আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলছি রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত মেহমানদের সাথে গালগপ্পো !!!!!!!!!

বাংলাদেশের মানুষের আথিথেয়তার কথা সারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রশংসিত। সেই আথিথেয়তায় আমাদের সারাবিশ্বকে আবারো চমকে দিলো সপ্তাহখানিক আগে আমাদের এক সাংবাদিক দম্পতি। সেই কথা যখন ভাবছিলাম ঠিক তখনই আজ রাত ১২ টায় হঠাৎ করে আমার বাসার কলিংবেল এর দুই পাখী ''পিউ পিউ '' করে উঠলো। এতো রাতে পাখির কলরবে বুঝলাম কেউ হয়তো এসেছেন। "এতো রাতে কে আসলো " এই কথা ভেবে ভেবে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় দেখলাম আমার আম্মাজান ও ছোট বোন আম্মাজানের রুমের দরজা দিয়ে উকি মারছেন ।

বুঝলাম উনারা এখনও ঘুমাতে যাননি। উনারা টেলিভিশন দর্শন এর মাঝে মগ্ন রয়েছেন। যাই হোক, দরজা খুলে দেখলাম ৩/৪ জন ভদ্রলোকের মতো পোশাক পরিহিত ৩/৪ জন ভদ্রলোক। উনাদের জিজ্ঞেস করলাম ''কাকে চাই''? উনারা একেকজন শাহরুখ খান,ছাকিব খান এর মতো ৩২ টি দাঁত দেখাতে লাগলেন এবং একজন বললেন '' আমাদের চিনতে পারলেন না? আমরা ডাকাত! ঐ যে সেদিন আপনার সাথে পিকনিকে গিয়েছিলাম" ! আমি বললাম ''ওহ ! তাইতো তাইতো ভুলেই গিয়েছিলাম। দুঃখিত, ক্ষমা করবেন'।

তা এতো রাতে কি জন্য এলেন''? আমার কথা শুনে যেন উনারা আকাশ থেকে পড়লেন! এর মাঝে একজন বললেন " কেন ? আমাদের তো আজকে আসার কথা ছিল। আপনার বাসায় ডাকাতি করবো''। আমি সানন্দের উনাদের ভেতরে নিয়ে আসলাম। ড্রইং রুমে না নিয়ে আমার রুমেই উনাদের বসালাম। উনাদের একজন বসলেন আমার আকাম-কুকাম করা কম্পিউটার এর সামনের চেয়ারে।

একজন আমার বিছানার উপরে পা তুলে বসলেন। অন্য ২ জন বিছানার উপরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসলেন। ৪ জনবসার ব্যবস্থা হলো। এখন আমি বেকুব কোথায় বসি এই গণ্যমান্য মেহমান দের সামনে? আমি আমার ড্রেসিং টেবিল এর আয়নার সামনের খালি জায়গা টুকুর মাঝে আমার কোমর খানি লাগিয়ে আধা বসার ভান করলাম যেন এই ভাবেই আমি সবসময় বসে আরামবোধ করি। ইতিমধ্যে রুমের বাহির হতে অল্প ভলিউমে আম্মাজান এর ডাক শুনতে পেলাম।

আমি মেহমানদের বললাম একটু আসছি বসেন। উনারা উনাদের মাথা দুলিয়ে অনুমতি দান করলেন। আম্মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ''পাপ্পু উনারা কে ?" আমি বললাম ''উনারা ডাকাত সম্প্রদায়ের লোক। আমাদের সাথে একটু আড্ডা দিতে এসেছেন''। আমার কথা শুনে আম্মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন!!!!!!!!! আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আতংক গ্রস্থ অবস্থায় বললেন " কি বলিস এসব? তাড়াতাড়ি পুলিশ কে ফোন কর''।

আমি আম্মাজান কে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বললাম যে ''উনারা ডাকাত হলেও লোক ভাল। আমাদের কোন ক্ষতি করবে না। একটু আড্ডা দিয়ে চা খেয়ে বিদায় নিবে''। আম্মাজান কে আতংক থেকে মুক্ত করে আমি আমার রুমে প্রবেশ করলাম। এবার ডাকাত দলের একজন আমাকে বললেন "আসলে ভাই এতো রাতে আপনাকে বিরক্ত করার কোন ইচ্ছা আমাদের ছিল না।

