জীবন যেখানে চমকে দাড়ায়...................
Tue, Feb 21st, 2012 5:11 pm BdST
সুলাইমান নিলয় ও সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রিতম
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বায়ান্নর যে ফাগুন দিনে মায়ের ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে বাঙালি বুকের রক্ত ঝরিয়েছিল- তা এখন সব ভাষার মানুষের মাতৃভাষার স্বীকৃতির দিন। একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে তাই বাংলাকে সমর্থন জানালেন অন্য ভাষাভাষীরাও।
“ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে, সেই জাতির ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা হলে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছাবে”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়ার শিক্ষার্থী আরল্ড রস।
বাংলাদেশে বেড়াতে আসা রস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের বিষয়টি জানতে পেরে মঙ্গলবার সকালে শহীদ মিনারে এসেছিলেন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষায় তারা প্রাণ দিয়েছে।
তাদের স্মরণে নির্মিত এই শহীদ মিনারে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। ”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিসূত্রে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন নেদারল্যান্ডসের নাগরিক মার্ক ভানডারস্টোই। ছোট ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন তিনি।
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এটি একটি বিশেষ দিন। আমি এই দিনের ইতিহাস জানি।
ভাষার জন্য এদিন অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। ”
এই ডাচ নাগরিকের মতে, ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা যেতেই পারে। তা করা হলে ভাষার জন্য বাঙালি জাতির ত্যাগ আরেকটি স্বীকৃতি পাবে।
“আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজির একটি গুরুত্ব রয়েছে।
তবে মাতৃভাষায় গণিত বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো শিখলে তা আরো বেশি কার্যকর হয়। ”
বাংলাদেশের টেলিভিশন মাধ্যম নিয়ে একটি গবেষণার কাজে ঢাকায় এসেছেন ফিনল্যান্ডের নাগরিক আইডা ওলকোনেন, যিনি কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যদিও আমি ঢাকায় এসেছি অন্য একটি কাজে, তবে চমৎকার এই অনুষ্ঠান আমি মিস করতে চাইনি। এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। ”
“পৃথিবীর সবারই একটি মাতৃভাষা রয়েছে।
সবাই তাদের মাতৃভাষায় কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক”, যোগ করেন তিনি।
কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোসেফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন ধর্মতত্ত্বের অতিথি শিক্ষক হিসাবে।
শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকটমকে বলেন, “বাংলা ভাষার দুঃখ হলো- ভাষার অধিকারের জন্য এ জাতিকে রক্ত দিতে হয়েছে। আবার আনন্দের দিকটি হলো, ওই পথ ধরেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে। ”
“বাংলার প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা রয়েছে।
যদিও ভাষাটা একটু কঠিন। আমার শিখতে সময় লাগছে। তবে আমার মনে হয়, আমার দেশের তরুণরা শিখলে এতোটা সময় লাগবে না”, বলেন এই অধ্যাপক।
অস্ট্রেলিয়া থেকে এক মাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন ন্যালকম ব্যারি ও ওয়েনা পোকল।
ব্যারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকটমকে বলেন, “আজকের এই উৎসবে অংশ নিতে পেতে আমি আনন্দিত।
এর আগেও আমি দুই বার ঢাকায় এসেছিলাম। তবে এবারই প্রথম শহীদ মিনারে এসেছি। ”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা হলে তা গর্বের বিষয় হবে।
ওয়েনা পোকল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদদের জন্য সারা পৃথিবীতেই স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। তবে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে- তাদের স্মৃতির কেন্দ্র এইখানে।
এখানে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। ”
ঢাকার জনসংখ্যা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে হলেও শহীদ মিনারে এতো মানুষের সমাগম দেখে খারাপ লাগছে না বলে জানালেন ওয়েনা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরামর্শক মার্কিন নাগরিক জো বেইলি ও লিংক ফেইস মার্টিন সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন।
জো বেইলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তোমাদের ভাষার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও সমৃদ্ধ।
সেই ইতিহাস সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাঙালিদের পাশাপাশি সবাইকে আমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আসার আহ্বান জানাই। ”
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে ঢাকায় কাজ করছে গুড নেইবার বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ সংগঠনের ২৫ কোরীয় কর্মী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষেই ঢাকা এসেছেন।
গত বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকায় অবস্থানরত দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক কো ইয়নজু ও মোকসোয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে তারা এসেছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
মোকসোয়া বলেন, “আমি দেড় বছর থেকে এই দেশে আছি। প্রতিবেশীরা শিক্ষক হয়ে আমাকে অল্প অল্প বাংলা ভাষা শিখিয়েছেন। এই ভাষা খুবই সুন্দর। এই জাতি ভাষার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বাংলা শিখতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।
”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসডব্লিউ/এসএন/১৭০০ ঘ.
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।