আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফারাও তুতেনখামেন (Pharao Tutankhamun) –পর্ব-৩

প্রবাসী ২য় পর্ব এখানে তুতেনখামেনের রত্নভান্ডার- হাওয়ার্ড কার্টার ১৯২২ সালে যেদিন ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি আবিস্কার করেন সেদিন তিনি তার ডায়েরীতে লিখেন” এই দিন হল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিন, এই দিনের জন্যেই আমি এতোদিন ধরে মিশরের মরুভুমি, পাহাড়ে হন্যে হয়ে ঘুরেছি, এমন দিন হয়ত আমার জীবনে আর আসবে না” কার্টার ৩১ বছর ধরে দিনান্ত পরিশ্রম করে খুজে পান তুতেনখামেনের সমাধি এবং আরো ১০ বছর ব্যয় করেন এই সমাধিতে প্রতিটি প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন উদ্ধার করে তা সারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে। তার সমাধিতে পাওয়া দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল, সম্রাটের নিত্যদিনে ব্যবহৃত সামগ্রী, শবযাত্রা এবং সমাধিস্থ করার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, ধনরত্ন, পরকালের জীবনে যা যা সম্রাটের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন খাবার , পানীয়, সুগন্ধি, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ইত্যাদি। ছিল ১১০ কিলোগ্রাম ওজনের সোনার কফিন, ২৫ পাউন্ড ওজনের সোনার মুখোশ,কিন্তু সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস ছিল সম্রাটের মমী। উদ্ধার করা প্রায় ৫০০০ দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে অল্প কয়েকটা এখানে তূলে ধরা হল- মনি, মানিক্য, রঙ্গিন কাঁচ বসানো, সোনার পাতে মোড়া কাঠের সিংহাসন। সোনার সিংহাসনের পিঠ হেলান দেওয়ার অংশে রানী আনেখেসেনামুন ফারাও তুতেনখামেনকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিচ্ছেন।

সূর্য্য দেবতা আটেন উপর থেকে জীবন রশ্মি বা “আঁখ” বিলাচ্ছেন সম্রাট সম্রাজ্ঞীর উপর। Tutankhamun's bed ফারাওয়ের পালঙ্ক। ফারাওয়ের সমাধিতে অনেকগুলো খাট পালঙ্ক পাওয়া যায়, যার মধ্যে সহজে ভাজ করে বহনযোগ্য খাটও ছিল। এই খাট এর পা বিড়ালের পায়ের থাবার উপর, মাঝের পাটাতন অংশ সুতোর জালি বোনা, উপর দিকে তোলা অংশ পায়ের দিক এবং বালিশের পরিবর্তে ব্যবহৃত হত “হেড রেস্ট” Headrest হাতির দাতের তৈরী সম্রাটের হেড রেস্ট। উপরের বাকানো প্লেটের মত অংশ ঘাড়কে সাপোর্ট করত।

নীচে বায়ুমন্ডলের দেবতা “শু” এবং দুই পাশে দুই সিংহ মুর্তি পূর্ব এবং পশ্চিম দিগ্নতের প্রতীক। Scene from a painted chest কাঠের সিন্দুকের গায়ে আঁকা দৃশ্য। এখানে ফারাও রথের উপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর উপর তীর ছুড়ছেন এবং শত্রুরা সম্রাটের ঘোড়ার পায়ের নীচে। A Ushabti figure সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধিতে পাওয়া সম্রাটের প্রতিকৃতি। তুতেনখামেনের সমাধিতে সম্রাটের এই রকম ৪১৩টি ছোট ছোট মূর্তি পাওয়া যায়।

এদের বলা হত “উশাবতি” বিশ্বাস করা হত যে এরা পরলোকে সম্রাটের বিভিন্ন কাজকর্মে সহায়তা করবেন। এখানে এই মূর্তির মাথায় সোনার রাজমুকুট এবং হাতে রাজদন্ড। The goddess Selket দেবী সেলকেত- ফারাওয়ের আভ্যন্তরীন প্রত্যংগগুলো ক্যানোপিক জারে রেখে জারগুলো রাখা ছিল একটা সিন্দুকের মধ্যে। সিন্দুকের চারদিকে চার দেবতার একজন দেবী সেলকেত সিন্দুকের একদিক আগলে দাঁড়িয়ে আছেন। সেলকেত এর প্রতিক হল তার মাথায় বৃশ্চিক ।

