আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন লিয়াকত, দিলদার এবং ডিনামাইট

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর। একজন দিলদার আহমেদ আত্মহত্যা করেছেন। ছাপ্পান্ন বছর বয়সের দিলদার আহমেদ। গতকাল আত্মহত্যা করেছিলেন কাজী লিয়াকত আলী।

চল্লিশ বছরের টগবগে তরুণ। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। সবকিছু খুইয়েছেন বাজারের টালমাটাল অবস্থায়। দুই জনেরই সংসার ছিল। পরিবার পরিজন ছিল।

সব মায়া-মমতা ত্যাগ করে শুধু ঋণের বোঝা বইতে না পেরে দুজন আত্মাহুতি দিয়েছেন। আত্মহত্যার মিছিলে আরও কতজন যোগ দেবেন সময়ই তা বলে দেবে। কিন্তু এই মিছিল চলার আগেই তা থামানো উচিত। দেশে রাজনৈতিক অনেক মিছিল হয়। সরকারি দলেরও হয়, বিরোধী দলেরও হয়।

কিন্তু এই আত্মহত্যার মিছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুঁজি হারানো মানুষরা ঋণগ্রস্ত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন। মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা পরাজিত হয়ে পৃথিবীর মায়া-মমতা ত্যাগ করছেন। ঋণগ্রস্ততা একজন মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

মানসিক অশান্তি তছনছ করে দেয় সবকিছু। দাম্পত্য জীবনেও দেখা দেয় অশান্তি। পারিবারিক অশান্তি চরমে ওঠে। জীবনের সব দ্বার রুদ্ধ হয়ে আশার ক্ষীণ কণাও যখন দেখা যায় না, তখনই একজন ব্যক্তি মনে হয় আত্মহত্যার চিন্তা করে থাকে। বাংলাদেশে এখন কোনো বিনিয়োগ নাই, তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ ও নাই।

অনেক বেকার তরুণ বিকল্প হিসেবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। কেউ কেউ সরকারি বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন দু'পয়সা লাভের আশায়। বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় জীবন চালাতে হলে দু'পয়সা বাড়তি আয় করা দরকার। আবার কেউ যে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে নেবে সে ব্যবস্থাও নেই। তাই শেয়ার বাজারকেই আঁকড়ে ধরে অনেকে বাঁচতে চেয়েছিল।

কিন্তু তারা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যার মিছিলে শামিল হয়েছে। পাকিস্তান আমলে সামাদ সাহেব সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনায় ব্যবসায় নামলেন। সে সময়ে পাটের ব্যবসা খুব রমরমা ছিল। খুলনা গুদাম ভাড়া করে তিনি কেনা পাট গুদামজাত করে রাখলেন। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি পাট রপ্তানী করতে পারলেন না।

জীবন বাঁচাতে তিনি খুলনা ছেড়ে চলে আসলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। স্বাধীনতার কিছুদিন পর তিনি ব্যবসাস্থলে গিয়ে দেখেন সবকিছু ডাকাতি হয়ে গেছে। দেড়শ কোটি টাকার পাট আশি কোটি টাকায় মাড়োয়ারি এক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়েছে চিহ্নিত ডাকাত গং। সামাদ সাহেব খোঁজ নিতে গিয়ে জীবনের হুমকির মুখে পড়ে যান।

পালিয়ে চলে আসেন। নিজের অর্থের পাশাপাশি ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ মেটাতে ঢাকার বসতবাড়ি বিক্রি করেন। সর্বস্ব হারানোর বেদনা মনে। চিহ্নিত ডাকাতদল বহাল তবিয়তে আছে।

বাংলাদেশের অনেক সম্পদের মালিক এখন তারা। চোখের সামনে দিয়ে দেখছেন ডাকাতদলের আনাগোনা। চল্লিশ বছর ধরে এরকমটাই দেখে আসছেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। লিয়াকত এবং দিলদার আলীর মতো আত্মাহুতি দেওয়ার কথা কখনো ভাবেন নি।

সেই আবেগের বয়স পেরিয়ে এসেছেন অনেকদিন আগে। শুধু বুকে পুষে রেখেছেন একটি ডিনামাইট। একদিন সক্রোধ গর্জনে ডিনামাইট বুকে সেই ডাকাতদলের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায় দিন গুণছেন তিনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.