দেশের মেটাল গানের ভক্তদের জন্য সুখবর ! সুখবর ! সুখবর ! খ্যাতিমান ভোজনরসিক , তরণপ্রজন্মের আইডল , ফ্যাশনগুরু , মিডিয়ামুঘল , কোকিল কন্ঠি সংগীত শিল্পী ইভা রহমানের জামাই , এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এবার তরুণদের জন্য নিয়ে এসেছেন ‘বাংলার মেটালিকা’ নামক ব্যান্ড । দেশের মেটালপ্রেমিক তরুণ-তরুণীদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি বছরের সবচেয়ে বড় উপহার । শুধু ব্যান্ড গঠন করেই তিনিই ক্ষান্ত হননি , জানিয়েছেন তিনি নিজেই ওই ব্যান্ডের ড্রামার ।
জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মেটালিকাকে বাংলাদেশে আনতে না পেরে দেশের তরুণ সমাজ যখন শোকে মুহ্যমান , ঠিক তখনই দেশের তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলার জন্য মাহফুজুর রহমান নিলেন দুর্দান্ত এই উদ্যোগ । ‘বাংলার মেটালিকা’ রক সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নতুন একটি ধারার সূচনা করবে বলে মাহফুজুর রহমানের বিশ্বাস ।
বাংলার মেটালিকা নিয়ে কথা হল মাহফুজুর রহমানের সাথে । তিনি প্রথমেই ‘বাংলার মেটালিকা’ ব্যান্ডের লাইনআপের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । ব্যান্ডটির লাইন-আপ হল এরকমঃ ড্রামসে মাহফুজুর রহমান , ভোকালে আছেন মাহফুজুর রহমান পত্নী এবং লাখ লাখ তরুণের গুগলের শিকার ইভা রহমান , লিড গিটারে আছেন নারায়নগঞ্জ নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার আওয়ামীলিগ নেতা শামীম ওসমান এবং বেজ গিটারে আছেন বহু তরুণের স্বপ্নের রাণী মুন্নি সাহা । লাইনআপ নিয়ে তিনি আমাদের বলেন , “ আমার এ এ এ এ এ ব্যান্ডটিতে সেইসকল সদস্যদের রাখতে চেয়েছি যারা তরুণদের কাছে আদর্শ । যারা সবরকম প্রোগ্রামে তরুণদের মাতিয়ে রাখতে সক্ষম ।
এজন্য আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ট্যালেন্ট খুঁজতে শুরু করলাম । দেশের আনাচে কানাচে অনেক খুঁজাখুঁজির পর দেখলাম কারোরই সেই যোগ্যতা নেই । হঠাৎ চিন্তা করলাম আমি নিজে যদি ড্রামস বাজাই তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয় । ভোকালের জন্য ঠিক করলাম তোমাদের ভাবী , রিকি মার্টিনকে পরাস্ত করে গিনেস বুকে নাম ওঠানো শিল্পী ইভা রহমানকে । বেজ গিটারে নিলাম তোমাদের রাত্রিকালীন সাথী মুন্নী সাহাকে ।
মুন্নী সাহাকে রাত্রিকালীন সাথী এ কারণেই বলেছি কারণ জানতে পেরেছি এটিএন নিউজে মুন্নী সাহার রাত্রিকালীন প্রোগ্রাম দেখার জন্য তোমরা প্রায়ই সকালের ক্লাসের জন্য উঠতে পারো না । এ জন্যই ” বলে তিনি ছাগল মার্কা হাসি দিলেন । মাহফুজুর রহমানকে আংকেল বলায় তিনি কিছুটা ক্ষেপে যান । কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন , “ দেখো খোকা , বাংলাদেশের সকল ব্যান্ডের সদস্যদের তোমারা ভাই , বাবা বিভিন্ন নামে ডাকো । আমাকে আংকেল ডাকলে কেন তুমি ? তোমার এই কথা দেশের রক সংগীতের আদশের জন্য ক্ষতিকর ।
