ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ। জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দ্বীপটিতে আছে বহু প্রজাতির শৈবাল, শামুক-ঝিনুক এবং কড়ি। এ জন্য গবেষক এবং পর্যটকদের কাছে দ্বীপটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে ডিম পাড়তে আসে বিরল সামুদ্রিক কচ্ছপ। দ্বীপটিতে স্থাপন করা হচ্ছে মেরিন পার্ক।
২০০২ সালের জানুয়ারিতে সরকার সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। এ সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মেরিন পার্ক প্রতিষ্ঠা ও ইকো টুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে। এর আওতায় দ্বীপে কিছু কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন, গাছ কাটা, শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা, প্রবাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা, প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস বা সৃষ্টিকারী সব রকম কার্যকলাপ, মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয় এমন ধরনের কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রকল্পের কর্মসূচিতে ছিলো পরিবেশবান্ধব পর্যটন মোটেল নির্মাণ, পরিবেশসম্মত পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেরিন পার্ক স্থাপন, গাস বোটের মাধ্যমে পর্যটকদের সমুদ্রের তলদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখানো, দ্বীপের পাখি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য জন্য টাওয়ার স্থাপন, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহ, জাদুঘর স্থাপন এবং গবেষকের গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি।
প্রকল্পের কিছু কাজ হলেও এখন প্রকল্পটির কি অবস্থা তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনডিপির যৌথ এ প্রকল্পের ওয়েবসাইট (Click This Link) থেকে - Conservation of Biodiversity, Marine Park Establishment and Eco tourism Development at Saint Martin’s Island. লিংকে ক্লিক করলে তা http://www.stmartinsbd.org/ এই ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। যা এই প্রকল্পের ওয়েবসাইট নয়।
সেন্ট মার্টিন্সকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবে এ আইনের প্রয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সেন্ট মার্টিন্সের পরিবেশ অবনতি হচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে পর্যটকদের দেখার মতো কিছুই থাকবে না।
সেন্ট মার্টিন্স ঘুরে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পর্যটক প্রতিদিন দ্বীপটি দেখার জন্য আসছেন। পর্যটকরা নিজেদের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য এবং ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলছেন। এছাড়াও দ্বীপবাসী লোকজনের বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের ফলে দ্বীপটির পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বেশ কিছু মাছ প্রক্রিয়াজাত করার প্রতিষ্ঠান আছে।
প্রক্রিয়াজাত করার পর মাছের বর্জ্যগুলো যেখানে-সেখানে ফেলা হয়। এর ফলে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে পুতিগন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপবাসীর প্রধান ব্যবসা মাছ ধরা। প্রতিদিন শত শত জেলে নৌকা মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। মাছ ধরা জালে দ্বীপের নুড়িপাথর ব্যবহার করা হয়।
জালে ব্যবহৃত নুড়িপাথরগুলো প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর হারিয়ে যায় বা পরিবর্তন করতে হয়। এভাবে দ্বীপের পাথর ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এর ফলে দ্বীপের ক্ষয়সাধন বেড়ে যাচ্ছে এবং দ্বীপ ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে।
দ্বীপবাসীর জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয় দ্বীপের দক্ষিণ দিকের প্রাকৃতিক গাছপালা দিয়ে। জ্বালানির প্রয়োজনে স্থানীয়রা দ্বীপের দক্ষিণ দিক থেকে কেয়া ও কেওড়া বন কেটে নিয়ে আসে।
জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করার সময় তারা প্রথমে ঝোপে আগুন জ্বালায়। তারপর তা অর্ধপোড়া অবস্থায় কেটে নিয়ে আসে। এভাবে গাছ কাটার ফলে দ্বীপের প্রাকৃতিক গাছপালার প্রচুর ক্ষতি হয়।
স্থানীয় কয়েকটি হোটেলের পক্ষ থেকে সামনের সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ দ্বীপটির পরিবেশ নজরদারি করার জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং অবতরণের সময় পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা এবং মাছের বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় বা জাতীয় কোনো পর্যায় থেকেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়াও দ্বীপটি সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির ব্যবহার করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। স্থানীয় হোটেলগুলো বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে তেল এনে জেনারেটর চালায়। সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করলে হোটেলগুলোর অর্থের সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা হতো।
[ছবি: লেখক]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।