আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালোবাসা দিবস আমাদের সাংস্কৃতিক দাসত্বের দলিল

বাঙালি নাকি সবকিছু শর্টকার্টে করতে ভালোবাসে । সারা বছরের কর্তব্যগুলো বাঙালি একদিনে পালন করতে চায় । সেটা হোক ধর্মীয় ক্ষেত্রে কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে । যেমন সারা বছর আমরা এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ না পড়লেও সারা বছরের পাপের মোছন করার জন্য শবে বরাতের নফল নামাজের জন্য মসজিদে সবার আগেই ছুটে যাই ! সারা বছর মা বাবার সাথে কেমন আচরণ করলাম, সেসব ভুলে গিয়ে মা দিবস আর বাবা দিবস পালন করি মা বাবার বাধ্য সন্তানের মত ! সারা বছর বিদেশি ভাষার দাসত্ব করলেও একুশে ফেব্রুয়ারিতে বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’... ১৯৯৩ সালে সাপ্তাহিক যায়যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান ‘দিবসপ্রিয়’ বাঙালিদের একটি নতুন দিবসের সাথে পরিচিত করে দিলেন । সেটি হলো ভ্যালেন্টাইন’স দিবস ।

আদতে এটি ভ্যালেন্টাইন’স দিবস হলেও শফিক রেহমান সাহেব এটিকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ভালোবাসা দিবস হিসেবে ! আর যায় কোথায় ? বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহণে উন্মোখ হয়ে থাকা বাঙালি তরুণ-তরুণীরা এটিকে নষ্টামী আর নোংরামী করার উত্তম একটি দিন হিসেবে গ্রহণ করে নিলো ! তারা একবারও ভাবলোনা এই দিবসটি কবে এলো, কোথা থেকে এলো ? হয়তো তারা ভাবলো বছরে একটি দিন যদি ভালোবাসার জন্য উদযাপন করা যায়, তাহলে ক্ষতি কী ? কিন্তু কালের বিবর্তনে দিবসটি মহীরুহের আকার ধারণ করলো । এটি এমন এক দিবসে পরিণত হলো বাঙালিদের জন্য, যে সারা বছর তরুণ-তরুণীরা দিবসটির জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করে বসে থাকে । জাতীয় দিবসগুলোর জন্যও আজকাল তরুণদের এত অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়না ! আর শফিক রেহমানের মত পশ্চিমাদের দালাল বুদ্ধিজীবিরা ভাবলো, তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করার এইতো একটা সুযোগ । তাই তারাও এই দিবসটি পালন করতে ইন্ধন দিতে লাগলো নানাভাবে । ভালোবাসা দিবস বলে আমরা যে দিবস পালন করছি, সেটা কী আসলেই ভালোবাসা দিবস ? আসুন দেখে নিই ভালোবাসা দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- ‘২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন।

ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্য খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল।

অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন'স স্মরনে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে প্রাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরন ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে’(উইকিপিডিয়া) তাহলে দেখা গেলো খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের জন্য সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারি । আর এই দিনটিকে খৃষ্টানরা পালন করে উৎসবের সাথে ! খৃষ্টানদের একজন মানুষ তার ধর্ম প্রচারের জন্য জীবন দিলো, অথচ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক না পালন করে উৎসবের সাথে পশ্চিমারা পালন করছে কেন ? আর আমরাই বা কেন দিবসটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করি ? এখানে ভালোবাসাটা কোথা থেকে এলো ? তাছাড়া ভালোবাসা মানে কী শুধু প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা ? মা বাবার প্রতি ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি মা বাবার ভালোবাসা কী ভালোবাসা নয় ? কিন্তু এই দিবসে আমরা কী করছি ? শুধুই বিবাহ পূর্ব প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা ছাড়া কী আর কিছু করছি দিবসটিতে ? আজ থেকে চার/পাচ বছর আগেও যেকোন জাতীয় দিবসে আমি আমার কাছের বন্ধুদের এসএমএস করতাম । কিন্তু এখন আর করিনা । কারণ জাতীয় দিবসগুলোর এসএমএসের রিপ্লাই প্রায় কেউই দেয়না আজকাল ।

অথচ বন্ধু দিবস কিংবা ভ্যালেন্টাইনে এসএমএসের বন্যা বয়ে যায় মোবাইলগুলোতে ! আমাদের একটা জাতীয় স্বভাব হলো অন্যের, বিশেষ করে পশ্চিম কিংবা ভারতের ভালো সবকিছু প্রত্যাখান করে যা কিছু মন্দ সেগুলো খুব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করি । এই ভ্যালেন্টাইন’স তথা ভালোবাসা দিবস তারই একটি নমুনা মাত্র ! দিবসটি আমাদের সাংস্কৃতিক দাসত্বের দলিলও বটে ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.