দূর! “উজির মশাই, বাইরে এতো চেঁচামেচি কিসের? এতো হৈ চৈ? প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে কিসের এতো মিটিং মিছিল চিল্লাপাল্লা? এতো হল্লাচিল্লা?” উজির মশাই হাত কচলে কাচুমাচু স্বরে বললেন, “আপনার প্রজারা রাজন! ওরা বিক্ষোভ করছে৷” “বিক্ষোভ করছে? কেনো, কিসের বিরুদ্ধে, কার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ? কার বিরুদ্ধে ওদের ক্ষোভ?” “আপনার বিরুদ্ধে রাজন৷ আপনার বিরুদ্ধেই ওদের যতো ক্ষোভ, অভিযোগ, বিক্ষোভ!” “বটে? এতো বড়ো সাহস ওদের? আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, অভিযোগ! আবার বিক্ষোভও? বদমাশগুলো চায় কি?” “ওরা বিচার চায় হুজুর৷ ঐ যে গভীর রাতে এক দম্পতি খুন হলো নিজের বাসায়, ওরা তার বিচার চায়৷ ওরা ক্ষুদ্ধ রাজামশাই৷” “ক্ষুদ্ধ! হুহ, ক্ষুদ্ধ তো আমি কি করতে পারি? বাসায় বেড়াতে এসে কেউ ওদের খুন করে রেখে যাবে আর তার প্রতিকার করবো আমি? রাষ্ট্র কি প্রতি বাসায় পাহারা বসিয়ে নাগরিকদের নিরাপত্তা দিবে নাকি? কার বাসায় কে বেড়াতে আসলো সেটা দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব? কেউ বেড়াতে আসলে রাষ্ট্র সেখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে যতক্ষণ না তারা চলে যায়? বেড়াতে এসে খুন করে গেলে রাষ্ট্র কি করতে পারে?” “সে তো ঠিকই হুজুর! কিছুই করার নেই৷” “তাহলে বদমাশ মূর্খগুলো চেঁচামেচি করছে কেনো?” “ওরা বিচার চায় আলমপানা৷ আগের কোনো খুন, জখম, রাহাজানি, হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি৷ ওরা বলছে যে আগের হত্যাকাণ্ড গুলোর বিচার হলে এসব হতো না৷” “বটে! আগের কোন হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় ওরা?” “আজ্ঞে মহারাজ, সে লিস্ট তো অনেক বড়৷ সেই যে বাবার কোলে থাকা এক শিশু গুলিতে নিহত হলো, সেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেললো, সেই যে এক দম্পতি বাসের চাকার তলায় চলে গেলো তাদের অনাগত শিশুটি সহ, স্কুলের পথে একের পর এক বাচ্চা গাড়িচাপা পড়লো, এক সিনেমাঅলা বাসের ধাক্কায় মরে গেলো, দিনে দুপুরে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে মারলো কতোজনকে, এরকম অনেক হুজুর! এ লিস্ট বলে শেষ করার নয়৷” “হেহ, এরকম ঘটনা একটা দুইটা তো ঘটতেই পারে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে কতো ছাত্র, মরলো তো মোটে একটা৷ দেশে শিশুর কি কোনো অভাব পড়ছে? অথচ গুলি খাইছে তো একটাই, নাকি?” “জিল্লেল্লাহি, এরকম একটা ঘটনাও ওরা চায় না৷ আর তাছাড়া...” “তাছাড়া কি?” “এরকম ঘটনা মেলা হুজুর৷ প্রচার পায় আর কয়টা৷ একটা দুইটা নিয়ে হৈ চৈ হয়, কিন্তু আসলে এমন ঘটনা মেলা ঘটে৷” “বটে! কেনো, তুমি যেগুলার কথা বললা সেগুলা কি বিচারাধীন নাই?” “আজ্ঞে হুজুর কিছু কিছু আছে৷” “তবে? বিচারাধীন আছে, তবে শালারা বিচার হয় নাই বলে চেঁচায় কেনো?” “শালাদের মুখের কি কোনো ঠিক আছে রাজন? হারামজাদার