আমরা আমাদের কাজে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্য আমাদের পুলিশ তাড়া করলে আমরা দৌড়ে আপনার বাসার গেইট খোলা দেখে ঢুকে পড়ি। এরপর আপনার বাসার দারোয়ান (মনে হয় প্রস্রাব করিতে তাহার কামরায় প্রস্রাবখানায় গিয়েছিল) আমাদের দেখে জিজ্ঞাসা করে আমাদের পরিচয় জানতে চায়। উনাকে আমাদের পরিচয় দেয়ার পর উনি হো হো করে হেসে উঠেন। উনার হাসির কারন জানতে চাইলে উনি আমাদের বলেন '' মিয়া ! এই বুদ্ধি লইয়া আপনারা ডাকাতি করেন? আপনারা জানেন না আমাদের দেশের জনগণের বেডরুম সবচেয়ে নিরাপদ।

সেখানে পুলিশ থাকে না। আপনারা আজকে আর আপনাদের কামে যাইয়েন না। উপরে গিয়া এই বাসার ভাইজানের রুমে আশ্রয় নিয়া আড্ডা মারেন। ঐখানে পুলিশ গিয়া আপনাগো খুঁজতে যাইবো না। আর যদি আপনাদের কাম করার বেশী দরকার পরে তাহলে ভাইজানের বাসায় জিনিসপত্র নিয়া যাইয়েন।

'' এই কথার পরে আমরা বুঝতে পারি আসলেই তো দারোয়ান ভাই ভালো বুদ্ধি দিছে। তাই আপনার এখানে আসা। '' ডাকাতের আসার গল্প শুনে বুঝলাম হুম ,আমার বেডরুম আমার জন্য নিরাপদ নয়, ডাকাতদের জন্যই নিরাপদ। যাক আমাদের দেশ তাহলে অনেক উন্নতি করছে। এই ভেবে খুশিতে নিজের চুল ছিঁড়তে লাগলাম ।

তখন হঠাৎ এক ডাকাত সাহেব আমার কম্পিউটার এর টেবিলের উপরে বেনসন সিগারেট এর প্যাকেট দেখে জিজ্ঞেস করলেন ''ভাইজান এর রুমে কি সিগারেট খাওয়া যাবে ?" আমি আমার ৩২ খানা দাঁতের মধ্য ১৬ খানা বের করে হাসি দিয়ে বললাম কেন খাওয়া যাবে না? খান খান, আমার কাছে সিগারেট আছে নিতে পারেন। '' আমার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উলটো ডাকাত দলের এক ভদ্রলোক বললেন ''না ভাইজান। আপনার টা থাক। এমনিতেই আপনারে কষ্ট দিতাছি। আমাদের কাছে সিগারেট আছে।

'' এই বলে তার কোটের পকেট থেকে 'ডানহিল' সিগারেট এর প্যাকেট বের করে আমাকে সিগারেট দিতে লাগলেন। প্যাকেট দেখে আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম যে ''এতো বড় একজন মানুষের সামনে সিগারেট খাবো তাও আবার তার কাছ থেকে নিয়ে দেখতে কেমন লাগে!!!! আমার দ্বিধাগ্রস্ত দেখে ভদ্রলোক উনার মুখের উপরের পাটির ৪ খানা দাঁত বের করে বললেন '' লজ্জা পাচ্ছেন কেন? নিন ,কোন সমস্যা নেই। আপনি তো আমাদেরই ভাই ব্রাদার। '' সিগারেট ধরাতে যাবো এমন সময় আমার রুমের দরজার বাহির থেকে ঠক ঠক আওয়াজ আসলো। আমি সিগারেট না ধরিয়ে ডাকাতবৃন্দের অনুমতি নিয়ে রুমের বাহিরে গেলাম।

