প্রবাসী ইরানের পারমানবিক কর্মসুচী নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আমেরিকার সাথে টানাপোড়েন চলে আসছে বেশ কয়েক বছর। পশ্চিমাদের অভিযোগ ইরান পারমানবিক অস্ত্রে সজ্জিত হতে চাইছে আর ইরানের দাবী তার পারমানবিক কর্মসূচী শান্তিপূর্ন। যেটাই সত্যি হোক না কেন উত্তেজনা যে বাড়ছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। ইরানের উপর পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধ দিনকে দিন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে,ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইরান থেকে আর তেল কিনবে না, অর্থনৈতিক লেন্দেনের নিষেধাজ্ঞা, বানিজ্য অবরোধ ইত্যাদি তো আরো অনেক আগেই চেপে বসে আছে। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা যে খুব বেশী কার্য্যকর হবে তা মনে হয় না।
বিশ্বব্যাপি তেলের চাহিদা বাড়ছে তো বাড়ছেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেল না কিনলেও অনান্য উদিয়মান অর্থ নীতির দেশ যেমন ভারত এবং চীনকে খদ্দের হিসেবে পেতে ইরানের খুব বেশী অসুবিধে হবে না। ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে।
ঘোষিত পরমানু বোমার অধিকারী দেশ ছাড়াও অনেক দেশই পারমানবিক বোমার প্রযুক্তির অধিকারী। ইরান যে ইতিমধ্যে তা হস্তগত করেছে তা বলার যথেস্ট যুক্তিসঙ্গত কারন আছে ।
আনুষ্ঠানিক ভাবে পারমানবিক পরীক্ষা চালিয়ে নিজেকে পারমানবিক শক্তির দেশ হিসেবে ঘোষনা করার কাছাকাছি ইরান। মাত্র কয়েকদিন আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ ঘোষনা দিয়েছেন যে সারা বিশ্ব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পারমানবিক ক্ষেত্রে ইরানের বিস্ময়কর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবে। গত নভেম্বর মাসে তেহরানের বৃটিশ দুতাবাসে হামলার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার অল্প কিছুদিন পর মার্কিন ড্রোন বিমান ভূপাতিত করে ইরান যা আমেরিকাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
শেষ যে পন্থা বাকী আছে তা হল সামরিক বল প্রয়োগে ইরানকে নিবৃত্ত করা।
২৪ শে জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষনে বলেন “ আমাদের লক্ষ পরিস্কার, ইরানকে যে কোন উপায়ে পারমানবিক বোমার শক্তির অধিকারী হওয়া থেকে বিরত রাখা হবে। সামরিক অভিযানের ব্যাপারও আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে” আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যানেট্টা বলেছেন এ বছরেই এপ্রিলে ইজরায়েল ইরানে হামলা চালাবে। প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ বরাবরই ইজরায়েলের বিরোধী। ইজরায়েলের অস্তিত্বকেই অবৈধ মনে করেন তিনি । ইজরায়েলও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সর্ব শক্তি প্রয়োগ করবে তা বলাই বাহুল্য।
তবে মুরুব্বী আমেরিকা ছাড়া তারা কতোটা সুবিধে করতে পারবে তা কিন্তু প্রশ্ন সাপেক্ষ।
কুটনীতি যেখানে ব্যার্থ সেখানে বলপ্রয়োগ। যদি বলপ্রয়োগ ব্যার্থ হয় তাহলে? এটা সত্যি যে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হয় না। উপসাগরে আমেরিকার সার্বিক উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা ইরানের উপর ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। আমেরিকার সাথে ইজরায়েল যোগ দেবে কিনা বা আলাদাভাবে আক্রমন চালাবে তা এই মূহুর্তে হয়ত বলা যাচ্ছে না।
বৃটেন এবং ফ্রান্স ও যে যোগ দেবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ইরানে হামলার ব্যাপারে মার্কিন বিমান বাহিনী প্রধান জেনারেল নর্টন শোয়ার্য বলেন “ আমরা প্রস্তুত, নির্দেশ পাওয়া মাত্র আমেরিকার সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে” অপর দিকে জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে বলেন ইরানের সাথে যুদ্ধ হবে ভয়ঙ্কর ব্যাপার সুতরাং যুদ্ধের পরিবর্তে অন্য সব উপায় আগে বিবেচনা করা উচিত।