ততক্ষণাৎ আমি মাহফুজ আংকেলকে স্যরি বলে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে আপনাকে কি নামে ডাকবো । গুরুগম্ভীর গলায় তিনি জবাব দেন , “তোমরা আমাকে ইচ্ছে করলে ড্রামসবাবা নামে ডাকতে পারো । নামটা আনকমন তাই না ?? জিজ্ঞেস করেন তিনি । আমিও চিন্তা করলাম । আসলেই তো ড্রামসবাবা নামটা আংকেলের সাথে ভালোই মানায় ।
কারণ আংকেলের পেট দেখলে সেটাকে ড্রামস ছাড়া আর কিছু বলা উচিৎ হবেনা ।
উত্তর দিলাম , “ জ্বি , এই নাম আগে কখনো শোনা যায় নি । আর নামটা আপনার সাথে মানবেও বেশ । ”
আপনাদের গানের মাঝে কোন বিষয়টাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে মাহফুজ আংকেল জানান , “ আমরা মূলত সব ধরণের গানকেই প্রাধান্য দিচ্ছি । প্রথম দিকে ইভা রহমানের মন ছুঁয়ে যায় অ্যালবামের গানগুলো কাভার করব ।
পরবর্তীতে মমতাজের কিছু গান প্র্যাকটিস করব । এমনকি কাঙ্গালিনী সুফিয়ারও কিছু গান কাভার করার ইচ্ছ আছে আমাদের । ” “ আপনারা কি তাহলে অরজিনাল মেটালিকা ব্যান্ডের কোনো গান কাভার করছেন না? ” আমার করা এই প্রশ্ন শুনে বিস্মিত হয়ে তিনি বলেন, “ অরজিনাল মেটালিকা আবার কি!!! আমরাই তো অরজিনাল । আমেরিকান যে মেটালিকা ব্যান্ড আছে সেটা তো আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড । ”
বাংলার মেটালিকা ব্যান্ড নিয়ে ইভা রহমান বলেন , “ দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে নানা কারণে আমি জনপ্রিয় ।
শুনলাম প্রতিদিন আমার নাম নাকি অসংখ্যবার গুগল করা হয়(রহস্যময়ী হাসি) পপ সঙ্গীতে আমিই তো তরুণদের ভরসা । কিন্তু বাইরের বিভিন্ন দেশে ব্যান্ডসঙ্গগীত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় । তাই ভাবলাম এবার রক মিউজিককে আমার কিছু দেয়া উচিত । ”
বাংলার মেটালিকা ব্যান্ড করার পেছনে আপনাকে কোন বিষয়টি উৎসাহ জুগিয়েছে জানতে চাইলে ইভা রহমান বলেন , “ কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা আমেরিকান ব্যান্ড মেটালিকাকে বাংলাদেশে আনার জন্য অনেক কান্নাকাটি করছে । ব্যাপারটা আমার কাছে দৃষ্টিকটু লাগল ।
কারণ যে দেশে রিকি মার্টিনকে পরাজিত করে গিনেস বুকে নাম ওঠানো ইভা রহমান বাস করে , সেই দেশের ছেলেদের মেটালিকার মতো সামান্য একটা ব্যান্ডের জন্য আহাজারি আমি সহ্য করতে পারি না । তাছাড়া আমাদের দেশের ব্যান্ডগুলোও তেমন আহামরি কিছু না । তাই আমি আর মাহফুজ নিজেরাই বাংলার মেটালিকা চালু করার ব্যাপারে উদ্যেগী হই । বাংলার মেটালিকার মতো পাথুরে ব্যান্ড এই বিশ্ব এর আগে দেখেছে বলে মনে হয় না ”
বাংলার মেটালিকা ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি জানা , “ সামনের ঈদে আসছে আমাদের নতুন অ্যালবাম ‘ছাগলের আর্তনাদ’ । আশা করি অ্যালবামটির মাধ্যমে ব্যান্ডটি তাদের জাত চেনাতে সক্ষম হবে ।
