবে খেলবে বার্নার্স। ” আজ (২৮শে ফেব্রুয়ারি,২০১২) দুপুর দুইটায় তারা মুখোমুখি হবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল দুরন্ত রাজশাহীর। অন্য ম্যাচে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স মুখোমুখি হবে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা রয়েল বেঙ্গলস এর।

নাটকের শুরু যেখানেঃ গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারি চিটাগাং কিংস এর বিপক্ষে বরিশাল এর ম্যাচ দিয়ে নাটকের সুত্রপাত। সেমিতে কোয়ালিফাই হওয়ার জন্য বরিশালের শুধু জয়ই নয় দরকার ছিল বোনাস পয়েন্টেরও। লক্ষ্য তাড়া করার সময় বরিশাল বার্নার্সকে জানানো হয় সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে ১৬ ওভারে জিততে হবে। বরিশাল সেই শর্ত পূরণ করে এবং মাঠেই সেমিতে যাওয়ার আনন্দ উদযাপন করে । বরিশাল এর দর্শকরা আনন্দ র‍্যালী বের করে।

ধারাভাষ্যকাররা শুভেচ্ছা জানান বরিশাল বার্নার্স কে। তখন ঢাকা-খুলনা-চিটাগাং এই তিন দলের মধ্যে মুলত কে সেমিতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। খুলনা সেমিতে যেতে হলে তাদের জয় বাধ্যতামূলক ছিল যদিও তারা তারা ৯ খেলায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় ভাল অবস্থানে ছিল। যদি খুলনা তাদের গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় বড় ব্যবধানে হেরে যেত তাহলে তারা নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ত। খুলনা সিলেটের সাথে জিতে ২য় দল হিসেবে তাদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।

বাকি থাকে ঢাকা আর চিটাগং। ঢাকা জিতলে ঢাকা সেমিতে চলে যেত। কিন্তু হেরেও সেমিতে গেছে কারন ঢাকার নেট রান রেট (.২১০) বেশি। নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ার কারনে চিটাগাং কিংস বাদ পড়েছে। চিটাগাং কিংস কে সেমিফাইনালিস্ট ঘোষণাঃ সন্ধ্যার পরে হঠাৎ করেই খবর বেরোয় যে বরিশাল নয় সেমিতে খেলছে চিটাগাং।

কারন হিসেবে দেখানো হয় হেড-টু-হেড ম্যাচ রেসাল্ট। যেটা কিনা রুলস এন্ড রেগুলেশন এর ২২ নং অনুচ্ছেদ এর আওতায় পড়ে। হেড-টু-হেড ম্যাচ রেসাল্ট থিওরিঃ- গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন টুর্নামেন্টের বাইলজের একটা পাতা দেখিয়ে বলেন, "বাইলজের ২১.৮-এর ২ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, যদি তিন বা ততোধিক দলের সমান পয়েন্ট এবং সমান জয় হয়ে যায়, তাহলে ওই তিন দলের মধ্যকার ম্যাচগুলোয় বেশি জয় পাওয়া দলই থাকবে সবার ওপরে। ক্রমান্বয়ে থাকবে কম ম্যাচ জেতা দলগুলো। এই প্রক্রিয়া অনুসরণের পরও যদি দলগুলোর মধ্যে সমতা থেকে যায়, তাহলেই কেবল লিগ পর্বের নেট রান রেট বিবেচ্য হবে।

" এই হিসেবে বরিশাল জিতেছে মাত্র একটি( চিটাগাং এর বিপক্ষে), চিটাগাং দুইটি(ঢাকার বিপক্ষে ১টি ও বরিশাল এর বিপক্ষে ১টি) এবং ঢাকা ৩টি (বরিশাল এর বিপক্ষে ২টি ও চিটাগং এর বিপক্ষে ১টি)। তাই ঢাকা ৩য় ও চিটাগাং ৪র্থ দল হিসেবে সেমি ফাইনাল এ ওঠে। বরিশাল বার্নার্স কতৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চরম অপারগতা প্রকাশ করেন। শুরু হয় নাটকীয় সভা। তাদের দাবি নিয়ে কাল মাঝরাত পর্যন্ত সভা চলছিল বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির।

বরিশাল এর ত্রান কর্তা হিসেবে মাইক প্রোক্টের ও অরুন লাল এর আবির্ভাবঃ অবশেষে বরিশাল বার্নার্স এর ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন মাইক প্রোক্টের ও অরুন লাল। তারা সব নিয়ম ঘেটে নিচের সিদ্ধান্ত গুলো দেনঃ- ১. দুরন্ত রাজশাহী ১৪ ও খুলনা রয়েল বেঙ্গল ১২ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে ১ম ও দ্বিতীয় সেমিফাইনালিস্ট। ২. ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স, চিটাগাং কিংস ও বরিশাল বার্নার্স তিন দলেরই পয়েন্ট ১০। ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স বরিশাল ও চিটাগাং এর বিপক্ষে বেশিবার জিতে ৩য় দল হিসেবে সেমিফাইনাল এর জন্য কোয়ালিফাইড হয়। ৩. চিটাগাং কিংস ও বরিশাল বার্নার্স প্রত্যেকেই একে অপরের বিপক্ষে একবার করে জিতে।

ফলে হেড-টু-হেড ম্যাচ রেসাল্ট এ দুজনই সমান। নিয়ম অনুযায়ী তাই নেট রান রেট এর হিসেব আসে এবং বরিশাল বার্নার্স নেট রান রেটে এগিয়ে (বরিশাল বার্নার্স .১৭৮ ও চিটাগাং কিংস .০৭৮) থাকার কারনে ৪র্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে উন্নীত হয়। সর্বশেষ আপডেট দেখুন এখানে একজন ক্রিকেটের সমর্থক হিসেবে আমার আবেদন রইল বিপিএল কতৃপক্ষের কাছে, কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কয়েকবার ভেবে দেখবেন। দয়া করে এভাবে মানুষকে হয়রানির শিকার করবেন না। অপ-সংস্কৃতির কল্যানে (!) বিনোদন এর অন্যতম জগত 'মিডিয়া' তো সেই কবেই ডাস্টবিনে গেছে (যার বড় প্রমান আপনারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই দিয়েছেন), বাকি থাকা বিনোদন এর এই ক্রীড়াঙ্গনকে কলঙ্কিত করবেন না।

ক্রিকেট ভদ্র লোকের খেলা, তাই এটা পরিচালনায়ও ভদ্রলোকের পরিচয় দিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।