আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেন্ট মার্টিনে প্রথমবার

আমার বাংলাদেশ ভ্রমন মোটামুটি একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি সেন্টমার্টিনে প্রথম বার ঘুরতে গিয়ে । ছোট এই দেশটাতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুড়ার মতো প্রায় সব জায়গাই দেখছি । বাকী ছিলো সেন্ট মার্টিন । আগেও কয়েকবার ঘুরাতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও বিভিন্ন কারণে যেতে পারিনি কিন্তু এবার আর মিস হলো না............. প্রয়োজনে আর সুযোগ পেয়ে চলে গেলাম সেন্ট মার্টিন............. গত ১ তারিখ রাত ৯ টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা হলাম। কিছুটা সময় নিশাচরের অভ্যাস মতো নেটে থেকে স্বপ্রে রাজ্যে চলে যাওয়ার চিন্তা করা ছাড়া উপায় ছিলো না কারন নেট বাবাজি আর কানেকশন হচ্ছিল না,,,,,,, শিক্ষা সফরের বন্ধুরা পুরো গাড়ী মাতিয়ে রাখছিলো গান ,হাসি , আড্ডা , আর মজা আনন্দ দিয়ে ......... কখনো কখনো আমি নিজেও কিছুটা শরীক হচ্ছিলাম যদিও পারছিলাম না........... শীতের পরশে বড় চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমটা ভালো হচ্ছিলো ।

কিন্তু গাড়ীর সিট গুলো রুমের বিছানার মতো বড় না হওয়ায় একটু কষ্ট হচ্ছিল... তবুও মানিয়ে নিয়েই স্বপ্নের রাজ্যে উড়োউড়ি করছিলাম। সে রাজ্য থেকে জাগ্রত হয়ে দেখি সকাল ৬ টা বাজে । কক্সবাজারের এক অখ্যাত গ্রামের মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদে ফ্রেস হয় নামাজটা পড়ে নিলাম.... কিন্তু তখন কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলাম এখনো ১ কিলোমিটার পথ বাকী.......... সময় মতো গিয়ে জাহাজ ধরতে পারবো তো???????? আকা বাকা পিচ ঢালাই সুরু রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের দানব যানটি । আগে থেকে যোগাযোগ করে মৌলভিবাজার থেকে গাড়ীতে উঠিয়ে নিলাম আমাদের পরিচিত এক ছোট ভাইকে । মনে রাখবেন এটা কিন্তু সিলেটের মৌলভিবাজার নয়..... টেকনাফ গিয়ে যখন পৌছলাম তখন বাজে ৮.৩০ টা।

জাহাজ ছাড়তে এখনো বাকী ১ ঘন্টা । অতএব সকলের মধ্য প্রাচ্যটা শান্ত করাটা খুবই জরুরী..... সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছুটা ফ্রেস হয়ে সবাই স্থানীয় হোটেলে হালকা নাস্তা সেড়ে নিলাম....। ঠিক সকাল ৯.৩০ । সাথে সাথেই ছেড়ে দিলো আমাদের জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ...... কারো জন্য কোন অপেক্ষা নয় .... নিজের সময় ঠিক রাখে জাহাজ টি.., যার প্রমান পেলাম ফিরার সময়ও । ঠিক ৩.০০ বাজতে আর কারো অপেক্ষা না করে ঘাট ত্যাগ করলো জাহাজটি।