”
‘ছাগলের আর্তনাদ’ নামকরণের পেছনের কারণ জানালেন মুন্নী সাহা । তিনি বলেন , “ কিছুদিন আগে আমি ছাগলনাইয়্যাতে যাই । সেখানে আমাকে দেখে একদল ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা পিছু নেয় । আমাকে দেখে তাদের সে যে কি আর্তনাদ ! ছাগললের বাচ্চাগুলা এতো ছোট আর এতো কিউট , একপর্যায়ে তাদেরকে আমি কোলে নিয়ে ফেলি । ওদের আর্তনাদ শুনে আমার মনে হচ্ছিল ওরা আমাকে মা মা বলে ডাকছে ।
আবার আরেকবার মনে হল , তারা বোধোহয় আমার রাত্রিকালীন টক শো’র অথিতি হবার জন্য আহাজারি করছে । কিন্তু আমি তো ছাগল না , একজন মানুষ হিসেবে কিভাবে একজন ছাগলকে মাতৃস্নেহ দিব বলেন ? মাহফুজ ভাই যখন বললেন অ্যালবামের জন্য নতুন একটি নাম দিতে তখন আমার কানে ভেসে আসল ছাগলে আর্তনাদ । সাথে সাথে মাহফুজ ভাইকে বলে ফেললাম । ওমনি বাজিমাত ! ছাগলের আর্তনাদ নামটিই শেষমেশ মাহফুজ ভাইয়ের মন জয়ে করে ফেলে । ”
ওদিকে খেয়াল করলাম লিড গিটারিষ্ট শামীম ওসমান ইভা রহমানের দিকে দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ।
ওনার দৃষ্টির সামনে গিয়ে দাঁড়াই আমি । বাংলার মেটালিকায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন , “ ইভা রহমানের জন্য । স্যরি , স্যরি । তোমাদের জন্যই আমার এই রাস্তায় আসা । তোমাদের শুদ্ধ সংগীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমার মাঝে একটা দায়বদ্ধতা কাজ করছিল কয়েকদিন ধরে ।
এইটা একটা কারণ । আরেকটা কারণ হল , নারায়নগঞ্জ নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে ছ্যাঁকা খাওয়ার কষ্ট ভুলবার জন্য । নারায়নগঞ্জের জনতার কাছে আমি সবসময় ছিলাম সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । সততার অপর নাম ছিল এই শামীম ওসমান । কিন্তু নির্বাচনের পর দেখলাম দেশে সৎ মানুষের মূল্য নেই ।
আমার মতো , দুঃখিত দুঃখিত , আইভীর মতো চোর-বাটপারে ভরে যাওয়া এই দেশে আমার কোনো ভাত নাই । সবজায়গায় শুধু নোংরা রাজনীতি । তাই একরকম বাধ্য হয়েই সংগীতের এই জগতে আমার প্রবেশ। ”
‘ছাগলের আর্তনাদ’ অ্যালবাম নিয়ে শামীম ওসমান শোনালেন আশার বানীঃ “ ছাগলের আর্তনাদ অত্যন্ত শক্তিশালী এক অ্যালবাম হবে বলে আমার বিশ্বাস । আমার মতো ছাগল সমাজেও যারা অশুভ শক্তির অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ তাদের মাঝে নতুন সাহস যোগাতে অ্যালবামটি নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি ”
গিটার বাজানো কার কাছে শিখেছেন এই প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান হাসতে হাসতে বলেন , “ আরে আমার তো গিটার শিখা লাগে নাই ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমি রাতের আঁধারে দেশ থেকে পালিয়ে যাই । আমার সাথে তখন ছিলো শুধু একটি একতারা । বিদেশের পথে পথে বাউলের মতো একতারা বাজিয়ে মানুষকে বিনোদন দিতাম । গিটার শিখা তো একতারা শিখার চাইতেও সহজ ” এইটা বলে তিনি হাতে গিটার তুলে নিলেন । মাহফুজুর রহমানের প্যান্টের পকেট থেকে ছোট টেপ রেকর্ডার বের করে এনে গিটারের সুর ছাড়লেন ।
