I'll make you an offer you can't refuse নিরবে সৌরভ ছড়াচ্ছে দেড়শ’ বছরের পুরাতন দুর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছ। ব্যাপক ওষুধি গুণ সমৃদ্ধ এ গাছটিতে এবারও ফুল ফুটেছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পুরাতন জমিদার বাড়ির এ গাছটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমাদৃত। তবে নেই কোনো যত্ন। নেই সরকারের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ।
গাছটির বয়স সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী এর বয়স দেড় শতাধিক বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এলাকার প্রবীণরা জানান, কালীপুরের তৎকালীন জমিদার উপেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় দেড়শ’ বছর আগে অনেকগুলো রয়েল পামগাছের সাথে ভারত থেকে ওই নাগ লিঙ্গম গাছের চারা এনে তার বাসভবনে রোপন করেছিলেন। জনশ্র“তি আছে, হাতির পেটের অসুখের প্রতিশেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত বলে জমিদার এ গাছ রোপন করেছিলেন।
তারা জানান, আমাজান অঞ্চলের এ গাছটি এ দেশের প্রতিকুল আবহাওয়ায় বাঁচিয়ে রাখতে জমিদার নিজে মালির সাথে গাছটির পরিচর্যা করতেন।
তবে স্থানীয়রা সব সময় মনে করতেন এ গাছের ফুল নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। এ কুসংস্কারের কারণে প্রতি বছর নাগ পঞ্চমিতে এ গাছের গোড়ায় পূজা করে নাগকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হতো। বর্তমানে পূজা বন্ধ থাকলেও ওই গাছে নাগ-নাগিনী বসবাস করে এ ভয়ে এখনও কেউ এ গাছের আশে পাশে যায় না।
দেশ ভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে গেলে পরিত্যাক্ত এ বাড়িতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। সে সময় থেকে পুলিশ ফাঁড়ির (যা বর্তমানে গৌরীপুর থানা) বাউন্ডারি দেয়ালের ভিতর রান্না ঘরের এক পাশে ময়লা আবর্জনাপূর্ণ স্থানে অযত্ম-অবহেলায় এখনো টিকে আছে গাছটি।
গাছটি প্রতি বছর শরৎকালে ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছড়াচ্ছে চারদিকে।
বাংলাদেশে নাগ লিঙ্গম গাছের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন জার্নালে ঢাকা শেরে বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যারয়ে একটি, বলদা গার্ডেনে একটি, সিলেট ও হবিগঞ্জে একটি করে নাগ লিঙ্গম গাছ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সর্বাধিক প্রাচীন ও বৃহদাকার এ গাছাটির কথা কোথাও উল্লেখ নেই।
এ গাছটির গোড়ার ব্যস প্রায় ১৮ ফুট এবং কাণ্ড ৩০ ফুট লম্বা। এর ফুল উজ্জল গোলাপী, পাপড়ি গোলাকার কুণ্ডলী পাকানো।
ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর সাপের ফনার মত। আর এ কারণেই গাছটি নাম নাগ লিঙ্গম হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। কড়া গন্ধ যুক্ত এ ফুল শুকলে তাৎণিক মাথা ব্যথা শুরু হয়। কু-সংস্কারের কারণে স্থানীয়রা এ ফুল না ছিড়লেও কবিরাজরা দূর-দূড়ান্ত থেকে এ ফুল সংগ্রহ করতে এখানে আসেন।
গৌরীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহারুল হক বলেন, দূর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে।
এর ফুলের কলি দিয়ে রস তৈরি করে খাওয়ালে প্রসূতির সন্তান প্রসব সহজ হয়। এর মাঝবয়সী পাতা দিয়ে তৈরি পেস্ট দাতের পাইরিয়া ও য় রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর। এ গাছের বাকল দিয়ে বহু মূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মজবুত। লালচে বাদামি রঙের এ কাঠ রেলের স্লিপারসহ ভারি কাজে লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।
তিনি জানান, এত সব গুণ থাকা স্বত্বেও শুধু প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড উঞ্চ অঞ্চলের গাছ বলে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম এ দেশে হয় না। তবে গুটি কলাম করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।