সেন্টমার্টিনের এক স্থানীয় বড় ভাইয়ের আহবানে আমরা কয়েকজন চলে গিয়ে ছিলাম ভিআইপি ব্রিজ ডেকে। সেখান থেকে নাফ নদীর চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু মন ভরছিলো না তাই চলে আসলাম শিক্ষা সফরের বন্ধুরা যেখানে মজা করছিলো সেই জাহাজের অগ্রভাগে....... ছবি তুলা , গান গাওয়া, ভ্রম্যমান সংসদ চালানো ছিলো মজার আয়োজন। হঠাৎ কেপে উঠলো জাহাজ................ জাহাজের ফাকা দিয়ে পানি উঠে ভিজিয়ে দিলো আমাদের জুতা গুলোকে .....তাকিয়ে দেখি আমরা চলে এসেছি নাফ নদী ছেড়ে সাগরে। একের পর এক ঢেউ জাহাজ আঘাত করছিলো কিন্তু দক্ষ নাবিক তা অতিক্রম করে নিয়ে যাচ্ছির গন্তব্যে ।

..... অবশেষে পৌছে গেলাম নারিকেল জিঞ্জিরা সেন্টা মার্টিন। । নেমেই অন্য সবাইকে রেখে কয়েকজন ছেড়া দ্বীপ যাওয়ার চেষ্টাটা চালালাম কিন্তু স্পীড বোট না পাওয়া আর স্থানীয় কেউ সাথে না থাকায় যথা সময় ফিরে আসতে পারবো না মনে করে আর ছেড়া দ্বীপ প্রবল ইচ্ছাটা আরেক বারের মতো দমিয়ে রাখলাম। এবার সেন্ট মার্টিনের ১২ কিমি দ্বীপ টা ঘুরে দেখার ইচ্ছায় একটি ভ্যান ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়লাম । প্রথমে নাড়িকেল বাগান এলাকা টা ঘুরে আসলাম ।

সেখানের চমৎকার বীচ ঘুরে তরমুজ খেয়ে চলে আসলাম মেইন বীচের কাছে গিয়ে পেলাম হুমায়ুন আহমেদের বাড়ী। স্থানীয় এক ভাইয়ের সহায়তায় ঢুকতে পারলাম হুমায়ুন আহমেদ এর বাড়ীতে । সেখান থেকে চলে গেলাম বীচে.......... সাগরের নীল পানিতে দুই পা ভিজিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে মধ্য প্রাচ্য শান্ত করার জন্য নির্ধারিত স্থানে এসে খাবার পর্ব সেড়ে নিলাম। ইতিমধ্যে ২.১৫ টা বেজে যাওয়ায় ফিরে আসার তোরজোর শুরু হয়ে গেল। ঠিক ৩.০০ টা বাজতেই ছেড়ে দিলো আমাদের জাহাজ।

কিছু দর্শনার্থীরা জাহাজের অগ্রভাগে গিয়েছিলো কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে তারা ভিজে গেলো অল্প সময়েই। এখানে ঘটলো ভীতিকর অবস্থা...................... সাগরের ঢেউ জাহাজটাকে নিয়ে খেলা শুরু করলো , । একবার এদিক আবার সেদিক । ....... এতে চরম ভয় পেয়ে গেলো অনেকেই । আমাদের সাথের এক বন্ধুতো হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে গেল............. কিছু সেবা করায় ঠিক হলো সে............ তখনি অনেককে সিদ্ধান্ত নিতে শুনলাম........... "আর আসবো না সেন্ট মার্টিন" সুটকি শুকানো চলছে এই টা কি??????/ কিন্তু আমার তো মন ভড়লো না....... কিন্তু কি আর করা , ফিরে আসতেই হবে।

ফিরার পথে কথা হলো স্বপ্নকুটির ভাইর সাথে........। এবার গন্তব্য কক্সবাজার। রাত ৮.০০ টায় আমাদের নিয়ে গাড়ী চলে আসলো কক্সবাজারে। আমার ব্যস্ততা থাকায় চলে ঢাকায় ফিরে আসাতে হলো সেদিন রাত ৯.০০ টায়। সবাইকে রেখে চলে আসতে কিছুটা কষ্ট লাগলেও কিছু করার ছিলো না।

সেন্টমার্টিনে প্রথম সফরটা ভালোই হলো । আবার কবে যাবো সেই অপেক্ষায় রইলাম................ সবাই ভালো থাকবেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।