দল সুখে আছে তো তাই মুখে যা আসে তাই বলে৷ এসব বিচার নাকি কোনোদিনই শেষ হবে না৷ আর অপরাধীরাও কেউ নাকি ধরা পড়ে না৷ সব ওদের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ায় অথচ পুলিশ কাউকে ধরে না!” “বলো কি, নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ায়? ওদের নাকের ডগা এতোই লম্বা নাকি? নাকের ডগা কেটে ছোট করে দাও৷ ঘোরাঘুরি বন্ধ হোক৷” “আজ্ঞে রাজন ক'জনের নাক কাটবেন আপনি? ওরা যে পঙ্গপালের মতো অগুনতি৷ সংখ্যার শেষ নাই!” “আর কি বলে শয়তানগুলা?” “বলে যে এমনিতেই বিচার হয় না, তার উপর কালে ভদ্রে দু’ একটা বিচার হয়ে শাস্তি পেলেও আপনি তাদের ক্ষমা করে দেন৷” রাজা হুংকার দিয়ে বললেন, “এতো বড় সাহস ওদের! আমি ক্ষমা করলে ওদের সহ্য হয় না? কেনো, ওরা বিচার চায় তো বিচার হয়েছে৷ তারপর আমি ক্ষমা করলাম কি কি করলাম সেটা ওদের দেখার কি?” “আজ্ঞে জাহাঁপনা ওরা বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চায়৷” “হ্যাঁ, এ জন্যই বলে বসতে পারলে শুতে চায়! বদমাশদের চাহিদার শেষ নাই৷ আমার মতো ন্যায়পরায়ণ, মহানুভব রাজা ওরা পেয়েছে কখনো? কেনো, যে দম্পতি খুন হলো আমি তাদের ছয় বছরের ছোট ছেলেটার দায়িত্ব নেইনি? কি যেন নাম ঐ ক্ষুদে হারামজাদাটার?” “ওর নাম অম্বর, রাজন৷” “অম্বর? হুহ, কি নামের বাহার! এটা একটা নাম হলো? নামের আগা নাই মাথা নাই কোনো মানেও নাই?” “মানে আছে হুজুর৷ অম্বর মানে হচ্ছে আকাশ৷” “আকাশ? হাহ, সস্তা প্রেমের গল্পের নায়কের নামে নাম, যার মনটা নাকি অনন্ত, বিশাল? বড় হলে শয়তানটার জন্য নদী নামের মেয়ে খুঁজে বের করতে হবে? তা নাম যদি আকাশই রাখতে চায় সরাসরি আকাশ রাখলেই পারে, ঢং করে অম্বর রাখার দরকার কি? আমার রাজ্য কি ঢং করার জায়গা? এই মুহূর্তে ঘোষণা করে দাও, আমার রাজ্যে এসব ঢং চলবে না৷ নাম রাখতে চাইলে সরাসরি রাখতে হবে, ঘুরায়ে পেঁচায়ে খিচুড়ি পাকালে হবে না৷ কেউ যদি বাতাস নাম রাখতে চায় তাহলে বাতাসই রাখতে হবে, ঘুরায়ে সমীরণ রাখা চলবে না৷ এমনকি সমীকরণও রাখতে পারবে না৷” উজির মশাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে থাকেন৷ তাই দেখে রাজা আবার হুংকার ছাড়লেন, “কি ব্যাপার উজির? আমার কথা কি তোমার কানে যায় নাই?” “আজ্ঞে বাদশাহ নামদার, আমার মনে হয় এ করতে গেলে প্রজারা আরো ক্ষেপে যাবে৷” “হুহ ক্ষেপে যাবে! ক্ষেপে গেলেই হলো! ওরা ক্ষেপে গেলেই আমি ভয় পাই নাকি? আমি কি... আমি কি... ডরাই... কি জানি... কি কি জানি লাইনটা?” “জি রাজন, লাইনটা হচ্ছে- আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে?” “ঠিক ঠিক৷ আমি কি ডরাই কভু ভিখারি রাঘবে, মানে ভিখারি প্রজারে? হ্যাঁ, বলো ডরাই?” “আজ্ঞে না হুজুর৷” “তাহলে? যাও প্রজাদের আমার মহানুভবতার কথা স্মরণ করিয়ে দাও৷ তাদের বলো কিভাবে আমি ঐ অম্বর না আকাশ না ঘোড়া তার দায়িত্ব নিয়েছি৷” “জি রাজন, এই ব্যাপারটা নিয়েও ওরা খুশি নয়৷” “কি আশ্চর্য! খুশি