সন্ধ্যার কালো আস্তরণে রাত নেমে আসলে , মৌনাতা ভেঙ্গে ওরা ধীরে ধীরে উঠে দাড়ায় । সাদা দাড়িতে ওদের মুখ ঢাকা , কেউ কোনদিন ওদের আসল চেহারা দেখেনি । সব মিলিয়ে ওরা সাতজন আটজন হবে , সবাই অন্ধ । সারাদিন ওরা কিছুই খায় না , রাত নামলে সারিবেধে চলে আসে কারো বাড়ির উঠোনে , গোল হয়ে বসে মাটিতে , মাঝখনে জ্বেলে দেয় দুটি মোমবাতি । চাঁদের আলোয় এমন দৃশ্য দেখে বাড়ির শিশুরা কেঁদে উঠে ।
এ গ্রামের সবাই চেনে ওদের , জানে ভাত না দেয়া পর্যন্ত এরা উঠবে না ভোরের আগে । ওদের কাউকে কোনদিন কথা বলতে দেখেনি কোন মানুষ , কিন্ত ওরা বোবা না , সাররাত অদ্ভুত স্বরে কিছু একটা আওড়াতে থাকে । এ এলাকায় প্রথম কবে এরা এসেছে তাও কেও বলতে পারেনা , গ্রামের সব চেয়ে বৃদ্ব রমিজ শেখ ও ঠিকভাবে বলতে পারেনা তাদের আগমনের ইতিহাস । তবে সবাই জানে এরা অনেক দিন ধরে এই গ্রামে আছে , দিনের বেলা গ্রামের কোথাও তাদের দেখা যায় না , শুধু রাতেই তারা আসে , একদম চুপিচুপি । তাদের কোন অদ্ভুত ক্ষমতা আছে কিনা কেউ জানে না , কিন্ত সবাই তাদের ভয় পায় ।
এ গ্রামের সব আলো তখন নিভে গেছে , নিস্তব্দ চারপাশ , শুধু জোছনার আলো জেগে আছে একা । ট্রাক ড্রাইভার শামসু মিয়া বাড়ি এসেছে কিছুক্ষন আগে । পাশে কুপি জ্বালিয়ে , তেলাপিয়া মাছের মাথাটা খেতে খেতে শামসু উত্তরের জানালাটা দিয়ে তাকায় উঠোনে । চাঁদের আলোয় সে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পায় । দুটি মোমবাতিকে ঘিরে সাত আটজন বৃদ্ব বসে আছে , আর অদ্ভুত স্বরে আস্তে আস্তে কি যেন বলছে তারা ।
শামসু ভীত গলায় তার স্ত্রী জমিলাকে বলল – এই দেহ তো , আইজকা তারা মনে হয় আমাদের বাসায় আইসে । ভাত কিছু বেশি হইসে ?
জমিলা খাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়ায় , জানালার কাছে এসে কিছুক্ষন বাইরে তাকায় , তারপর নিচু গলায় বলে
- ভাত তো শেষ । এহন কি অইব ?
- বাচ্চারা কি ঘুমাইয়া পরসে ?
- হ
- তাইলে তুমি তাগো বাইরে আইনও না । দেহি কি করা যায় , জব্বার কাকার বাড়িতে জাইতাসি , তুমি ঘরেই থাহ ।
শামসু বেরিয়ে যায় আধ খাওয়া অবস্থায় ।
উঠানে দাড়িয়ে সে কিছুক্ষন দেখে নেয় তাদের সংখ্যা , কোন কোনদিন তারা আসে সাতজন , কোন কোনদিন আসে আটজন । আজ আটজন এসেছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।