কয়েক সপ্তাহ হল উপসাগরে সামরিক মহড়া চালালো ইরান। ইরান হুশিয়ারি উচ্চারন করেছে যে প্রয়োজনে তারা হরুমজ প্রনালী বন্ধ করে দেবে। হরমুজ প্রনালী দিয়ে পৃথিবীর ২০% তেল রফতানী হয়ে থাকে।
আর সবচে’ সঙ্কীর্ন স্থানে মাত্র ২১ নটিক্যাল মাইল বা ৪০ কিলোমিটার মত চওড়া। পালটা হুশিয়ারী দিয়ে আমেরিকা যে কোন মূল্যে হরমুজ প্রনালী খোলা রাখার অঙ্গীকার করেছে।
এই মুহুর্তে পারস্য উপসাগরে আমেরিকা এবং বৃটেনের সামরিক উপস্থিতি উল্যেখযোগ্য। হরমুজ প্রনালীতে এবং আরব সাগরে রয়েছে বিমান বাহী জাহাজ ইউ এস এস – আব্রাহাম লিঙ্কন, এবং ইউ এস এস- কার্ল ভিনসন। অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত এর প্রতিটা একটা ছোটখাট দুর্গ ।
প্রতিটাতে আছে ৫ থেকে ৬ হাজার নৌসেনা এবং ৮০ টির মত যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপনাস্ত্র ইত্যাদি। আব্রাহাম লিঙ্কন জাহাজটি কয়েক সপ্তাহ আগে ফিরে গেলেও আবার উপসাগরে ঢুকেছে হরমুজ প্রনালী দিয়ে। পারমানবিক শক্তি চালিত নিমিৎস শ্রেনীর এই যুদ্ধ জাহাজগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম। উপসাগরে ঢোকার এক পর্যায়ে ইরানী প্যাট্রোল বোট ক্যারিয়ার জাহাজের ২কিলোমিটারের মধ্যে চলে এলেও তা আবার ফিরে যায়। কয়েক সপ্তাহ আগে ইরান মার্কিন নৌ বাহিনীর সামরিক উপস্থিতি কে “ রুটিন” হিসেবে বর্ননা করে ।
পারস্য উপসাগরে আমেরিকা এবং বৃটেনের নৌবহর।
ইরান এবং চীন- এশিয়ার উদিয়মান শক্তি চীন ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপের বিরোধী। কারন হল সৌদি আরবের পর ইরান চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম(২০%) তেলের যোগানদাতা(প্রতিদিন ৫ লক্ষ ব্যারেল) ইরানের তেল ছাড়া চীন অচল। ইরানের তেল অনুসন্ধান এবং তেল উত্তোলনেও রয়েছে কয়েক হাজার কোটী ডলারের চীনা বিনিয়োগ। অন্যদিকে আমেরিকা হল চীনের বৃহত্তম বাজার।
আর চীনে বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগ কারী আমেরিকা। সৌদি আরব ইরানের পারমানবিক কর্মসুচীর তীব্র বিরোধী দেশ এবং চীনের তেল চাহিদার বৃহত্তম যোগানদার। চীন রয়েছে “শ্যাম রাখি না কূল রাখি” অবস্থায়। ফলে চীন চাইছে আন্তর্জাতিক পারমানবিক শক্তি এজেন্সী ( IAEA) এর আওতায় এ সমস্যার সমাধান। ইরানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়া চীনের পক্ষে দুঃসাধ্য।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জেনারেল চার্চিলকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন “ যুদ্ধ ছেলেখেলা নয়, সমুদ্রযাত্রায় ঝড় বা ঢেঊয়ের খবর কেউ জানে না । যে নায়ক যুদ্ধ শুরুর সঙ্কেত দেবেন তখনই কিন্তু তিনি নীতি নির্ধারক রইলেন না , বরং অনিশ্চয়তার কৃতদাস হয়ে গেলেন।
যুদ্ধ যদি সত্যি সত্যি শুরু হয় তাহলে ইরানও তার সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে তাও নিশ্চিত। উপসাগরীয় এলাকায় আমেরিকার সামরিক এবং বেসামরিক স্থাপনা গুলো আক্রান্ত হবে। বাহরাইনে আমেরিকার ৫ম নৌ বহরের কমান্ড পোস্ট, কাতারে বিমান বাহিনীর সদর দফতর, কুয়েতের আমেরিকার ঘাটি আক্রান্ত হবে।
সারা বিশ্বে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সন্ত্রাসবাদী হামলা বৃদ্ধি পাবে। হেজবুল্ললাহ ইজরায়েলে রকেট এবং ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালাবে ।
যুদ্ধ হলে তা কেমন হবে ? আমেরিকা কি ইরানের পারমানবিক স্থাপনা গুলো ধ্বংস করে দিয়ে ফিরে যাবে না ইরাকের মত দীর্ঘকালীন উপস্থিতি বজায় রাখবে তা সময়ই বলে দেবে।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ইরান তার লক্ষে আরো এগিয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ ঘোষনা দিয়েছেন ইরান তার পারমানবিক লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। রাস্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিউক্লিয়ার রিসার্চ রিয়াক্টরে ফুয়েল রড ঢোকানোর দৃশ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।