নয়? একটা ভিখিরির ছেলেকে আমি, স্বয়ং দেশের রাজা নিজের দায়িত্বে নিয়েছি তাতেও তারা খুশি নয়?” “আজ্ঞে হুজুর তারা বলে যে এর আগেও আপনি এরকম কয়েকজনের দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু পরে আর তাদের কোনো খোঁজ রাখেননি৷ তাছাড়া একেকটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সেই পরিবারের কারো দায়িত্ব নেয়া আপনার কাজের মধ্যে পড়ে না৷ আপনার কাজ হচ্ছে পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ কোনো পরিবার, বা কোনো একজন মানুষ যেন অপঘাতে না মরে সেটা নিশ্চিত করা৷ অপঘাতে মরে যাওয়ার পর কারো দায়িত্ব নেয়া না৷” “বটে, বক্তৃতা তো ভালোই দিলে!” “আজ্ঞে আমি না হুজুর৷ এসব ঐ আপনার প্রজা নামক শয়তানরা বলে৷” “হুম৷ হারামজাদাদের বড় বাড় বেড়েছে৷ করতে দাও ওদের বিক্ষোভ৷ কয়দিন আর করবে? দু’দিন, তারপর সব ঘরে গিয়ে পোলাউ কোর্মা খেয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমাবে৷” “সে খুব ঠিক হুজুর৷ বিক্ষোভটা হচ্ছে সময়ের ফ্যাশন৷ না করলে নিজেকে মনে হয় না সচেতন৷” “হুঁ, করুক ওরা বিক্ষোভ৷ ওদের নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার কি? তুমি যাও, সেনা বাহিনীকে ট্যাঙ্ক আর রকেট লঞ্চার রেডি করতে বলো৷ আমি শিকারে যাবো৷” উজির বিমূঢ়ের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ রাজা মিটিমিটি হেসে বললেন, “কি হলো উজির? ওরকম হতভম্ব মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলে কেনো?” “আজ্ঞা শাহানশাহ, আপনার কথা বুঝেছি বলে মনে হয় না৷” “না বোঝার কি? আমি তো বাংলায়ই বলেছি নাকি?” “তা বটে হুজুর!” “তবে? জানো কাল রাতে আমি কি স্বপ্ন দেখেছি? দেখলাম রাজা দুষ্মন্তের মতো আমি শিকারে গিয়েছি৷ রাজা দুষ্মন্তের গল্প জানো তো? দুষ্মন্ত সৈন্য সামন্ত নিয়ে বনে শিকার করতে গিয়ে লাস্যময়ী সুন্দরী শকুন্তলার দেখা পেয়ে গেলো৷ তারপর বনের মধ্যে সে কি লদকা লদকি! আহা পুরাকালে রাজা হয়ে সুখ ছিলো বুঝলে৷ যতো সুখ করে গেছে ঐ সময়ের রাজারা৷ ইচ্ছে হলেই লদকা লদকি, ইচ্ছে হলেই ভদকা ভদকি! এ হচ্ছে ঘোর কলিকাল, এই সময়ে রাজা হয়ে কোনো সুখ নেই৷ দেখো না বাইরে শয়তানের চেলারা কেমন বিক্ষোভ করছে৷ পুরাকাল হলে সব কটাকে ধরে স্টেডিয়ামে নিয়ে শূলে চড়িয়ে দিতাম৷ এখন কি আর সেরকম করার সুযোগ আছে?” “কথা ঠিক, জাহাঁপনা!” “হ্যাঁ৷ তো আমি স্বপ্নে দেখলাম রাজা দুষ্মন্তের মতো আমি শিকারে গিয়েছি৷ সেখানে এক লাস্যময়ী সুন্দরীকে কেবল চেপে ধরেছি, এই সময় আমার কাপড়... নাহ দূর সব কথা তোমাকে বলা যায় না৷ যাও শিকারের বন্দোবস্ত করো, রাজা দুষ্মন্তের মতো আমিও শিকারে যাবো৷ সেনাবাহিনীকে ট্যাঙ্ক রেডি করতে বলো৷” “আজ্ঞে মহারাজ ট্যাঙ্ক নিয়ে শিকারে যাবেন?” “তাছাড়া কি? পুরাকালে রাজারা ঘোড়ায় টানা রথে করে শিকারে যেতো৷ তখন সেটাই ছিলো যুদ্ধের বাহন৷ এখন যুদ্ধের বাহন হলো ট্যাঙ্ক ৷ ট্যাঙ্ক নিয়ে যাবো না তো কি