রুম হতে বের হতেই দেখি আমার আম্মাজান ৫ কাপ চা, কেক ও ঘরে বানানো মিষ্টি হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার হাতে ট্রে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করিলেন ফিসফিস করে "উনাদের কেউ কি পান খায় নাকি? পান দেয়া লাগবে?" আমি আম্মাকে বললাম "আম্মাজান উনারা অনেক বড় মানুষ। উনারা কি আপনার এই বঙ্গের খোলা বাজার থেকে কেনা সবুজ রঙের সস্তা পান খাবেন? এই পান দিলে আরও উনাদের অপমান হতে পারে। উনারা বিদেশি পান খেয়ে থাকেন। আপনার চিন্তার কোন কারন নেই।

'' এই বলে আমি চায়ের ট্রে খানা নিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমার হাতে চা ও টা দেখে উনারা যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। একজন আমতা আমতা করে বলতে লাগলেন ''ছিঃ ছিঃ ভাইজান! এতো কষ্ট করার কোন দরকার ছিল না। আমরা রাতে ডিনার করেই এসেছি একটা ইন্দিয়ান রেস্টুরেন্টে। '' উনার কথা শুনে আমার হাত কাপতে লাগলো এই ভেবে যে '' ইন্দিয়ান রেস্টুরেন্টে ডিনার করা ব্যক্তিবর্গদের আমি বাংলার ভেজাল তেলের জিনিস খাওয়াচ্ছি!!!!!!! লজ্জায় নিজেকে আমার খাটের নিচে লুকাতে ইচ্ছে করছে।

তবুও নিজেকে সামলে বললাম "না ভাই, তেমন কিছু না, এই একটু চা আনলাম''। চায়ের ট্রে রেখে খেয়াল করলাম যে ডাকাত সাহেব আমার বিচ্ছানার উপর পা তুলে বসেছিলেন উনি উনার কোলের উপর এইচপি ব্র্যান্ড এর ল্যাপটপ নিয়ে গুঁতোগুঁতি করছেন। সেই ল্যাপটপ এর কোনায় আবার একটি ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট এর মোডেম লাগানো। বুঝলাম! উনি খুব জরুরি কাজে ব্যস্ত। এবার চায়ে চুমুক দিতে দিতে নিজের মাঝে একটু সাহস এলো।

তাই মনে জাগা একটি প্রশ্ন সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম ''আচ্ছা ভাই,আপনারা খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ঘটনা পড়েছেন? পুলিশ প্রথমদিন বললো রান্না ঘরের গ্রিল কাটা ছিল। তবে যেটুকু কাটাছিল তা দিয়ে খুব বড় জোর ছোট কোন বাচ্চাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে কিন্তু কোন পূর্ণবয়স্ক লোকের পক্ষে ঐ ছিদ্র দিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়। আজ আবার শুনলাম ঐ ছিদ্র দিয়েই ৫/৬ জনের ডাকাতদল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছিল, এইটা কিভাবে সম্ভব? আমার কথা শুনে ডাকাত দলের বড় সাহেব বললেন ''ভাইজান যে কি বেকুবের মতো কথা কইলেন আপনার কথা শুইন্না আমার হাসি আসতেছে। আরে ভাই আপনি জানেন না বাংলাদেশের পুলিশ যদি চায় আপনারে ইন্দুরের গর্ত দিয়া ঘরে প্রবেশ করাইতে হেই গর্ত দিয়া ইন্দুর ঢুকতে না পারুক আপনি ঢুইকা যাইতে পারবেন এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত থাকেন। আপনি জানেন না? ঐ গ্রিল প্রথম দিন যতটুকু ছিল ঐ বেকুব পুলিশ ঐটা দেইক্ষাই সাংবাদিকদের হাছা কথাই কইছিল।

