আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাদশাহ ও বাদীর কাহিনী

হযরত মাওলানা রুমী (রঃ) অন্তরের ময়লা দূর করার জন্য একটি উৎকৃষ্ট কেচ্ছা বয়ান করেছেন- তিনি বলেন- বন্ধুগণ! আমার এ কাহিনীটি শ্রবণ করুন। এ ঘটনাটি আমাদের বর্তমান অবস্থার অবিকল ছবি। ইসলামের পূর্ব যুগে জনৈক ধর্মপরায়ণ বাদশাহ একবার শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা হলে রাজপথে এক পরমা সুন্দরী বাঁদীকে দেখে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লেন। অতঃপর বাদশাহ বহু অর্থের বিনিময়ে বাঁদীটিকে খরিদ করে আনলেন। বাঁদী শাহী মহলে এসে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

বাদশাহ স্থানীয় বিজ্ঞ-চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকগণ প্রাণপন চেষ্টা করেও রোগ নিরাময়ে ব্যর্থ হয়। রোগী ক্রমে ক্রমে ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। বাঁদীর অবস্থা দর্শনে বাদশাহ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। বাদশাহ হতাশ ও পেরেশান হয়ে আল্লাহ পাকের শরণাপন্ন হন এবং মসজিদে গিয়ে কাতর ও বিনয়ভাবে প্রার্থনা করে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে দেন।

এমন অবস্থায় বাদশাহ নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়েন এবং স্বপ্নে এক গায়েবী চিকিৎসকের খোঁজ পান। সেই গায়েবী চিকিৎসক নিজ অভিজ্ঞতার দ্বারা বুঝতে পারেন যে, বাঁদীর দেহে কোন দৈহিক রোগ নেই, বাঁদী প্রেমরোগে আক্রান্ত। বিজ্ঞ চিকিৎসক বহু কৌশলে আবিষ্কার করলেন যে, বাঁদী জনৈক স্বর্ণকারের প্রেমে আসক্ত। অতঃপর বাদশাহ স্বর্ণকারকে লোভ লালসা দেখিয়ে রাজদরবারে এনে বাঁদীকে স্বর্ণকারের সাথে থাকার পুরোপুরি সুযোগ করে দেন। স্বর্ণকারের সঙ্গ লাভ করে বাঁদী অল্পদিনের মধ্যেই পূর্ণসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্য লাভ করে।

তারপর বাঁদীর অন্তর হতে প্রেমপ্রীতি দুর করার জন্য বিশেষ ঔষধ প্রয়োগ করে স্বর্ণকারের দেহকে কুশ্রী ও কুৎসিৎ করে দেয়া হয়। স্বর্ণকারের কুৎসিৎ ও লাবণ্যহীন চেহারা দেখে বাঁদী তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে পড়ে। স্বর্ণকারের প্রতি বাঁদীর আকর্ষণ একেবারে তিরোহিত হলে বিষাক্ত ঔষধ প্রয়োগে স্বর্ণকারের জীবনাবসান ঘটান হল। ফলে বাদশাহের মনোবাসনা পূর্ণ হল। মাওলানা রুমী (রঃ) বলেন, এই কাহিনীটি আমাদের অবস্থার অনুরূপ।

আমাদের রূহ বাদশাহ নিজের বাঁদী নফসের বিপর আশেক, কিন্ত নফস দুনিয়ার প্রতি আসক্ত। সাধারণ চিকিৎসক অর্থ্যাৎ অপরিপক্ক পীর এই রোগের চিকিৎসা করতে সক্ষম নয়; সুতরাং কামেল পীরের আশ্রয় গ্রহণ করা আবশ্যক। কামেল পীর নিজের সুযোগ্য ও সুকৌশল চিকিৎসার দ্বারা দুনিয়ার উপভোগ্য বস্তসমূহ নফছ হতে ধীরে ধীরে পৃথক করে দেন এবং দুনিয়াকে নফছের সম্মুক্ষে কুৎসিৎ বিশ্রী করে দেখান, যদ্দরুন নফছের কামনা-বাসনা, প্রেরণা ক্রমে ক্রমে হ্রাস পায় এবং নফছ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, নফছের কুপ্রবৃত্তি কামনা বাসনা প্রেরণা একেবারেই বর্জিত হয় এবং কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, বিদ্বষ প্রভৃতি কুপ্রবৃত্তি ও ব্যাধিসমূহ হতে নফছ একেবারেই সুস্থ হয়ে যায়, তখন রূহ বাদশাহ নফছ বাঁদী দ্বারা উপকৃত হয়। ফায়েদাঃ আধ্যাত্মিক রোগের চিকিৎসা, অন্তরের ময়লা দূর করা ও তরীকত, মারেফাত শিক্ষা করার একমাত্র পথ এই যে, কোন কামেল পীরের দিকে রুজু করা এবং তার নির্দেশনুযায়ী আমল করা। তিনি তোমার অবস্থানুযায়ী আত্মশুদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা করবেন।

উপদেশঃ দুটি বিষয়ই মাওলানা রুমীর মছনবীর বিশাল অংশ। একটি তাওহীদ- যা কাম্য ও উদ্দেশ্য। অপরটি তাওহীদ অর্জন করার পথ। তা হলো পীরে কামেলের অনুসরণ ও পূর্ণ আনুগত্য। আমরা যদি আমাদের অবস্থার মধ্যে গভীর ভাবে চিন্তা করতে থাকি, তা হলে ইহলোক ও পরলোক উভয় জগতেরই উপকার এবং মঙ্গল করতে পারব।

এই বাস্তব ঘটনাটি দিলের কান দিয়ে শোন, তা হলে তুমি সম্পূর্ণরূপে কাদা-পানি হতে বের হয়ে আসতে পারবে। কাদা-পানি অর্থ দুনিয়ার যাবতীয় সম্পর্ক ও নফছের বিলাস এবং উপভোগের বস্ত। / / ভালো লাগলে আমাদের পেইজটি লাইক দিন: Oronibd- অরণি বিডি । একটি অনলাইন পত্রিকা যা সবার জন্য উন্মুক্ত। / আমাদের সাইটের ঠিকানাঃ Oronibd- অরণি বিডি ।

একটি অনলাইন পত্রিকা যা সবার জন্য উন্মুক্ত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।