নিয়ে যাবো?” “কিন্তু মহারাজ, শিকারটা করতে যাবেন কোথায়? তেমন বন কই?” “কেনো সুন্দরবন? সে বেটা আছে কি করতে যদি রাজার শিকারের কাজেই না লাগলো?” “আজ্ঞে কি শিকার করবেন আলমপানা?” “কেনো, সুন্দরবনে কি বাঘ নাই? হরিণ নাই?” “আজ্ঞে সুন্দরবনে বাঘ হরিণ মারা নিষেধ জাহাঁপনা৷ সে করতে গেলে পৃথিবী জুড়ে বহুত চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাবে৷” রাজামশাই হুংকার দিয়ে বললেন, “কলিকাল! ঘোর কলিকাল!! আমার বনের বাঘ আমি মারবো সেটাও কারো সহ্য হয় না৷ যাও চিড়িয়াখানার বাঘ আর হরিণগুলা বের করে সুন্দরবনে ছেড়ে দাও৷ আমি ট্যাঙ্কে চড়ে রকেট লঞ্চার বাগিয়ে বাঘ মারবো৷” “আজ্ঞে মহারাজ ট্যাঙ্কে চড়ে রকেট লঞ্চার দিয়ে বাঘ মারাটা কেমন জানি হাস্যকর মনে হচ্ছে৷” রাজা বিরক্ত হয়ে উজিরের দিকে চেয়ে রইলেন৷ “হাস্যকর মনে হচ্ছে? ট্যাঙ্ক দিয়ে মানুষ মারলে সেটা তোমার কাছে হাস্যকর মনে হয় না, বাঘ মারলেই হাস্যকর লাগে? আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না৷ যাও ব্যবস্থা করো৷” “জে আজ্ঞে মহানুভব!” বলে উজির মশাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন৷ রাজা মশাই আরাম সিংহাসনে বসে পা দোলান৷ উঠে একবার বিশাল জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলেন দূরে রাজবাড়ির সামনে ফেস্টুন, ব্যানার ইত্যাদি নিয়ে ভিড় করে আছে মানুষ৷ রাজা মশাই একদলা থু থু ছুড়ে মারলেন উপর দিকে৷ থুথুটা উপরে উঠে ঘুরে ঘুরে নিচে নেমে আসতেই রাজা মশাই হা করে থুথুটা মুখের ভিতরে নিয়ে কপ করে গিলে ফেললেন৷ উজির ঘরে ঢুকে কুর্নিশ করে দাঁড়ালেন৷ “কি খবর উজির?” রাজা মশাই জিজ্ঞেস করলেন৷ “সেনা বাহিনীকে খবর দেয়া হয়েছে?” “আজ্ঞে মহারাজ৷ সেনা বাহিনী বলেছে সুন্দরবনে ট্যাঙ্ক নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ নৌবাহিনীর জাহাজে করে ট্যাঙ্ক নিয়ে যেতে হবে৷ জাহাজ থেকে ট্যাঙ্ক নামিয়ে বনের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে ওদের বেশ কিছুদিন সময় লাগবে৷” “অপদার্থের দল! একটা কাজও যদি ওরা দ্রুত করতে পারে৷ যাও অকম্মাগুলোকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে বলো৷ আর শোনো, মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক ডাকো, আমি থুথু খেলবো৷” “আজ্ঞে জাহাঁপনা৷” উজির দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন৷ রাজা থুথু খেলার জন্য প্রস্তুত হলেন৷ থুথু খেলা রাজার অতি প্রিয় খেলা৷ মাঝে মাঝে খেলাটা নিজে নিজেই খেলেন৷ দলা দলা থুথু উপরে ছুড়ে মারেন, তারপর কপ করে নেমে আসা থুথু ধরে গিলে ফেলেন৷ তারপর আবার মারেন, আবার গেলেন৷ এ রাজার বড় প্রিয়৷ এ কাজ করে তিনি কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ যখন রাজা খুব ফূর্তিতে থাকেন অথবা যখন তাঁর মন মেজাজ খুব খারাপ থাকে তখন তিনি আর খেলাটা একা একা খেলেন না৷ তখন তিনি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডাকেন৷ দিওয়ান-ই-খাস এ মন্ত্রীরা সব জড়ো হন৷ রাজা যদি ফূর্তিতে থাকেন তাহলে তিনি উদার হয়ে যান৷ মন্ত্রীরা সব দলা দলা থুথু ছুড়ে মারে আর রাজা কপ করে গিলে ফেলেন৷ কিন্তু যখন রাজার মেজাজ খারাপ থাকে তখন তিনি নিজে দলা দলা থুথু মেশিনগানের মতো ছুড়ে মারেন৷ মন্ত্রীরা সব কাড়াকাড়ি মারামারি করে সে থুথু গলাধঃকরণ করেন৷ রাজার মন্ত্রী পরিষদের সব সদস্যই থুথু খেলায় দক্ষ৷ বস্তুত এ খেলায় দক্ষ না হলে কাউকে মন্ত্রী করা হয় না৷ থুথু ছুড়ে মারা এবং অপরের ও নিজের নিক্ষিপ্ত থুথু গলাধঃকরণে যথেষ্ট দক্ষ না হলে কেউ মন্ত্রী হবার চিন্তাই করতে পারে না৷ মন্ত্রী হবার জন্য এ অপরিহার্য৷ দিউয়ান-ই-খাস এ মন্ত্রী পরিষদের সব সদস্য জড়ো হয়েছেন৷ রাজা এগিয়ে গিয়ে সিংহাসনের সামনে পিছন ফিরে দাঁড়ালেন৷ নিজের নিম্নাঙ্গের কাপড় নামিয়ে দিয়ে সামনে একটু ঝুঁকে নিতম্বটাকে মন্ত্রীদের দিকে উঁচু করে ধরলেন তিনি৷ একজন একজন করে মন্ত্রী এগিয়ে এসে রাজার দুই নিতম্বের মাঝখানের খাঁদে মুখ ডুবিয়ে গভীর চুম্বন করে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন৷ চুম্বন পর্ব শেষ হলে রাজা নিম্নাঙ্গের কাপড় তুলে মন্ত্রীদের দিকে ফিরে বললেন, “প্রিয় মন্ত্রীরা আমার, তোমাদের কাজ কর্মে আমি বড় খুশি৷” মন্ত্রীরা সবাই সমস্বরে বললেন, “আপনাকে খুশি করাই আমাদের একমাত্র চেষ্টা জাহাঁপনা৷” “হুম৷ আচ্ছা এক এক করে বলো দেখি রাজ্যের কি খবর৷ যোগাযোগমন্ত্রী, তুমিই আগে বলো৷” “আজ্ঞা শাহানশাহ,” যোগাযোগমন্ত্রী বলতে শুরু করলেন, “খবর খুবই ভালো৷ রাজ্যের কোথাও রাস্তাঘাট নাই ঠিক৷ খোদ শহরের রাস্তার যা অবস্থা তাতে মনে হয় চাঁদের পিঠ৷ কিন্তু আপনার প্রজাদের বলেছি দেশের কোথাও রাস্তাঘাটের কোনো সমস্যা নাই৷ সবকিছু কাঁচের মতো মসৃন৷” “কড়া থুথু ছুড়েছো তাহলে? থুথুটা কি ওরা গিলেছে?” “আজ্ঞা মহারাজ, ওটাই আমার কাজ! থুথু ওরা সহজে গিলতে কি চায়? কিন্তু না গিলে যাবে কোথায়?” “বেশ বেশ! আর রাস্তার উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র যা বরাদ্দ দিয়েছিলো?” “আজ্ঞে সর্বজ্ঞানী, কার কতো বরাদ্দ আপনি তো জানেনই৷ আপনার অংশের পুরোটাই আপনার একাউণ্টে চলে গেছে৷” “ভালো ভালো, খুব ভালো৷ তুমি একটা রত্ন বুঝলে৷ মারো, থুথু মারো দেখি৷” যোগাযোগমন্ত্রী এক দলা থুথু থুক করে ছুড়ে মারলেন৷ যোগাযোগমন্ত্রীর মুখের জোর অত্যন্ত বেশি৷ থুথুর দলাটা রাজার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো৷ রাজা লাফিয়ে উঠে কপ করে দলাটাকে মুখে পুরে ফেললেন৷ “অর্থমন্ত্রী, তোমার খবর কি?” “জি খবর বহুত আচ্ছা খোদাবন্দি৷” “বটে৷ তা তুমি আজকে কি নিয়ে কথা বলবে? স্বরাষ্ট্র না পররাষ্ট্র? অর্থের কথা নিশ্চয়ই বলবে না?” “জি সব বিষয়ে কথা বলতেই আমার আনন্দ রাজন৷” “শেয়ারবাজারের কি অবস্থা বলো দেখি?” “আজ্ঞে গরুগুলো সব টাকা পয়সা খুইয়ে এখন গলায় দড়ি দিচ্ছে, হি হি হি...” “সাবাশ! মারো থুথু৷” অর্থমন্ত্রীর