আর হাতে গিটার নিয়ে গিটার বাজানোর অভিনয় করলেন । তারপর অট্টহাসি দিয়ে বললেন , “এখন বুঝছ তো গিটার বাজানো কত সহজ । হা হা হা হা হা হ হা হা হা হা হা হ হা ”
শামীম ওসমানের মাতালের মতো আচরণ দেখে আমি উনার কাছ থেকে কেটে পড়ি ।
আবারো গেলাম ইভা রহমানের কাছে । ইভা রহমানকে বললাম , “ আপনার নতুন ভিডিও দেখেছি ।
আগেরটা থেকে ভালো হয়েছে । ” আমার এই কথা শুনে মাহফুজ আংকেল তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন । বললেন , “ এই ছেলে তুমি কি বলতে চাচ্ছো ? কোন ওয়েবসাইটে ইভার ভিডিও দেখছো তাড়াতাড়ি আমাকে বলো । তোমার মতো ফালতু ছেলেরাই এইসব ভিডিও দেখে ”
“ আমি তো আংকেল গত ঈদের মিউজিক ভিডিওর কথা বলছিলাম ” , উত্তর দিলাম আমি ।
“ হায়রে আল্লাহ ! তুমি তো আমাকে বোঝায়ে বলবা , তাই না ? আমি আরো মনে করলাম কি না কি ভিডিও দেখছো ।
আচ্ছা বাদ দেও । আর কোনো প্রশ্ন থাকলে তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করো । অনেক কাজ পড়ে আছে ” , ড্রামসবাবা মাহফুজুর রহমান আত্মসর্মপনের ভঙ্গিতে বললেন ।
“ বাংলার মেটালিকাকে কবে স্টেজে দেখতে পাবো ? ” এর উত্তরে মাহফুজুর রহমান বলেন , “ আমাদের প্র্যাকটিস খুব জোরেসোরেই শুরু হয়েছে । আশা করি ঐশ্বরিয়া-অভিষেকের প্রথম সন্তানের বিয়েতে আমরা পারফর্ম করব ।
কয়েকদিন আগেই অভিষেকের কাজের ছেলের বান্ধবী মুন্নী সাহাকে ভারতে পাঠিয়েছিলাম বিষয়টা কনফার্ম করতে । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলার মেটালিকাকে স্টেজ কাঁপাতে দেখবে । ”
বাংলার মেটালিকা যে কতগুলো ছাগলের সমন্বয়ে গঠিত সেটা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না ।
যাবার আগে ইভা রহমানের কন্ঠে শোনলাম ‘ছাগলের আর্তনাদ’ অ্যালবামের ‘মনমাতানো’ কয়েকটি গানঃ
“ ছাগলকে ছাগলের মতো থাকতে দাও , ছাগল নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে । যেটা ছিলো না , ছিলো না সেটা না পাওয়াই থাক সব পেলে নষ্ট জীবন !”
“ ছাগলনাইয়্যা আইস্যা আমার আশা ফুরাইলো , কুচকুচে কালো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দেইখ্যা আমার পরাণ জুড়াইলো ……”
“ আমার মাঝে লুকিয়ে থাকা অন্য এক ছাগল ,
আসুক আজ আপন কায়ায় সেই আমার ছাগল ”
গানের সাথে সাথে মাথা দোলাতে থাকেন ড্রামসবাবা মাহফুজ আংকেল আর শামীম ওসমান ।
ইভা রহমানের মনমাতানো সেসব গান আর মুন্নী সাহার লিখা ‘অদ্ভূত সুন্দর’ সেসব গানের কথা শুনে আমার খুব বেশী পেট ব্যাথা ধরে । তাই ইন্টারভিউ শেষ করে সাথে সাথেই আমি টয়লেট অভিমুখে রওয়ানা দিলাম । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।