কিন্তু যখন দেখলো ঐ ছিদ্র দিয়াই সবকিছু সাজাইতে হইবো তখন ছিদ্রও দিন দিন মানুষের মতো উচ্চতায় বৃদ্ধি পাইতে লাগলো। প্রথমদিন যতটুকু ছিদ্র ছিল ৭ দিন পর ঐ ছিদ্র তার ৭গুন বড় দেখা গেলো। তার মানে ৭ দিনে ঐ ছিদ্র আরও বড় হইছে। এখন এই বড় ছিদ্র দিয়া হাতি ঘোড়া অনায়াসে রান্নাঘরের বাহির হতে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে এবং ভেতর থেকেও বাহিরে কোন রকম বাঁধা ছাড়াই যেতে পারবে। '' ডাকাত দলের বসের কথা শুনে আমিও মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম আসলেই তো কথা ঠিক।

উনি আমাকে আরও বলতে লাগলেন '' এই যে দেখেন আপনারা সবাই সাগর রুনি হত্যা নিয়া এতো তোলপাড় করতেছেন তাতে কোন লাভ হয়েছে? আমি বললাম না কোন লাভ হয় নাই। আমার জবাব শুনে উনি বললেন ''এই তো আরেকটা বেকুবের মতো কথা বললেন!!!!! সাগর -রুনির পরিবার এর কোন লাভ হয় নাই তবে একটা লাভ হইছে ঠিকই। আপনারা চিল্লাচিল্লি করতে করতে ঐদিকে রান্নাঘরের কাটা গ্রিলের ছোট ছিদ্র ছোট থেকে বড় হইছে। আরে ভাই আপনারা খুনি ধরো ! খুনি ধরো! না চিল্লাইয়া আগে পুলিশ কে বলেন যে প্রথমদিনের ছোট ছিদ্র এতো বড় হইলো কেমনে? কে বা কারা এই ছিদ্র বড় করছে এইটা বাহির করতে দেখবেন সব রহস্য সমাধান হয়ে যাবে। '' আমি অবাক হয়ে ডাকাত দলের বসের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আসলেই তো ঐ ছিদ্র বড় হওয়ার কাহিনী বের হলেই তো সব সমাধান। এই না হলো ডাকাত দলের বস! এমন সময় ডাকাত দলের এক সদস্য বলে উঠলেন বস চলেন আমরা বের হই। মিয়া ভাইরে অনেক কষ্ট দিছি। এখন আমরা যেতে পারবো কোন সমস্যা নাই। তার কথা শুনে যেন নিজের ভেতর খুশিতে একটা ''শিলাকি জওয়ানি'' নৃত্য অনুভব করলাম।

বিদায় নেয়ার সময় ডাকাত দলের দলনেতা (বস) বললেন '' ভাইজান রে একটা অনুরোধ কইরা যাই আশা করি রাখবেন। আপনার ঘরের ভ্যানটিনেনটাল সহ যত ধরনের ছিদ্র আছে সব কাইল থেইক্কা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন। নইলে আপনার ঘরের মাঝে যে কাইল সাগর-রুনি মতো ঘটনা ঘটবে না তার কোন গ্যারান্টি নাই। তখন এই ছিদ্রই বিপদে ফেলবো। দেখেন নাই ঐদিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী কইলেন ''কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব না।

'' ঐদিন এর পর থেইক্কা বুঝলাম যে আমাদের মতো ডাকাতদের জন্য আপনাদের বেডরুম সবচেয়ে নিরাপদ কিন্তু আপনার বেডরুমে আপনি নিরাপদ নন। তাই জলদি সব ফুডাফাডা বন্ধ করেন । আলো বাতাস ঘরে ঢুকার কোন দরকার নাই, ডাকাতের হাতে খুন হওয়ার চেয়ে ঘরের ভেতর অক্সিজেন এর অভাবে দম বন্ধ কইরা মরা অনেক ভালো না ভাইজান????? আমি এই প্রশ্ন শুনে মাথা নাড়িয়ে ডাকাত দলের বসের কথায় সহমত/একমত প্রকাশ করে সানন্দে আমার হস্ত একেকজনের দিকে বাড়িয়ে সবার সাথে হস্তমর্দন করতে করতে মেহমানদের দরজা খুলে বিদায় জানালাম। একটি শিক্ষিত রেডিও  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.