কান্তনগর মন্দির ইটের তৈরী অষ্টাদশ শতাব্দীর মন্দির। বাংলাদেশে অন্যতম দর্শনীয় একটি মন্দির। এটা কান্তজিউ মন্দির হিসাবে পরিচিত। দিনাজপুরের বিখ্যাত মহারাজা প্রাণনাথ রায় ১৭২২ সালে তার শেষ বয়সে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী রুকমিনির ইচ্ছায় তার দত্তক পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে কাজ সমাপ্ত করেন।
এটা দেশের বিদ্যমান ইট এবং পোড়ামাটি শৈলীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মন্দিরের ভিত্তি বেলে পাথরের তৈরী যা প্রাচীন দেবকোট থেকে আনা হয়েছিল। এর সবচেয়ে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হল দেয়ালের কারুকাজ যা মুঘল-যুগের শেষ পর্যায়ের পরিচয় বহন করে। কান্তজিউ মন্দিরের সমস্ত দেয়াল পোড়ামাটির ফলক দিয়ে অলংকৃত; ভিত্তি থেকে শুরু করে মন্দিরের চূড়া পর্যন্ত ভেতরে ও বাইরে দেয়ালের প্রতিটি ইঞ্চিতে তিনটি পৌরাণিক কাহিনীর অনুসরণে মনুষ্য মূর্তি ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বিস্ময়কর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রামায়ন ও মহাভারতের অসংখ্য পাত্র-পাত্রীর বিন্যাস ঘটেছে এখানে।
মন্দিরের দেওয়ালে পোড়ামাটির চিত্র অলংঙ্করণকারী লোকশিল্পীদের অনেকেই এসেছিলেন কৃষ্ণনগর থেকে।
মন্দিরটি মূলত একটি তিন তলা নবরত্ন (নয় মোচাকার শীর্ষসমন্বিত) মন্দির। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এর চূড়াগুলো ভেঙ্গে পড়ে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ বাহাদুর ধ্বংশ হয়ে যাওয়া নয়টি চূড়া বাদে মন্দিরটির ব্যপক পুর্নগঠন করেছিলেন। বর্তমানে আমরা মন্দিরটির পুর্নগঠিত রূপটিই দেখতে পাই।
কিন্তু কেমন ছিল এই মন্দিরটির আদি রূপ? জন হেনরি র্যাোভেনশ (John Henry Ravenshaw) -এর কল্যাণে আমরা এর আদি রূপটি দেখতে পাই। তিনি বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৮৭১ সালে তিনি কান্তজিউ মন্দিরকে ক্যামেরা বন্দী করেন, যেখানে মন্দিরের আদি স্থাপনা শৈলী চিত্রিত হয়েছে। আসুন সেই ছবিগুলি দেখিঃ
চিত্রগ্রাহকঃ জন হেনরি র্যােভেনশ
সময়কালঃ ১৮৭১
ভূমিকম্পের পূর্বে মূল নবরত্ন মন্দিরঃ
মন্দিরের দক্ষিণ দিকের ছবিঃ
মন্দিরের পূর্ব দিকের ছবিঃ
মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম দিকের নিকটবর্তী ছবিঃ
মন্দিরের পশ্চিম দিকের প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী ছবিঃ
মন্দিরের পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী ছবিঃ
মন্দিরের দক্ষিণ দিকের প্রবেশদ্বারের কেন্দ্রীয় খিলানের নিকটবর্তী ছবি; বারান্দায় ঠাকুরের বসার স্থান দেখা যাচ্ছেঃ
মন্দিরের পশ্চিম দিকের একটি স্তম্ভের নিকটবর্তী ছবিঃ
নোটঃ জন হেনরি র্র্ভেনশ (John Henry Ravenshaw) বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি গৌরে অবস্থাকালীন সময়ে (১৮৬৫-১৮৬৭)'Gaur: Its Ruins and Inscriptions' নামক বিখ্যাত এলবামের কাজ করেন।
তিনি ১৮৭৪ সালে লন্ডনে ফিরে যান এবং মৃত্যুবরণ করেন; ফলে এটা অনেকদিন অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল। তার বিধবা স্ত্রী ক্যারোলিনের (Caroline) আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটা প্রকাশিত হয়।
তথ্যসূত্র এবং ছবিঃ
বাংলাপিডিয়া
ব্রিটিশ লাইব্রেরী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।