Stoppers from the Canopic Chest ক্যানোপিক জারের মুখগুলো বন্ধ ছিল ফারাওয়ের প্রতিকৃত সংবলিত ঢাকনা দেওয়া। ফারাওয়ের মাথায় রক্ষক সাপ এবং শকুনের প্রতিকৃতি। তুতেনখামেনের মুখোশ- মিশরের প্রত্নতাত্বিক সম্পদের মধ্যে সবচে প্রসিদ্ধ হল এই মুখোশ। ফারাওয়ের মমীর মাথা এবং কাঁধ ঢাকা ছিল এই মুখোশে। রাজা তুতের মুখচ্ছবি অঙ্কিত খাটি সোনার এই মুখোশে মূল্যবান পাথর ও রঙ্গিন কাঁচ বসানো।

সম্রাটের মুকুট দুই রক্ষক প্রানী শকুন এবং সাপ সম্রাটের মুকুটে, দেবতাদের মত করে বানান নকল দাড়ি এবং পাথর খচিত কাঁধ। Senet game সেনেত খেলার বোর্ড- হাতির দাতের তৈরী এই খেলার বোর্ড। খেলার নিয়ম জানা যায় নি। সম্ভবত দুজনে খেয়াল হত এবং পাশার মত গুটির চাল দিয়ে একজনকে আরেক জনকে বোর্ড থেকে হটিয়ে দেওয়া হত। ফারাও তুতেনখামেন খেলাধুলার প্রতি উৎসাহী ছিলেন।

The king's firelighter ফারাওয়ের সমাধিতে ধনরত্নের সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ছিল। ফারাওয়ের দিয়াশলাই। লাঠির প্রান্ত গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে ধনুকের সাহায্যে জোরে ঘোরানো হত। প্রচন্ড বেগে ঘষা খেয়ে আগুন জলে উঠত। ফারাওয়ের সমাধিতে প্রাপ্ত সামগ্রীর প্রদর্শনী হয়েছে অনেক দেশে।

লন্ডনের বৃটিশ মিউজিয়াম যে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল সেখানে একটা টিকিটের জন্য ৮ ঘন্টা পর্যন্ত লাইনে থকেছে লোকজন। তুতেনখামেনের অভিশাপ? ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি ঢোকার ৫ সপ্তাহের মাথায় মারা যান লর্ড কারনারভন, তার মৃত্যুর সময় কায়রোর সমস্ত আলো নিভে যায়, ঐ একই সময় ইংল্যান্ডে তার কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে মারা যায়। লর্ড মিশরে আসার আগে আলোচনা করেছিলেন কাউন্ট হুমনের সাথে। কাউন্ট হুমন লর্ড কার্নারভনকে নিষেধ করেছিলেন তুতেনখামেনের সমাধিতে না ঢুকতে। ঢুকলে ভয়ঙ্কর পরিনতির সম্মূখীন হতে হবে লর্ডকে।

কার্টার একটি ক্যানারী পাখি পুষতেন। তিনি বাসায় ঢোকার সময় এক অদ্ভুৎ শব্দ শুনতে পান এসে দেখেন তার পাখির খাচায় এক গোখরো সাপ এবং তার পাখিটি মরে পড়ে আছে। প্রাচীন মিশরে ছবির সাহায্যে লেখার যে প্রচলন ছিল তাকে বলে হিয়ারোগ্লিফিক্স(hieroglyphics)। তুতেনখামেনের সমাধিতে প্রবেশ নিষেধ করে কোন সতর্কবানী না থাকলেও অনেক ফারাওয়ের সমাধিতে প্রবেশ নিষেধ করে সতর্কবানী লেখা থাকত । যারা এই সমাধিতে প্রবেশ করবে তাদের উপর মমীর অভিশাপ পড়বে, তাদেরকে ভয়ঙ্কর পরিনতি ভোগ করতে হবে।

লর্ড কার্নারভন মারা যান তার মুখে মশার কামড়ের স্থান দাড়ি কাটার সময় সংক্রমিত হয়ে । ঠিক একই স্থানে ফারাও তুতেনখামেনের মুখের উপর পাওয়া যায় একটা তিল চিহ্ন। অনেকে এ সমস্ত ঘটনাকে মমীর অভিশাপ বলে বিশ্বাস করে থাকেন। তবে কার্টার কিন্তু মারা যান আরো দশ বছর পর পরিনত বয়সে। অনেকে বিশ্বাস করেন মমীর অভিশাপে আবার অনেকে একে কা্কতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.