নির্ভুল লক্ষে ছুড়ে মারা থুথুর দলাটা রাজা গিলে নিলেন৷ “ওহে বানিজ্যমন্ত্রী, তোমার কি খবর?” “রাজা মশাই, জিনিস পত্রের দাম এখন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি৷ জবর৷” “হুম৷ কেউ কি না খেয়ে মরেছে?” “কিছু মরেছে মহারাজ৷ তবে সে সংখ্যা তেমন একটা না৷” “তবে আর দাম বাড়লো কি? তোমার কাজে আমি সন্তুষ্ট না৷ দেখি হা করো দেখি৷” রাজা থুথু ছুড়ে মারলেন৷ সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রীরাও৷ বানিজ্যমন্ত্রী কপ কপ করে সব গিলে নিলেন৷ এরপর রাজা অন্য মন্ত্রীদের দিকে ফিরলেন৷ “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আর পররাষ্ট্র মন্ত্রী৷ তোমাদের কাজ কর্মে আমি এমনিই বড় সন্তুষ্ট৷ তোমাদের কিছু বলার দরকার নেই৷ মারো থুথু মারো৷” এরপর থুথু খেলা পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো৷ চারদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে থুথু উড়ে যেতে লাগলো৷ রাজা লাফিয়ে লাফিয়ে থুথু গিলতে থাকলেন৷ এমন সময় উজির সাহেব দিউয়ান-ই-খাস এ প্রবেশ করলেন৷ “কি ব্যাপার উজির?” রাজার রাগত স্বর৷ “তোমার হঠাৎ আগমন?” “আজ্ঞে গোস্তাকি মাফ হয় আলমপানা৷ কিন্তু একটা কাণ্ড ঘটে গেছে৷” “আবার কি কাণ্ড ঘটলো?” “জি মটর সাইকেল নিয়ে বাসের নিচে চলে গেছে এক সাংবাদিক৷ তাই নিয়ে আবার শুরু হয়েছে হৈ চৈ৷” “বেটা শালা মটর সাইকেল নিয়ে বাসের তলে গেলো কেনো? মটর সাইকেল ছাড়া যেতে পারলো না? একটা মটর সাইকেল খামোখা নষ্ট হলো!” “আজ্ঞে রাজন, সে খুবই ঠিক কথা৷ কিন্তু প্রজারা মটর সাইকেলটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না৷ ঐ বেটার মৃত্যু নিয়েই তাদের যতো মাথা ব্যাথা৷ বেটার বউটা খুব কাঁদছে হুজুর৷” “কাঁদতে দাও৷” বলেই রাজা হঠাৎ থমকে গেলেন৷ “বেটার বউটা তো এখন বিধবা, দেখার কেউ নাই, তাই না?” “আজ্ঞে মহারাজ, তাই৷” “বউটা দেখতে কেমন?” “দেখতে বড় জবর মহারাজ৷ অপরূপা, লাস্যময়ী সুন্দরী!” রাজা হাতে তালি দিয়ে উঠলেন, “বলো কি? শকুন্তলার মতো নাকি?” “আজ্ঞে মহারাজ, শকুন্তলাকে তো আমি দেখি নাই৷ তবে মনে হয় এ বউটা তার চেয়ে কিছু কম হবে না৷” “সাব্বাশ! উজির, সেনাবাহিনীকে মানা করে দাও৷ বলো যে আমার আর শিকারে যাবার দরকার নাই৷ আর এক্ষুনি সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করো৷ আমি ঘোষণা দিবো৷” বলে রাজা মন্ত্রীদের দিকে চেয়ে একগাল হাসলেন৷ সিংহাসনের সামনে টান হয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্নমাখা উদার গলায় বললেন, “আজ থেকে বউটা আমার সাথে থাকবে৷ আজ থেকে তার সব দায়িত্ব আমার৷” (গল্পের নামকরণের ব্যাপারে আমার দক্ষতা সীমাহিন৷ প্রথমে 'গল্প অথবা না-গল্প' নাম দিয়ে পোষ্ট দিছিলাম৷ আজকে নাম পরিবর্তন করে গল্পটা আবার দিলাম৷ এই নামটাও বেশি উপযুক্ত মনে হচ্ছে না৷ কেউ গল্পটার একটা উপযুক্ত নাম দিলে ভালো লাগবে৷)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।